বাঙালির ইতিহাস ও বহিরাগত তত্ত্ব

পর্ব :১৪৬

করোনা সময়কাল। হঠাৎ একদিন সকালে ভ্রাতৃপ্রতিম সাংবাদিক বন্ধু কুণাল ঘোষের ফোন। কুশল বিনিময়ের পর কুণাল জানালো বাড়িতে যখন বন্দী।, তখন একটা গবেষণামূলক লেখা লিখুন। আমি ই বুকে প্রকাশ করব। বিষয়টি সেই নির্বাচন করে দিল। বাংলা ও বাঙ্গালির ইতিহাস। শুনেই চমকে উঠেছিলাম। কাকে দিচ্ছ রাজার পার্ট। আমি সামান্য এক ক্ষুদ্র সাংবাদিক। এই বিশাল ব্যাপ্তির কাজে হাত দেওয়া মানে সাপের গর্তে হাত ঢোকানো। তবু অনড় কুণাল। ওঁর রাজনৈতিক মতের সঙ্গে আমার হাজার যোজন দূরের সস্পর্ক। কিন্তু কলকাতায় যখন কোনো টিভি চ্যানেলের অস্তিত্ব ছিল না তখন কলকাতা দূরদর্শনে বেসরকারি প্রযোজনায় সংবাদ ম্যাগাজিন তৈরির দুঃসাহস তো দেখিয়েছিলাম কুণালের মত তৎপর সাংবাদিককে পাশে পেয়েছিলাম বলে। বাংলার টেলিভিশন সাংবাদিকতায় যদি পত্তন করতে পারি সাফল্যের সঙ্গে, তবে এই কাজটাও পারব ।। সবচেয়ে বড় কথা,, এই লেখায় আমার কৃতিত্ব নেই। আমার কাজ তো তথ্য সংগ্রহ করে মালা গাঁথা। করোনা প্রবাহে শুরু করেছিলাম। কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখলাম বাংলার ঐতিহাসিকদের বহুলাংশই উচ্চবর্ণের মানুষ। ফলে ভূমিপূত্র বাঙ্গালির ইতিহাস, সংস্কৃতি সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই আমার তথ্য খোঁজার কাজটা হলো গোয়েন্দার সূত্র খোঁজার মত।

সেই খুঁজে পাওয়া তথ্য যদি বাঙালির কোনো কাজে লাগে সেই আশায় পর্ব অনুযায়ী পরিবেশন করতে চলেছি। শুধু প্রশংসা নয়,সমালোচনাও চাই। তবে তো নিজের ভুল বা ব্যর্থতা সংশোধন করত পারবো। বিষয়টি যেহেতু কুণাল ঘোষের অনুপ্রেরণায় তাই লেখাটি তাঁকেই উৎসর্গ করছি।

পর্ব ১৪৬

গিয়াসউদ্দিনকে হত্যা করে খিলজি বংশ দ্বিংয়ের করে বাংলাকে সরাসরি দিল্লির অধীনে আনেন ইলতুতমিশ।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : গিয়াসউদ্দিন চাননি খুব সহজে বশ্যতা স্বীকার করতে। ইলতুতমিশ দিল্লি ফিরে যেতেই গিয়াসউদ্দিন নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। দিল্লিতে খবর পৌঁছতে দেরী হয়নি। দিল্লির সুলতান ফিরে এসে আবার গৌড় আক্রমণ করেন।যুদ্ধের গিয়াসউদ্দিন স্বপারিষদ নিহত হন। এবার গৌড় বাংলা প্রত্যক্ষ দিল্লির অধীনে গেল।অর্থাৎ তুর্কি বংশের খিলজি থেকে গৌড় বাংলা মামলুক সালতানাত বংশের হাতে পড়ল। দিল্লির সম্রাটরা পরিচিত হতেন সুলতান হিসেবে আর বাংলার শাসকরা পরিচিত হতেনশাহ নামে। এই সময় বাংলায় ছিল বিশ্বের সেরা ধনী দেশ।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ঐতিহাসিকদের অনেকে বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি দ্রাবিড় বা অ্যালপেনিয় আর্যদের কাছ থেকে পাওয়া।হিন্দির পুরাণেও বলা হয়েছে রাজা বলির পাঁচটি পুত্রের একজন বঙ্গ।বাকির পাঁচটিওর স্থাননাম। অঙ্গ, কলিঙ্গ, সুক্ষ্ম ও পুণ্ড্র। কিন্তু ইসলামিক ঐতিহাসিকদের মত, বং শব্দটি নূহ নবীপুত্র হিন্দের পুত্র , যিনি বাংলায় উপনিবেশ স্থাপন করেন।

বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার অগ্রণী নাম গোলাম হোসাইন জইদপুরী। বাংলার ইতিহাস নিয়ে ১৭৬৬ থেকে ২০ বছর ধরে রচনা করেন ফার্সি গ্রন্থ রিয়াজ উস সালাতিন। তিনি লিখেছেন, হজরত নূহ আ. পুত্র হামের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিন্দ হিন্দুস্থানে আসেন।। তাঁর নামেইএই ভারতের নাম হয় হিন্দুস্থান। হিন্দের দ্বিতীয় পুত্র বং বাংলার শাসনের ভার নেন। তাঁর নামেই বঙ্গ নাম। বাংলার ইতিহাস ,( রিয়াজ- উস সালাতীনের বঙ্গানুবাদ) আকরয়উদ্দীন অনূদিত অবসর প্রকাশন , ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা ২৪ । মুসলিম ধর্মবেত্তাদের বক্তব্য, অনেকের ধারণা, ইসলাম নতুন ধর্ম। বয়স মাত্র ১৪০০ বছর। সেই সময়ে আসেন আদি ইসলাম ধর্মের শেষ নবীর। তার আগে একলক্ষ চব্বিশ হাজার নবী এসেছেন। (চলবে)

পরবর্তী পর্ব, আগামী রবিবার ২৭ সেপ্টেম্বর ,২০২৫

*******

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *