শ্রীজিৎ চট্টরাজ : গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উত্তর কলকাতার গিরিশ মঞ্চে চণ্ডীতলা প্রম্পটার মঞ্চস্থ করে মুক্তিসূর্য ক্ষুদিরাম।পরবর্তী মঞ্চায়ন আগামী বাংলা নববর্ষের কিছুদিনের মধ্যে। শহীদ ক্ষুদিরামের জীবন অবলম্বনে নাটকটিতে তাঁর তিনটি বয়সী একটি কোলাজ নির্মাণ হয়েছে। নাট্যকার প্রদীপ রায়। নির্দেশনা শ্যামল সরকারের।নাট্যকার বলেন স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষে এই নাটকের নির্মাণ ছোটদের কাছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা তুলে ধরতে।১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের নাটকে তিন বয়সের ক্ষুদিরামের ভূমিকায় অভিনয় শিল্পী অর্ণব পালুই, নীলাদ্রি রায় ও সত্যম ঘোষ। সহযোগী শিল্পীদের তালিকায় আছেন আরত্রিকা চৌধুরী, অন্বেষা মুখার্জি, তমসা ঘোষ, অরূপ চৌধুরী, কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য, আদিত্য নারায়ণ ভট্টাচার্য, প্রদীপ রায়, দেবজ্যোতি রায়, সম্প্রীতা চক্রবর্তী, অয়ন রায়, সৌরিমা তপাদার, দেবাশীষ রায়, সমীর রায়, রীতম পান, রনাক মুখার্জি, রিয়ান মুখার্জি প্রমুখ । আবহ বন্দন মিশ্র নৃত্য পরিকল্পনা প্রিয়াঙ্কা ঘোষ, আলোক সম্পাতে পলাশ দাস । নাটকটিতে যুক্ত হয়েছে কিছু দেশাত্ববোধক গান। যা সুপ্রযুক্ত। বিশেষ করে ক্ষুদে অভিনেতা নিষ্ঠার সঙ্গে বিরোধী সঙ্গে অভিনয়ের মাত্রা বজায় রেখেছে।

নাটকটিতে নাট্যকার দেখিয়েছেন বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি যখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্টেট কিংসফোর্ডকে নিকেশ করার ভার দিল ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকিকে তখন দুজনেই দুজনের সঠিক পরিচয় জানত না। কারণ কোনো একজন ধরা পড়লে ব্রিটিশ প্রশাস যেন অন্যজনকে জেরা করে পরিচয় না পায়। ক্ষুদিরাম প্রফুল্লকে জানতেন দীনেশ চন্দ্র রায় নামে, প্রফুল্ল ক্ষুদিরামকে চিনতেন দুর্গাদাস সেন নামে। মজফ্ফরপুরে কিশোরীমোহন বন্দোপাধ্যায়ের ব্যবস্থাপনায় দুজনে ছিলেন এক ধর্মশালায়। বারীন ঘোষকে প্রফুল্ল চিঠিতে জানান , তাঁদের নিরাপদে মজফ্ফরপুর পৌঁছ সংবাদ। সেখানে বারীন ঘোষকে তিনি সম্বোধন করেন সুকুমার ওরফে সুকুদা নামে। এরপর ২৯ ও ৩০ এপ্রিল ১৯০৮ এর মুহূর্তগুলি ছিল নাটকীয় মুহূর্ত। কিন্তু এই দুদিনের ঘটনা যদি নাটকে যুক্ত হত ,তাহলে নাটকটির সময়সীমা হয়ত ১০ মিনিট বাড়ত মাত্র। কিন্তু ছোটদের কাছে এই রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলি আরও আকর্ষণীয় হত। আমরা নাটকে দেখলাম ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি আলাপের পর থেকে পরস্পরকে চেনে।

শুধু এই নাটকে নয়, উচ্চবর্ণের ইতিহাসবিদের লেখায় ক্ষুদিরামকে সর্বকনিষ্ঠ শহীদ বিপ্লবী বলার পাশাপাশি প্রথম শহীদ আখ্যা দেওয়া হয়। কিন্তু সে অর্থে আত্মবলিদান করে প্রথম শহীদের মর্যাদা প্রফুল্ল চাকির পাওনা। আবার বৃহত্তর ক্ষেত্রে ব্রিটিশের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রথম শহীদের মর্যাদা পাওয়া উচিত ছিল আদিবাসী যুবক তিলকা মাঝির। যদিও সেই ইতিহাস ব্রাত্য আজও। নাটকটিরপরবর্তী মঞ্চায় বাংলা নতুন বছরের কিছুদিনের মধ্যেই। অভিভাবকরা যদি ছোটদের নাটকটি দেখান, তাহলে দেশ সম্পর্কে ছোটদের একটা স্পষ্ট ধারণা হবে।
বিজ্ঞাপন
