বেশ্যার বারমাস্যা

পর্ব : ১৩০

মধ্যযুগের গণিকা

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: সে যুগেও সমাজবেত্তারা ছিলেন তোলা তোলার মানুষ। গণিকারা বিয়েটের সামান্য টাকা পেলেও প্রকাশ্যে বলতে হতো বেশি টাকা লেগেছে। কখনও কখনও গণিকাদের নির্দেশ দেওয়া হতো কোনো ধনী যুবককে যুক্ত করে এককথায় হানি ট্র্যাপে ফেলে অর্থ দাবির । সামাজিক বিধান ছিল কোন ব্যক্তি কোন গণিকার প্রতি আসক্ত হলে গণিকার মাকে লক্ষ্য রাখতে হতো ,যেন তার জন্য সেই যুবকের প্রতি একনিষ্ঠ থাকে। অর্থাৎ গণিকাদের স্বাধীন জীবন ছিল না। কোনও গ্রাহক গণিকাকে সম্ভোগের জন্য যে অর্থ দান করত এবং উপহার দিত, সব জমা করার ভারত ছিল গণিকার মায়ের। ক্রমশ সেই গ্রাহককে আসক্ত করার কৌশল অবলম্বন করত গণিকার মা।

মধ্যযুগে গ্রাহককে তৃপ্ত করার কঠিন কৌশল শিখতে হতো গণিকাদের।

গণিকারপ্রতি আসক্ত কোনো গ্রাহক যদি বিনিময় অর্থ দিতে কার্পণ্য করত, ছলে বলে সেই গ্রাহকের সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করার ভারও ছিল মায়ের। গণিকাদের কঠোর নির্দেশ ছিল, কোনো গ্রাহকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে পারবে না। বাৎস্যায়নের কামশাস্ত্রের নিদান ছিল, প্রত্যেকে গণিকাকে ৬৪ কলার পারদর্শী হতে হবে। এই কলাগুলি হ’ল _ গীত, বাদ্য, নৃত্য ,আলেখ্য, চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা আঁকা, ফুলের মালা গাঁথা, পুষ্প চয়ন, দাঁতে রং করা, কাপড় রং করা, অঙ্গমার্জন, মেঝেতে লতাপাতা আঁকা, শয়ন রচনা, উদক বাদ্য অর্থাৎ জলতরঙ্গ বাদ্য যন্ত্র বাজানোতে সুনিপুণ হওয়া, জলকেলি, নানা উপায়ে গ্রাহককে আসক্ত করা, পাগড়ি টুপি বানানো , বস্ত্র ও ফুল দিয়ে অঙ্গ সজ্জিত করা, শব্দ প্রহেলিকা অর্থাৎ ধাঁধা জানা , বেতের বাসন বানানো, ছুতোর কাজ, বাস্তুবিদ্যা, পাশা খেলা, ছিন্ন বস্ত্র কৌশল করে পরা যাতে বোঝা না যায়, হাতি ঘোড়া প্রশিক্ষণ, ব্যায়াম ইত্যাদি সব কঠিন কাজে দক্ষ হওয়া।

কামশাস্ত্রের ৬৪ কলা শিখতে হতো গণিকাদের।

যৌনতার বিষয়ক ৬৪ কলাতেও দক্ষ হতে হতো। এরমধ্যে আছে , আলিঙ্গন, চুম্বন, নখ দিয়ে আঁচড়ানো,দাঁত দিয়ে আঁচড়ানো, গ্রাহককে সম্মোহন করে ঘুম পাড়ানো, সঙ্গমের সময় এমন চিৎকার করা যাতে গ্রাহক খুশি হয় , সঙ্গম কৌশলে গ্রাহকের ইচ্ছাপূরণ, মৌখিক যৌনতায় গ্রাহককে চরম সুখ দেওয়া। এইগুলি আবশ্যিক। আলিঙ্গনে রয়েছে প্রকারভেদ। স্পৃষ্টক। অর্থাৎ পরস্পরকে স্পর্শ করা, বিদ্ধক।অর্থাৎ গ্রাহককে বুকে জড়িয়ে স্তনের উষ্ণতা দেওয়া, উদঘৃষ্টক অর্থাৎ ভিড়ের মধ্যে অন্যের নজর এড়িয়ে গ্রাহকের অঙ্গে নিজের অঙ্গ ঘর্ষণ করা। ( চলবে)

পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার ১৮ জুলাই,২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *