সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : শিরোনাম দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠতে পারে? ব্যাটা বলে কি,? দুদিনের বৈরাগী ভাতকে বলে প্রসাদ? ঠিকই তো, ইতিহাস খুঁড়ে পাওয়া সত্য তথ্য প্রকাশ করলে ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগে বই কি? তাঁদের অনুরোধ ধর্মীয় গ্রন্থে নাকি বলা আছে , সংযম মনুষ্যত্বের বড় অলঙ্কার। বৃহদারণ্যক উপনিষদে ৫.২.৩ শ্লোকে বলা হয়েছে একজন ভাল, উন্নত ব্যক্তির তিনটি বৈশিষ্ট্য,_ আত্ম সংযম, সমবেদনা ও সমস্ত সংবেদনশীল জীবনের প্রতি ভালোবাসা । যাইহোক প্রসঙ্গে আসি। হিন্দু ধর্মে গুরুর স্থান ঈশ্বরের সমান। অর্থাৎ যতই ৩৩ কোটি ঈশ্বরের উপাসনা করুন জীবনে ঈশ্বরের হয়ে আপনাকে পথ দেখাবেন একজন রক্ত মাংসের গুরু।২০২৪ এ গুরু পূর্ণিমা তিথি পড়েছে ২০ জুলাই শনিবার বিকেল ৫ টা ৫৯ মিনিট থেকে তিথি সম্পুর্ণ হবে পরের দিন ২১ জুলাই বিকেল ৩ টে ৪৬ মিনিটে।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন , গুরু পরম্পরায় যে গুরু আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করেছেন, তিনিই সদগুরু। শিষ্যের অন্যায় অপরাধ সব নিজের ওপর নেন। বিবেকানন্দের কথা মত রামকৃষ্ণের যে গলায় ক্যান্সার হয় তার কারণ নাকি শিষ্যদের সব অপরাধের বকলমা নিয়েছিলেন তিনি। তার ফলেই মহারোগ । রাম চরিত মানস গ্রন্থে তুলসীদাস লিখেছেন, গুরু বিন ভাবনিধি তরই না কোই। অর্থাৎ গুরুর দাক্ষিণ্য ছাড়া বিশ্ব মহাসাগরে আত্মার মুক্তি সম্ভব নয়। মহাত্মা গান্ধী তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু শ্রীমদ রাজচন্দ্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উৎসবটিকে বহুল প্রচলিত করেন।হিন্দু মতে বলা হয়, শৈব তন্ত্রে এই তিথিতে শিব দক্ষিণা মূর্তি ধারণ করে ব্রহ্মার চার মানসপুত্রকে বেদের পরম গুহ্য জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। মজার কথা, বেদে কিন্তু শিবের কোনো উল্লেখ নেই। দেবতা হিসেবে। অনেকে তাই বেদের রুদ্র দেবতাকে শিব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে বেদে শিবের অস্তিত্বহীনতা শুধু নয়, শিব নিন্দার কথাও অস্বীকার করার প্রচেষ্টা করেন। ঋগবেদে শিবকে রুদ্র হিসেবে পরিবর্তিত করে মেনে নেওয়া হয়েছে না হলে আর্য শক্তির পক্ষে অনার্য ভূমি গ্রাস করা সম্ভব ছিল না। শিবকে যে আর্য সমাজ সূর্য তথা বিষ্ণুর পাশে স্থান দিতে খুব একটা রাজি ছিল না তার প্রমাণ আছে বেদ রচনার পরবর্তী সময়েরভাগবত পুরাণে। সেখানে শিবকে তমোগুণের আধার, উন্মাদ, ও উন্মাদদের প্রিয় শ্মশানচারী, বাঁদরের মত চোখ, কাজকর্মহীন, দিগম্বর, জটাধারী, চিতাভস্মে স্নানকারী, মুন্ডুমালা ধারণকারী ও অমঙ্গলকারী ইত্যাদি বলে ধিক্কার জানানো হয়েছে।( অলৌকিক নয়, লৌকিক, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১৬)।আবার ফিরে আসি প্রসঙ্গে।
মহাত্মা গান্ধীর আধ্যাত্মিক শ্রীমদ রাজচন্দ্র।
গুরু শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কি প্রথমে বোঝা দরকার। গৃ ধাতুর সঙ্গে কু প্রত্যয় যোগ করলে গুরু শব্দ নিষ্পন্ন হয়। যিনি শিষ্যের কাছে ধর্ম ও আত্মতত্ত্ব বলেন তিনিই গুরু। গু শব্দের অর্থ অঞ্জন, অন্ধকার, মায়া। রু শব্দের অর্থ জ্ঞান, তেজ ব্রহ্মাজ্ঞ। বিশ্বসার তন্ত্র বলছে, শিষ্যের বিত্ত হরণকারী গুরু অনেক। কিন্ জ্ঞানদায়ী সন্তাপহারী গুরু দুর্লভ। শিষ্য শব্দের উৎপত্তি শ্বাস ধাতুর সঙ্গেকাপ প্রত্যয় যোগে। অর্থ যিনি শাসনে থাকেন। বলতে গেলে প্রতিটপ্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষকে বশীভূত ক রাখার চল শুরু হয় ব্যক্তি সম্পত্তি ধারণা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। মূল তত্ত্ব হাজির করা হয়েছে পিতামাতা সন্তানের ভোগদেহ তৈরি করে। গুরু করেন মোক্ষদেহ নির্মাণ। সংস্কৃত গুরু শব্দটি ল্যাটিন গ্রাভিস ও গ্রী বারুস এই তিন শব্দ প্রোটো – ইন্দো- ইউরোপীয় মূল gw era থেকে তৈরি। অদ্বয়তারক উপনিষদ শ্লোক ১৬; তে বলা হয়েছে, অন্ধকার যিনি দূর করেন তিনি গুরু।
বৌদ্ধ মতে চার গুরুর উল্লেখ আছে।
এই নিবন্ধের শিরোনাম লক্ষ্য করুন। বৌদ্ধ সংস্কৃতি থেকে গুরু পূজা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ভাষাটা বোধহয় একটু কড়া হয়ে গেল। রে রে করে তেড়ে আসবেন পাঠকদের একাংশ।তিনি চুরি শব্দটা প্রয়োগ না করে আত্মসাৎ শব্দটি অনেশোভন নয়কি,? বৌদ্ধ মতে চার গুরুর কথা বলা
আছে। যিনি বংশের ধারক তিনি গ্যঞ্জাক গিয়ুপ লামা, বুদ্ধদেবের কথা যিনি প্রচার করেন তিনি গয়ালওয়া কাযিলামা, যিনি প্রতীকী শিক্ষক তিনি নাং ওয়াদা ইয়ি লামা ও যিনি পরম শিক্ষক তিনি রিগপা ডন গাই লামা। আবার জৈন ধর্মে তপস্বী ও আধ্যাত্মিক পথের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের গুরুজ্ঞানে দেখা হয়। শিখ ধর্মে গুরু হলেন সমস্ত জ্ঞানের উৎস যা সর্বশক্তিমান। শিখ ধর্মে গুরু ধারণাটি দুটি অনুশাসনের ওপর দাঁড়িয়ে। মিরি ও পিরি। মিরি অর্থ সাময়িক কর্তৃত্ব। পিরি অর্থ আধ্যাত্মিক কর্তৃত্ব। প্রধান ধর্মগ্রন্থটিকে বলা হয় গুরু গ্রন্থ সাহিব।(চলবে)
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল ১৯ জুলাই