বাঙালির ইতিহাস ও বহিরাগত তত্ত্ব

পর্ব: ১৫০

করোনা সময়কাল। হঠাৎ একদিন সকালে ভ্রাতৃপ্রতিম সাংবাদিক বন্ধু কুণাল ঘোষের ফোন। কুশল বিনিময়ের পর কুণাল জানালো বাড়িতে যখন বন্দী।, তখন একটা গবেষণামূলক লেখা লিখুন। আমি ই বুকে প্রকাশ করব। বিষয়টি সেই নির্বাচন করে দিল। বাংলা ও বাঙ্গালির ইতিহাস। শুনেই চমকে উঠেছিলাম। কাকে দিচ্ছ রাজার পার্ট। আমি সামান্য এক ক্ষুদ্র সাংবাদিক। এই বিশাল ব্যাপ্তির কাজে হাত দেওয়া মানে সাপের গর্তে হাত ঢোকানো। তবু অনড় কুণাল। ওঁর রাজনৈতিক মতের সঙ্গে আমার হাজার যোজন দূরের সস্পর্ক। কিন্তু কলকাতায় যখন কোনো টিভি চ্যানেলের অস্তিত্ব ছিল না তখন কলকাতা দূরদর্শনে বেসরকারি প্রযোজনায় সংবাদ ম্যাগাজিন তৈরির দুঃসাহস তো দেখিয়েছিলাম কুণালের মত তৎপর সাংবাদিককে পাশে পেয়েছিলাম বলে। বাংলার টেলিভিশন সাংবাদিকতায় যদি পত্তন করতে পারি সাফল্যের সঙ্গে, তবে এই কাজটাও পারব ।। সবচেয়ে বড় কথা,, এই লেখায় আমার কৃতিত্ব নেই। আমার কাজ তো তথ্য সংগ্রহ করে মালা গাঁথা। করোনা প্রবাহে শুরু করেছিলাম। কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখলাম বাংলার ঐতিহাসিকদের বহুলাংশই উচ্চবর্ণের মানুষ। ফলে ভূমিপূত্র বাঙ্গালির ইতিহাস, সংস্কৃতি সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই আমার তথ্য খোঁজার কাজটা হলো গোয়েন্দার সূত্র খোঁজার মত।

সেই খুঁজে পাওয়া তথ্য যদি বাঙালির কোনো কাজে লাগে সেই আশায় পর্ব অনুযায়ী পরিবেশন করতে চলেছি। শুধু প্রশংসা নয়,সমালোচনাও চাই। তবে তো নিজের ভুল বা ব্যর্থতা সংশোধন করত পারবো। বিষয়টি যেহেতু কুণাল ঘোষের অনুপ্রেরণায় তাই লেখাটি তাঁকেই উৎসর্গ করছি।

শামসুদ্দিন কায়ুমারস নিহত হন তাঁর বিদ্রোহী অনুচর জালালউদ্দিন খিলজির হাতে।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : মাত্র তিনবছর রাজত্ব করার পর পক্ষাঘাতে মারা যান মুইজুদ্দিন কায়কোরাদ। জনতার দাবিকে মান্যতা দিয়ে সুলতান হলেন মুইজুদ্দিনের পুত্র শামসুদ্দিন কায়ুমারস । কিন্তু এই শামসুদ্দিনও নিহত হন তাঁর সৈন্যদলের এক বিদ্রোহী নায়ক জালালউদ্দিন খিলজির হাতে। সময়টা ১২ ৯০। বাংলায় পুত্রহত্যার খবর আসতেই মর্মাহত বাগ বুগরা খান আরেকটি পুত্র রুকুনুদ্দিন কে দিল্লির সিংহাসনে বসান। রুকনুউদ্দিন রাজত্ব করেন মাত্র ১০ বছর।১২৯১ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ। নিজেকে তিনি সুলতান – বিন সুলতান অর্থাৎ সুলতানের পুত্র সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। রুকনুউদ্দিন তাঁর রাজত্বের সীমা একদিকে বিহার অন্যদিকে পূর্ববাংলার অনেক অঞ্চল দখল করেন।

রুকনুউদ্দিন ফিরোজ।

রুকনুউদ্দিন বাংলায় রাজত্ব সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে শাসন কণ্টকহীন করতে বিহার ও লখনৌতি (গৌড়) দুটি অঞ্চলে ভাগ করে নেন। বিহারের দায়িত্ব দেন ইখতিয়ারউদ্দিন ফিরোজ ইতসিনকে। বাংলার শাসক করেন শাহাবুদ্দিন জাফর খান বাহরাম ইতসিনকে। বাংলার শাসক হয়ে ইতগিন রাজ্যের পরিধি বাড়ান পশ্চিমবঙ্গের সপ্তগ্রাম থেকে বিহার ও দিনাজপুর ( ত্রিপুরা) পর্যন্ত। রুকনুউদ্দিন কায়ুমারসের বড় ভাই মুইজ উদ্দিন ও ভ্রাতুষ্পুত্র শামসুউদ্দিন কায়ু মারসকে হত্যা করায় দিল্লির সুলতান সালতানাতকে স্বীকার করতেন না। তাঁর কাছে সুলতান ছিলেন দখলদার।

শামসুদ্দিন ফিরোজ।

রুকনুউদ্দিনের মৃত্যুর পর বাংলার গৌড় অর্থাৎ লখনউতির ভার গ্রহণ করেন শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ। বহু ঐতিহাসিক বি শামসুউদ্দিনকে কায়ুমারস বংশের নন বলেই মনে করেন। কেননা ত্রয়োদশ শতাব্দীর দিল্লির এই বংশের রাজত্বের সভাকবি আমীর খসরু ফিরোজ সম্পর্কে কিছু বলেননি। ঐতিহাসিকদের অধিকাংশই মনে করেন গিয়াসুউদ্দিন বলবান তাঁর পুত্রের পরামর্শদাতা হিসেবে ফিরোজ নামের দুজনকে নিয়োগ করেন। তাঁদেরই একজন শামসুদ্দিন ফিরোজ। কেউ বলেন রুকনুউদ্দিনের স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তবে? (চলবে)

পরবর্তী পর্ব , আগামী রবিবার ১২ অক্টোবর,২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *