রাজ্যে কার হাতে পদ্ম চাষ? সম্ভবত জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বা দেবশ্রী চৌধুরি?

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে থেকে বিজেপির একমাত্র দুই প্রতিমন্ত্রী

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: মন্ত্রী হলেন সুকান্ত মজুমদার।কিন্তু হাফ মন্ত্রী। একই পদ মতুয়া নেতা শান্তুনু ঠাকুরের। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এরাজ্যে যেটুকু সম্মান বজায় রাখতে পেরেছে উত্তরবঙ্গে।পাশাপাশি বিরোধীদের সি এ এ নিয়ে অভিযোগকে চুপসে দিয়েছেন বনগাঁ কেন্দ্রের প্রার্থী মতুয়া নেতা শান্তনু ঠাকুর। ফলে স্বান্তনা পুরষ্কার দুজনকে দিতে কার্পণ্য করেনি দিল্লির বিজেপি নেতৃত্ব। প্রশ্ন উঠছে, সুকান্ত যদি মন্ত্রী হন রাজ্য সভাপতি কে হবেন? যদিও জুন মাসের শেষেই দলের নিয়ম অনুযায়ী তিন বছরের রাজ্য সভাপতির কার্যকাল শেষ হচ্ছে। যদি মন্ত্রী না হতেন সুকান্ত , সেক্ষেত্রে দল আরও তিন বছরের জন্য তাঁর কার্যকাল বাড়াতে পারত। কিম্বা নতুন মুখ নিয়ে আসতে পারত। আবার মন্ত্রী হয়েও রাজ্য সভাপতি পদ সামলেছেন এমন নজির বিজেপিতে আছে। আসাম বিজেপির রাজ্য সভাপতির থাকাকালীন সর্বানন্দ সনোয়াল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রায় বছর দুয়েক তিনি দুটি পদই সামলেছেন। বাংলাতেও প্রয়াত তপন শিকদার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরও ছ মাস রাজ্য সভাপতি পদে ছিলেন।

দিলীপ ঘোষকে পছন্দ করেন না রাজ্য বিজেপির এক বড় গোষ্ঠী। দিল্লিরও পছন্দ নয় বিদ্রোহী মনোভাব।

এবার বাংলায় অন্য পরিস্থিতি । উত্তরবঙ্গে আর এস এসে দীক্ষা নিয়ে শিক্ষা জগতে পেশাগত কাজের সঙ্গে রাজনীতি।২০২১ এ বিধানসভার নির্বাচনের পর দিলীপ ঘোষের কার্যকাল উত্তীর্ণ হওয়ায় ২১ সেপ্টেম্বর সভাপতি পদে সুকান্ত মজুমদারকে নিয়ে আসা হয়। পরপর দুবার লোকসভা নির্বাচনে বালুরঘাট কেন্দ্রে জিতলেও দলের সাফল্যের কোনো নম্বর তাঁর ঝুলিতে নেই। বরং রণং দেহি মূর্তিতে বিজেপি কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারী দিল্লির নজরে পড়েছেন। তাই কথা উঠেছে এবার রাজ্য সভাপতি পদে শুভেন্দু হচ্ছেন রেসের ঘোড়া। কিন্তু রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে সামনে বিধানসভার নির্বাচনের প্রেক্ষিতে শুভেন্দু কে সভাপতি করলে দলে গোষ্ঠী কোন্দল বাড়বে বই কমবে না। কেননা একদল চাইছেন বিজেপির সাফল্যের আসলি কারিগর দিলীপ ঘোষকে ফেরানো হোক। সুকান্ত মজুমদার আসার পর দিলীপ অনুগামীরা অন্তরালে চলে যেতে বাধ্য হন। যেমন সায়ন্তন বসু রাজু বন্দোপাধ্যায়, রীতেশ তেওয়ারি প্রমুখ। এঁরা শুধু এবার দিলীপ ঘোষের কেন্দ্রে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেন। এছাড়া আর এস এসের এক বড় অংশের সমর্থন রয়েছে দিলীপ ঘোষের প্রতি। দিলীপ বাবুর নিজেরও মন্ত্রীত্বের প্রতি লোভ নেই। সারাজীবন আর এস এসের সংগঠন পরিচালনা করে তিনি এই দায়িত্বেই বেশি স্বচ্ছন্দ। তাঁর আমলেই বিজেপি ১৮ টি লোকসভা আসন ছিনিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে দূর্বল সংগঠন সত্ত্বেও। কিন্তু দলের বর্তমান প্রভাবশালী গোষ্ঠী দিলীপ ঘোষের প্রত্যাবর্তন চান না।

রাজ্য সভাপতি পদে শুভেন্দু অধিকারী তাঁর পছন্দের প্রার্থী জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করলেও শিলমোহর না পড়ার সম্ভাবনা বেশি।

কেন্দ্রীয় দলের কাছে তাই ভাবী সভাপতি পদের জন্য অনেকগুলি নাম আছে। লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পল ও দেবশ্রী চৌধুরী। এবারের নির্বাচনে এঁরা পরাজিত। বাংলায় কোনো দলেই আজ পর্যন্ত মহিলা সভানেত্রী হয়নি ।সে হিসেবে আর এস এস ঘনিষ্ঠ দেবশ্রী চৌধুরী হতে পারেন সম্ভাব্য মুখ। তবে প্রশ্ন অনেক আছে। রাজ্যে ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট যেদিকে থাকবে সে দিকেই আসন সংখ্যা নিশ্চিত থাকবে। বিজেপি এটা দেরিতে বুঝেছে। হিন্দু ভোটের সমীকরণে তাই দলিত ও আদিবাসী ভোট বিভাজন চাইছে। অনেকটা সাফল্যও মিলেছে। পুরুলিয়ায় কুর্মি সম্প্রদায় নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করালেও সেই প্রার্থীকে কুর্মিরা সমর্থন দেননি। জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোকে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বেছে নিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মন্ত্রীত্বের তালিকায় শুভেন্দু অধিকারী মনোজ টিগ্গার নাম পাঠালেও তা গৃহীত হয়নি। সভাপতি পদে শুভেন্দু অধিকারী জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম পাঠিয়েছেন। কিন্তু দল অনুমোদন দেবে বলে মনে হয় না। সংবাদ সূত্রের এমনটাই খবর। সেক্ষেত্রে দিগদর্শন মনে করে বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি পদে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে বলি হওয়া প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরি বা পুরুলিয়ার মত পিছিয়ে থাকা কেন্দ্রের সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোকেই দল রাজ্য সভাপতি করতে চলেছে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও দলের সভানেত্রী হিসেবে জে পি নাড্ডার পরিবর্ত মুখ যদি স্মৃতি ইরানি হন অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলের রসায়ন মিলিয়ে চলার ক্ষেত্রে এর চেয়ে ভালো প্রার্থী আর কে আছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *