*

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের ডেপুটি কনসাল জেনারেল কুই য়ং এখন কার্যভার সামলাচ্ছেন। রবিবার দুপুরে এক মধ্যাহ্নভোজনের অনুষ্ঠানে কলকাতার কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে পরিচিত হলেন । তালিকার অন্যতম ছিলেন শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী চিনা ভবনের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অধ্যাপক অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতার চিনা সমাজের কিছু ব্যক্তি ও দিগদর্শন নিউজ পোর্টাল ও ইউটিউব চ্যানেলের কর্ণধার সম্পাদক এবং পাক্ষিক ক্রাইম ব্রাঞ্চ পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

চিনা উপ দূতাবাসের নিযুক্ত জনসংযোগ সংস্থা লঞ্চারস এর প্রধান রাজীব লোধার সঙ্গে কলকাতার চিনা উপ দূতাবাসের জনৈক আধিকারিক
একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, পশ্চিমবাংলা কেমন লাগছে? তিনি জানান, প্রথম বার আমি বাংলা তথা কলকাতায় এসেছি।, চিন ভারত ভারতের সংগে চিনের আত্মিক বন্ধন ঐতিহাসিক সত্য। বিশেষ করে বাংলা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সব রচনা আমরা সরাসরি বাংলা থেকে অনুবাদ করছি। চিনের নতুন প্রজন্মের বহু ছেলেমেয়ে বাংলা ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে শান্তিনিকেতনে পড়তে আসছে । আমরা গর্বিত বাংলায় চিনা সংস্কৃতির প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল হয়ে রবীন্দ্রনাথ চিনা ভবন নির্মাণ করেছিলেন। বাংলার শৈল্পিক প্রতিভা , সংস্কৃতি , বিশেষ করে এখানকার দূর্গাপুজো আমাকে আকর্ষণ করেছে। দিগদর্শন সম্পাদকের প্রশ্ন ছিল , চিন ভারত মৈত্রী সম্পর্কে আপনাদের এই মুহূর্তের ভূমিকা কি? ডেপুটি কনসাল জেনারেল কুই য়ং জানালেন, চিন ও ভারতের এক ঐতিহ্যশালী সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাস আছে। বহু যুগ আগে থেকে আমরা পরস্পর মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ। আমরা শুধু কূটনৈতিক মহলে নয়, বাংলার সাধারণ জনগণের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করার বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি।

সরকারি অনুষ্ঠানের বাইরেও বিভিন্ন বেসরকারি অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থেকে ভারতীয় জনগণের উষ্ণ সান্নিধ্য পেতে উৎসাহী। পরবর্তী প্রশ্ন ছিল, কোনও কারণে এবারের লোকসভা নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হলে চিন ভারত সম্পর্কে কি কোনো নতুন সমীকরণ হতে পারে? জবাবে কুই য়ং বলেন, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশে নির্বাচন চলছে। আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। তবে ভোট জিতে যে সরকারই আসুক না কেন, আমরা মৈত্রীর পরিবেশে কাজ করতে চাই দুদেশের উন্নতির জন্য। একটি অস্বস্তিকর প্রশ্নও তাঁকে করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, অরুণাচল নিয়ে এক বিতর্ক বহুদিন ধরে চলছে। এ ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কি? মিষ্টি হেসে ডেপুটি কনসাল জেনারেল জানান, এটি সম্পূর্ণ দুই দেশের কূটনৈতিক বিষয়। এ ব্যাপারে কিছু বলার এক্তিয়ার আমার নেই। যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, দুদেশই দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মিটিয়ে নেবে। আমরা ভারত ও ভারতের জনগণ সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল।

কলকাতা চিনা উপ দূতাবাসের ডেপুটি কনসালের বাড়িতে জনৈক চিনা আধিকারিকের সঙ্গে আলাপচারিতায় দিগদর্শন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক ও পাক্ষিক পত্রিকা ক্রাইম ব্রাঞ্চের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশ্বভারতীর চিনা ভবনের প্রধান আধিকারিক অধ্যাপক অভিজিত বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ ঘটে। দিগদর্শন সম্পাদক সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানতে চান, রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার চিনে পৌঁছানোর পর বেশ কয়েকটি সভায় বক্তব্য রাখেন। ইতিমধ্যে তিনি প্রাচ্যের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পাওয়ায় চিনে তাঁকে নিয়ে কৌতূহলী মানুষের সংখ্যাও বেড়েছিল। কিন্তু তাঁর আধ্যাত্মিক ভ্রাতৃত্বের কথা শ্রোতাদের আসনে বসে থাকা চিনের বিপ্লবের পুরোধা মাও সেং তুং বা কমিউনিস্ট ছাত্রদের পছন্দ হয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে অখুশি এই অংশের মানুষদের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। এই প্রসঙ্গে আপনি কি বলবেন? জবাবে চিনা ভবনের প্রধান আধিকারিক অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় বলেন, একথা সত্যি। এমনকি চিনের সেরা কবি, সাহিত্যিক লুসুন পর্যন্ত রবি কবির বক্তব্যে সহমত ছিলেন না। তবে তাঁরা সম্ভবত রবীন্দ্রনাথকে প্রথমে বুঝতে ভুল করেছিলেন। একথা আজকের চিনা বুদ্ধিজীবীরাই বলছেন। সম্ভবত ২০১০ সালে চিন একটি ৫০ জনের তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, নতুন সাম্যবাদী চিনের প্রসারে যে কজন বিদেশির অবদান আছে, তাঁদের অন্যতম রবীন্দ্রনাথ। চিনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বুদ্ধের দর্শনের সূত্র ধরে। বহু প্রাচীন এই সম্পর্ক। আজকের চিনের দিকে তাকান , চিনের অন্যতম প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ। রবি কবির চিনা ভবন তৈরির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, চিনা সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের নিবিড় পরিচয় ঘটানো। আজ সেখানে বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে পড়ুয়ারা আসছেন রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে। রবীন্দ্রনাথকে জানতে।