*****

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: জনৈকা রোগিনী জন্মগত বিরল হৃদরোগ নিয়ে জন্মান। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যা ট্রেট্রালোজি অফ ফ্যালট নামে পরিচিত। ব্যারাকপুরের এই তরুণী এক অতি সাধারণ পরিবারের কন্যা ও গৃহবধূ। একটি ছোট শিশু সন্তানও আছে তার। এই রোগে ফুসফুসে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহিত হয় না। বেশ কয়েকবছর আগে তার ইন্ট্রাকার্ডিয়াক রিপেয়ার ও বিল্যাটারাল গ্লেনশান্টঅস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু এপিকার্ডিয়াল পেসিং লিড ব্যর্থ হয়। ফলে প্রচলিত ট্রান্সভেনাস পেসমেকার স্থাপন করা সম্ভব হয় না।
২০২৪ সালে তার পেসমেকার টি সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়। তাই কোনো প্রচলিত অস্ত্রোপচার সম্ভব ছিল না। একমাত্র বিকল্প লিডলেস পেসমেকার প্রতিস্থাপন। কিন্তু একদিকে যেমন এই পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল তেমন কঠিন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে এরকম অস্ত্রোপচার বিরল ঘটনা। কিন্তু কলকাতার মেডিকা হাসপাতাল এই কঠিন কাজটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে। এই অস্ত্রোপচার ছাড়া রোগিনীর বাঁচার কোনো উপায় নেই। এই অসম্ভব কাজটি সফল হিসেবে প্রমাণ করেছেন মেডিকা হাসপাতালের দক্ষ শল্য চিকিৎসক দিলীপ কুমার ও তাঁর সহযোগী চিকিৎসকেরা।
এক সাংবাদিক সন্মেলনে ডা: দিলীপকুমার রোগিনী ও তাঁর অভিভাবকের সামনে বলেন, এমন অস্ত্রোপচারের নজির আগে ছিল না। এখন এই সাফল্যে বিশ্বের এমন রোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য যা আশা যোগাবে তেমন বিশ্বের চিকিৎসকসমাজ উৎসাহিত হবেন। এই মুহূর্তে সেই সফল অস্ত্রোপচারের বিষয়টি এক মার্কিন জার্নালে প্রকাশের চেষ্টা চলছে। রোগিনীর পরিবারের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় ছিল আর্থিক অসঙ্গতি। তাই হাসপাতালের তরফে মণিপাল ফাউন্ডেশন লায়ন্স ক্লাব ও পেস মেকার নির্মাণ সংস্থা এবং বহু মানবিক সংস্থার আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করে। মেডিকা বিনামূল্যে অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব নেয়। কেননা শুধু একজন শিশুর মাকে জীবনদান নয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অপরিসীম সাফল্য নির্ভর করছিল।
মণিপাল হাসপাতালের পূর্বাঞ্চল বিভাগের প্রধান পরিচালক ডা: অয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন, পূর্বাঞ্চলে উন্নত প্রযুক্তি ও চিকিৎসা পরিষেবায় পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারে আমরা কাজ করি। মণিপাল ফাউন্ডেশন ও সমাজের শুভানুধ্যায়ীদের সহয়তায় আমরা আগামীদিনে এমন বহু বিরল রোগের আক্রান্ত রোগীদের জীবন ফিরিয়ে দেবো। মণিপাল হাসপাতাল সি এস আরের সিনিয়র ডিরেক্টর ডা: বসুধা শেঠি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আর্থিক অসঙ্গতি চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে না। আমাদের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে সি এস আর প্রকল্প কীভাবে জীবন বাঁচাতে পারে। দাতাদের উদারতা আর আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এই তরুণী মায়ের জীবন ফিরে এসেছে।
রোগিনী ও তার অভিভাবক বলেন,জন্মের পর থেকেই এই রোগের আক্রান্ত হয়ে আমরা দিশাহারা হয়ে পড়েছিলাম।এর আগে দুদুবারে অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু অসুখের জটিলতায় সেই চিকিৎসা স্থায়ী হয় না। এরপর যখন জটিলতা বাড়ে। মেডিকায় চলতি বছরের ৩ মার্চ ভর্তি হতে হয়। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সফল অস্ত্রোপচারের পর বাড়ি ফেরা। আজ ভগবানস্বরূপ ডাক্তারবাবু দের হাতযশ আমাদের নতুন জীবন দিয়েছে। ছোট্ট এক শিশু তার মাকে ফিরে পেয়েছে।রোগিনীর এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে।তবে ভবিষ্যতে এই পেস মেকারের ব্যাটারি ফুরিয়ে গেলে ১০/১২ বছরের পর ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হবে। কলকাতার হাসপাতালের এই সাফল্য দুনিয়ায় এক নতুন যুগের সূচনা করল।