দিলীপ ঘোষ বিজেপির গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের শিকার? মেদিনীপুর পেলেন না, বর্ধমানে যাচ্ছেন কাল সকালে

দিগদর্শন নিউজ ডেস্ক: বিজেপির গোষ্ঠী দ্বন্ধে দিলীপ ঘোষের প্রার্থীপদ আটকে ছিল এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁর হাতে গড়া মেদিনীপুরে দেওয়া হলো অগ্নিমিত্রা পলকে। দিলীপ ঘোষকে ঠেলে দেওয়া হল বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রে। গত লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে ৭ টি বিধানসভার মধ্যে ৫ টিতে এগিয়ে জিতেছিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ । কিন্তু সুকান্ত মজুমদার নতুন রাজ্য সভাপতি হয়ে আসা আর শুভেন্দু অধিকারীর দিল্লিতে গুরুত্ব পাওয়ার পর থেকে দলে ব্রাত্য হয়েছেন দিলীপ ঘোষ। সেই গোষ্ঠী দ্বন্ধে এবার দিলীপ ঘোষের পছন্দের কেন্দ্র মেদিনীপুর হয়ত হাতছাড়া হতে পারে। বিজেপি সূত্রের খবর, শুভেন্দু অধিকারী মেদিনীপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক ভারতী ঘোষকে। কিন্তু বিজেপি কি অন্য কিছু ভাবছে?

বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঠিক করে কে কোথায় প্রার্থী হবেন। আমাকে বালুরঘাট দিয়েছে। বদলালে আমাকে মেনে নিতে হবে।এখনই এই নিয়ে কথার কিছু নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রথম দফায় বালুরঘাট কেন্দ্রে সুকান্ত মজুমদারকে যদি মনোনয়ন দিয়ে থাকে তাহলে সেই তালিকায় গতবারের মেদিনীপুর কেন্দ্রে দিলীপ ঘোষের মনোনয়ন দেয়নি কেন? ২০২১ সালে বিজেপি হিরণ চ্যাটার্জি মাত্র একটি বিধানসভা খড়গপুর থেকে যেতেন।

দিলীপ ঘোষকে যাঁরা প্রার্থী চাইছেন তাঁদের অধিকাংশ আর এস এস সংগঠনের। উল্টোদিকে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তৃণমূল দল থেকে যাঁরা নব্য বিজেপি হয়েছেন তাঁরা চাইছেন তাঁদের লবির প্রার্থী। সেই তালিকায় নাম ভারতী ঘোষের। আরেক দল যাঁদের বলা যায় জল মাপা গোষ্ঠী তাঁরা দিল্লির মনোভাব বুঝতে চাইছেন। হাওয়া বুঝে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে জল মাপা গোষ্ঠীও মূলত পুরানো বিজেপি। তাঁরা দিলীপ ঘোষকেই চাইছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর মিষ্টি মধুসম্পর্ না থাকলেও তিনি ও তাঁর গোষ্ঠী চান কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে।সেক্ষেত্রে মেদিনীপুর কেন্দ্রের বদলে দিলীপ ঘোষ অন্য কোনো কেন্দ্র পান সেটাই চাইছিলেন।

     অন্যকেন্দ্রে দিলীপ ঘোষের জিতে আসা চ্যালেঞ্জিং। দিলীপ ঘোষ নিজেও সেটা ভালো বোঝেন।২০১৯ সালে তৃণমুলের মানস ভূঁইয়াকে তিনি হারান ৮৯ হাজার ভোটে। সেবারই দিলীপ ঘোষের ছিল প্রথম লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ। এর আগে ২০১৬ সালে খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি কিংবদন্তি কংগ্রেস প্রার্থী জ্ঞান সিং সোহন পালকে হারান।বির্সফবিজেপির বাংলায় উত্থানের নায়ক কিন্তু দিলীপ ঘোষ। তাঁর নেতৃত্বেই বিজেপি ১৮ টি আসন লাভ করে। সেদিক থেকে এবারের নির্বাচন সুকান্ত মজুমদারের অগ্নি পরীক্ষা। সুকান্ত মনোনীত প্রার্থীরা যে স্যাবোটেজের শিকার হবেন না কে বলতে পারে। অমিত শাহ ৩৫ টি আসনে জেতার দাবি করলেও প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ৪২ টি আসনেই জয়ের কথা বলছেন।

কিন্তু ঠোঁট আর চায়ের কাপের দূরত্ব মাপার কাজটা শুভেন্দু আর দিলীপের চেয়ে কে ভালো বোঝেন। বিজেপি ভালো ফল করলে শুভেন্দু দিল্লিতে আরও গুরুত্ব পাবেন। কিন্তু প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় হারলে ঠোকর খাবেন। আবার বিজেপি গতবারের চেয়ে ভালো ফল করলে কিম্বা গতবারের ফল ধরে রাখলে সুকান্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সার্টিফিকেট পাবেন। এবার কিন্তু বাম ভোট রামে যাওয়ার সম্ভাবনা কম । যাদবপুর কেন্দ্রে লাল পতাকা উড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বামের ভোট বাড়া মানে বিজেপির কমা। লাভের গুড় তৃনমূলের।ইতিমধ্যেই দলের তরফ থেকে নাম ঘোষণার গড়িমসি হলেও মেদিনীপুরের বহু অঞ্চলে দিলীপ ঘোষের সমর্থনে দেয়াল লেখা শুরু হয়ে গেছে। দিলীপ ঘোষ মুখে ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না বললেও কর্মীদের তাঁর নাম মুছে ফেলতে বলেননি। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেছেন, এমন ঘটনা তাঁর নজরে আসেনি। এখন দেখার মেদিনীপুর আসন আর এস এসের প্রতিপত্তিতে দিলীপ ঘোষ পান, নাকি তাঁকে বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রার্থী করা হবে। তবে এই প্রতিবেদকের অনুমান ছিল লবি পলিটিক্সে শুভেন্দু অধিকারী বেশি গুরুত্ব পাবেন। সেটাই হলো। তবে প্রার্থী হলেন অগ্নিমিত্রা পল।দিল্লি মেদিনীপুরে শুভেন্দু অধিকারীর প্রার্থীকে টিকিট দিয়ে এই সঙ্কেত দিল দিলীপের চেয়ে শুভেন্দু তাঁদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।r তবে মেদিনীপুরে নির্বাচনের আগে আর এস এস সংগঠন যদি বসে যায়, বিজেপির কোনো সংগঠন নেই জেতাতে পারে। সেক্ষেত্রে অগ্নিমিত্রা পলের জিতে আসা কঠিন।অন্যদিকে দিলীপ ঘোষ বলেছেনঃ ইচ্ছে ছিল মেদিনীপুর। কেননা বছর ধরে কাজ করেছি। তবে দলের অনুগত সৈনিক আমি। মেদিনীপুরের তৈরি জমি পাবে অগ্নিমিত্রা। আমার বাংলা চষা আছে বর্ধমানেও যোগ্যতার প্রমাণ দেব। কিন্তু ফলাফল কি দুজনের জন্য শুভ হবে? সংশয় আছে কিন্তু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *