চোখের চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এল কলকাতায় আদিত্য বিড়লা শঙ্কর নেত্রালয়

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে। অন্তরে আজ দেখব যখন আলোক নাহি রে।। চোখ জীব জগতের এক অমূল্য সম্পদ। মানুষ তাই চোখ নিয়ে করেছে হাজারও সাহিত্য সৃষ্টি। বিবর্তনের পথ বেয়ে যেমন আক্ষরিক শৃংখলে ভাষা তার ব্যাপ্তি খুঁজে পেয়েছে , সৃষ্টির আদি থেকে যখন ছিল না কোনো হরফ , ছিল না মুখের ভাষা , তখনও ছিল চোখের ভাষা। নাহলে কবি বলবেন কেন, তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ। যে চোখে কবি নারীর রূপে পুরুষের সর্বনাশ দেখেছিলেন সেই চোখে কিন্তু লাল বা সবুজ রঙের পার্থক্য বুঝতেন না। চলতি কথায় রবি কবি ছিলেন কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধ। যা জিনগত ত্রুটি। প্রতি ১২ জন পুরুষে ১ জন বা ২০০ জন নারীর ২ জনের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রোগটি পুরুষের বেশি হওয়ার কারণ এক্স ক্রোমোজোমের ত্রুটি। পাশাপশি অপটিক নার্ভ মস্তিষ্কের অংশে ত্রুটির জন্যও মানুষ বর্ণান্ধ হতে পারেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের অনেক ভুলের কথা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত স্বীকার করে গেলেও তিনি যে বর্ণান্ধ সেকথা উপলব্ধি করার পর একমাত্র ভাইঝি ইন্দিরাদেবীর কাছে স্বীকারোক্তি দেন।১৮৯৪ সালে এক চিঠিতে তিনি লেখেন কত রকমেরই যে রঙ চতুর্দিকে ফুটেছিল, তা আমার মত সুবিখ্যাত রঙ কানা লোকের পক্ষে বর্ণনা করা ধৃষ্টতা মাত্র। তাই বোধহয় রবি কবির বেশিরভাগ লেখায় লালকে তিনি বলেছেন রাঙা, সবুজকে বলেছেন শ্যামল। তখন চোখের চিকিৎসা ছিল না আজকের মত উন্নত। ফলে জন্মগত এই ত্রুটি নিয়েই রবীন্দ্রনাথ বেঁচেছিলেন।

আরবের চিকিৎসক ইবনে সিনা ১০২৫ সালে তাঁর লিখিত দ্য ক্যানন অফ মেডিসিন বইয়ে রেটিনা শব্দের প্রথম ব্যবহার করেন। রেটিনা শব্দটি মূল আরবি ভাষার অপভ্রংশ। আধুনিক চক্ষু চিকিৎসা জগতে জনক জার্মানির জর্জ বার্টিশ (১৫৩৬-১৬০৭) টাইম মেশিনে চেপে যদি ভবিষ্যত পরিদর্শনের সুযোগ পেতেন, দেখতেন বিশ্ব চক্ষু চিকিৎসায় আজ কতটা উন্নতি করেছে। ২০২১ এ এক সমীক্ষায় বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থা হু জানায়, ভারত সহ বিশ্বে চোখের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সংখ্যা আনুমানিক ২.২ বিলিয়ন। হু আরও জানায়, সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় হলে ও চিকিৎসা হলে এক বিলিয়ন অর্থাৎ রোগীদের প্রায় ৫০ শতাংশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা জয় করতে পারেন। চিকিৎসা জগতে জিন থেরাপির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। সেই মুহুর্তে মুশকিল আসানে এসেছে ইলেকট্রো ফিজিওলজি মেশিন। বিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায় ডায়াগন্সিস এসপিয়ন হার্ডওয়্যার এবং ই সিক্স সফটওয়্যার সংস্করণ ভি সিক্স পয়েন্ট সিক্সটি ফোর পয়েন্ট নাইন। এই যন্ত্রে বিভিন্ন ধরণের জেনেটিক চক্ষু সংক্রান্ত অসুস্থতা, স্নায়বিক দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ও ওষুধের বিষাক্ততা সনাক্ত করার প্রায় ৫৫ রকমেরপরীক্ষা করা যায়। সারা ভারতে এমন ছ’টি যন্ত্র আছে, যার মধ্যে পূর্বাঞ্চলে মাত্র একটি। যেটি মুকুন্দপুর আদিত্য বিড়লা শঙ্কর নেত্রালয়ে উপলব্ধ।

ইতিমধ্যেই এই যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শনিবার ও রবিবার সারা ভারতের বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসকদের নিয়ে এক সেমিনারে এই যন্ত্রের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তুলে ধরা হবে। এই উপলক্ষে শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে হাসপাতালের ডেপুটি মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা: রূপক রায় ভি আর বিভাগ ( রেটিনা) জানান, এই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি কলকাতায় এনে একমাত্র আমরা পথ প্রদর্শকের ভূমিকা নিলাম । এই পরিষেবা পেতে রোগীদের আর ভিন রাজ্যে ছুটে যেতে হবে না। ভি আর রেটিনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা: এশা নিগম বলেন, এই সর্বাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে রোগ নির্ণয়, গবেষণা শুধু নয়, চিকিৎসায় সহজলভ্যতা ও গুণগত মানে আমরা গর্বিত। শঙ্কর নেত্রালয়ে মেশিনটি জনস্বার্থে দান করেছে এসেল মাইনিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে হাসপাতালের তরফে উপস্থিত ছিলেন ডা: দেবমাল্য দাস, ডা: সুচেতনা মুখার্জি প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *