পতঞ্জলির পণ্য নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারের অভিযোগ মেনে শীর্ষ আদালতে ক্ষমা চাইলেন রামদেব সহযোগী বালকৃষ্ণ

পর্ব: ১

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : রামদেব বাবার পতঞ্জলি সংস্থার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনে এ্যালোপ্যাথি ওষুধের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় শীর্ষ আদালত আগামী ২ এপ্রিল সশরীরে আদালতের শুনানিতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার পতঞ্জলি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং বাবা রামদেবের সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণ শীর্ষ আদালতে একটি হলফনামা জমা দিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। হলফনামায় বালকৃষ্ণ বলেছেন, এমন বিজ্ঞাপন আর প্রকাশিত করবেন না।

         সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল মানুষের সুস্থ জীবন নির্বাহ করতে আয়ুর্বেদিক কতটানিরাপদ সেটা জানানো। পতঞ্জলির পণ্য কেনার অনুরোধ? হলফনামায় আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে বালকৃষ্ণ আরও লিখেছেন, যে আইনে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে ( ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমিডিস অ্যাক্ট) এখন সেটি অবাস্তব। কেননা এই আইন নির্মাণ ও সর্বশেষ সংশোধনের পর আয়ুর্বেদ যথেষ্ট উন্নতি করেছে যা বৈজ্ঞানিক সসূত্রে প্রমাণিত।

উল্লেখ্য গত বছর নভেম্বর মাসে এই মামলার শুনানিতে পতঞ্জলিকে তিরষ্কার করে শীর্ষ আদালত এক কোটি টাকা জরিমানার কথা বলে।২২ নভেম্বর রামদেব বাবা এক সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা বলেন। আমাদের পণ্যের গুণাগুণ যদি মিথ্যা বলে প্রমাণ কেউ দেন এক হাজার কোটি টাকা জরিমানা দেব ফাঁসি দিতেও পারেন। তবে গতকাল হলফনামা দিয়ে ব্যলকৃষ্ণ ক্ষমা চেয়ে কার্যত স্বীকার করে নিলেন বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্তি ছিল। আগেও রামদেব বাবা বহুবার ক্ষমা চেয়েছেন। রামদেব বাবার পতঞ্জলি সংস্থা আজ একটি কর্পোরেট ব্যবসায়িক সংস্থা।

                        এই মূহুর্তে পতঞ্জলির ব্যাবসার পরিমাণ বার্ষিক ২২ হাজার কোটি টাকা।২০১৬/১৭ সালে ব্যবসার মুনাফার পরিমাণ ছিল ১১৯০ কোটি টাকা। ১৭/১৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৩০ কোটি টাকা।১৮/১৯ সালে মুনাফার পরিমাণ এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৯.৪০ কোটি টাকা।২০১৪ হিসেবে পতঞ্জলি সংস্থার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪৮,৯৮১.৫২ কোটি টাকা। চলতি বছরের ২০ মার্চ পতঞ্জলি সংস্থার শেয়ার মূল্য প্রতি ইউনিট ১৩৫২.৩০ টাকা। পতঞ্জলি সংস্থা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মুনাফার পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

কে এই রামদেব বাবা যিনি এক দশকের মধ্যে যোগগুরু থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়ী হয়ে গেলেন। বিরোধীরা বলেন লালা রামদেব। একটু অতীতে ফিরে তাকানো যাক।১৯৬৫ সালে ২৫ ডিসেম্বরে রামদেব বাবা ওরফে রাম কিষান যাদবের জন্ম হরিয়ানার মহেন্দ্রগড় এলাকায়। মায়ের নাম গুলাবো দেবী। বাবা গরীব কৃষক রামনিবাস যাদব। তাঁর এক দাদা ও দুই ভাইবোন আছে। ছোটবেলায় রোগে রামদেব বাবার শরীরের বাঁ দিক অসাড় হয়ে যায়। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা শাহজাদপুর সরকারি স্কুলে।

          মাত্র ৯ বছর বয়সে দয়ানন্দ সরস্বতীর সত্যার্থ প্রকাশ গ্রন্থটি পাঠ করে অধ্যাত্নবাদে আকর্ষিত হন। স্কুলের পড়া ছেড়ে খানপুর গুরুকুল বিদ্যালয়ে যোগ দেন।১৪ বছর বয়সে তিনি যান কলওয়া সেখানে আচার্য বলদেবজীর কাছে পাঠ নেন। সেখানে সহপাঠী হিসেবে বন্ধুত্ব হয় আজকের হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য সংস্থার সর্বেসর্বা বালকৃষ্ণের সঙ্গে। এখানে বদুজনে সংস্কৃত ও সাহিত্য, হিন্দু দর্শন ও যোগ সম্পর্কে পড়াশোনা করেন।

১৯৯২ সালে পড়াশোনা শেষ করে দুজনে হরিদ্বারে এসে একটি আশ্রমে থাকেন!১৯৯৫ সালে ৫ জানুয়ারি দুজন মিলে সঙ্গে গুরু করণবীর হরিদ্বারে প্রতিষ্ঠা করেন দিব্যা যোগা মন্দির ট্রাস্ট। যেখানে যোগ শিক্ষা একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধের দোকান খোলা হয়। এটপর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যোগ শিক্ষা ও প্রবচন শুরু। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে বিজেপি দলের সঙ্গে সখ্যতা। গড়ে ওঠে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ প্রোডাক্ট।

         রামদেব বাবা খাতায় কলমে এই ব্যবসায়িক সংস্থায় না থাকলেও বন্ধু বালকৃষ্ণ এবং বাবা ও ভাইদের ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন রামদেব।২০১৩ সালেই রামদেব বাবা তাঁর সম্পত্তির হিসেব দেন ১১০০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রথম থেকেই পতঞ্জলির পণ্যের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।সেনা ক্যান্টিনে আমলা জুস বিক্রি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে হরিদ্বারে গড়ে ওঠে দুটি পতঞ্জলি যোগাপীঠ। ব্রিটেনেও গড়ে ওঠে যোগাপীঠ। স্কটিশ দ্বীপেও যোগাপীঠ গড়া হয়েছে।

            আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রামদেব বাবা নিজেকে প্রচারের আলোর মধ্যে এমন সফল প্রয়োগ ঘটান যে ২০১৪ সালে দিল্লিতে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর মোদিজীর প্রভাবে একটি জাতীয় সম্মেলন করে স্বচ্ছ ভারত মিশন ঘোষিত হয়। বিশ্বের বহু বিশিষ্ট মানুষ আসেন। এঁদের মধ্যে তৎকালীন জাতিসংঘের প্রধান কোফি আন্নানও ছিলেন। তবে যোগগুরু হিসেবে রামদেব বাবার উত্থান হয়েছে মনে করলে ভুল হবে। রাজনৈতিক বিতর্ক ও একটি মৃত্যু ঘিরে রামদেব বাবা পরিচিত হয়েছেন। কি সেই ঘটনা কি সেই মৃত্যু রহস্য? দেশীয় আয়ুর্বেদিক পণ্যের বিপণন নিয়ে যিনি প্রথম উদ্যোগ নেন সেই ব্যক্তির হঠাৎ রহস্যময় মৃত্যু তারপর রামদেব বাবার উত্থান। সেই বিস্ফোরক প্রতিবেদন আগামী পর্বে।

পর্ব : ২ ও শেষ পর্ব শনিবার ২৩ মার্চ,'২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *