বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গনে হাতে কলমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োজনীয়তা বোঝাচ্ছেন ধৃতি চ্যাটার্জি

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: সুধীন দাশগুপ্তের কথায় ও সুরে মান্না দে গেয়েছিলেন, চার দেয়ালের মধ্যে নানান দৃশ্যকে সাজিয়ে নিয়ে দেখি বাহির বিশ্বকে,,,,। হিন্দু পুরাণের কাহিনী অনুসারে শিব তাঁর ত্রিনয়ন দিয়ে উপলব্ধি করতেন অপার্থিব দৃশ্য ও অনুভূতি। মহাভারতে পড়েছি হস্তিনাপুরের রাজ প্রাসাদে বসে সুদূর কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের দৃশ্য দিব্য চক্ষুতে দেখে ধারাবিবরণী দিয়েছিলেন সারথি সঞ্জয়। শ্রোতা ছিলেন জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্র। যা ছিল ত্রিমাত্রিক দৃষ্টি অনুভূতি। এসবই কল্পলোকের বিস্তৃতি।ঐতিহাসিকতার বিচারে অবশ্য সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটাতে গ্লোব তৈরির মধ্যে পৃথিবীর একটা ধারণা তৈরির প্রয়াস ঘটান জার্মানির নুরেনবার্গ শহরের ভূমিপুত্র মার্টিন বেহাইম। সময়টা ১৪৯০। সেই আদি গ্লোব ত্রিমাত্রিক গ্লোব হিসেবে আজও রক্ষিত আছে জার্মান ন্যাশনাল মিউজিয়ামে।

সময়ের বিবর্তনে মারে লেইনস্টার ১৯৪৫ সালে তাঁর লেখা একটি গল্প থিংস পাস বাই’তে বস্তুর ত্রিমাত্রিক রূপের বর্ণনা করেন। প্রিন্টিং টেকনোলজির হাত ধরে আমাদের ত্রিমাত্রিক ধারণা যেমন স্বচ্ছ হয়েছে ,তেমন ডিজিট্যাল প্রযুক্তির বিপ্লবে এখন ভার্চুয়াল দুনিয়া মুঠোয় আনতে সাহায্য করেছে। গণক যন্ত্রের সুবাদে অবাস্তব, অনুপস্থিত পরিবেশ নির্মাণকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নাম দিয়েছি। আমরা কৃতজ্ঞ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জনক জ্যারন ল্যানিয়ারের কাছে।১৯৮৭ সাল বছরটি এই প্রযুক্তির নির্মাণকাল হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়ে গেছে। বস্তুত ১৯৮২ সালেই ডেমিয়েন ব্রড্রিক তাঁর বিজ্ঞান কল্পকাহিনী দ্য জুডাস মান্ডালাতে উল্লেখ করেছিলেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কথা।দেশের নিরিখে যদি দেখি পাণ্ডবদের ইন্দ্রপ্রস্থ রাজধানীতে উঠোনকে জলাশয় ভেবেছিলেন দূর্যোধন চোখের ভ্রান্তিতে। সেও কি ছিল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি?

এই মুহুর্তে স্ট্যান্ডার্ড ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সিস্টেমগুলি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেড সেট বা মাল্টি প্রজেক্টেড এনভায়রনমেন্ট ব্যবহার করে কিছু বাস্তবসম্মত অবাস্তব ছবি, শব্দ ও অন্যান্য সংবেদনশীল দৃশ্যশ্রাব্য উপস্থাপন করা হয়। যা আজকের আধুনিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ্বের একপ্রান্তে বসে আরেক প্রান্তের বাস্তব চিত্র অনুধাবন করা সম্ভব হচ্ছে। সত্যজিৎ রায়ের বঙ্কুবাবুর বন্ধু গল্পে আমাজনের রেন ফরেস্ট থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে বাংলার গণ্ডগ্রাম কাঁকুরগাছিতে বসে জঙ্গলে পৌঁছে গিয়েছিলেন ভূগোলের মাষ্টারমশাই বঙ্কু বিহারী দত্ত। বিনোদন সাহিত্য ও সিনেমার পর্দা থেকে বেরিয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখন জীবনের রিয়েলিটি।

এটা অনুধাবন করেই বঙ্গতনয়া উদীয়মান উদ্যোগকর্ত্রী ধৃতি চ্যাটার্জি গড়ে তুলেছেন নিজের সংস্থা ডি সি ভিশন ভি আর। তিনদিনের এক বাণিজ্যিক মেলায় স্টল নং এল ১৩ তে রয়েছেন সংস্থার কর্ত্রী ধৃতি চ্যাটার্জি ১১ আগস্ট সকাল ১১টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। তাঁর এই সংস্থার শুরুর সময়টা ২০১৬। ছোট থেকেই শেখার আগ্রহ আর শৈল্পিক মনের অধিকারী ধৃতি ভবিষ্যতের দেয়াল লিখন পড়ে নেন অনায়াসে। ডিজিট্যাল দুনিয়ায় আগামী দিন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যে জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠবে বুঝতে পারেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবনের ফলে ভার্চুয়্যাল রিয়ালিটি দিয়ে স্থাপত্য, রিয়েল এস্টেট বিল্ডিং ওইন্টেরিয়র ডিজাইনার ক্ষেত্রে নির্ভুল প্রয়োগের পেশাদার পরামর্শদাতা ও প্রয়োগ বিপণনের কাজে সাফল্যের নজির রেখে চলেছেন ধৃতি চ্যাটার্জি ও তাঁর ডি সি ভিশন ভি আর সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *