পর্ব ৭১
বুদ্ধদেবের সৎ মা গৌতমী সন্ন্যাস নেওয়া মনস্থ করলে সংঘে নারীর প্রবেশাধিকার দিতে বাধ্য হন বুদ্ধদেব।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : গত পর্বে শুরু করেছি বৌদ্ধ ও জৈন যুগে বেশ্যাদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা।অমরাত জানি বুদ্ধদেব প্রথম দিকে সংঘে নারীকে প্রবেশাধিকার দিতে চাননি। কারণ নারীর সংস্পর্শে এলে পুরুষের স্খলন হতে পারে। পরে নিজের সৎ মা গৌতমী পুত্রের সঙ্গে সন্ন্যাস জীবন অতিবাহিত করা মনস্থ করলে বুদ্ধদেব বাধ্য হন । এই সম্পর্কে ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী গ্রন্থে লেখকদ্বয় সুরেশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশে নারীর স্থান শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন,,,,, বৌদ্ধধর্মে আচরণবিধি সম্বন্ধে পঞ্চশীল প্রধান; এর মধ্যে একটি নির্দেশ হল ব্যাভিচার করবে না। পাতিমোকখাদি গ্রন্থে নারী_পুরুষের সংসর্গ সম্বন্ধে কঠোর নির্দেশ আছে,তাঁর সঙ্গে আছে নিয়মলঙ্ঘনহেতু দণ্ডের ব্যবস্থা ।
এই গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে নারী সম্পর্কে নিন্দা।
জাতকে দুষ্টা স্ত্রীর অনেক গল্প আছে। এক নারী পতির প্রবাসে সম্মতি জানিয়েছিল এবং তাঁর প্রত্যাবর্তনে দুঃখিত হয়েছিল। এই স্ত্রী স্বামীর নিন্দা করত, অপরে তার প্রশংসা করলে নীরব থাকত। স্ত্রীলোকটি নানাভাবে স্বামীর প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করত। তার আরও দুর্গুণের মধ্যে ছিল প্রতিবেশীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, রাস্তায় ঘুরে বেড়ান যাতে লোকির দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়, দরজায় দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে উদ্দেশ্যহীনভাবে তাকিয়ে থাকা ইত্যাদি ( pre Buddhist India,pp285-86)।
কামশাস্ত্রে নারী সম্পর্কে বর্ণনার প্রতিবিম্ব মেলে বৌদ্ধ জাতকে।
লেখকদ্বয় লিখেছেন, জাতকে দুষ্টা রমণীর লক্ষণগুলি কামসূত্রে লিখিত লক্ষণের অনুরূপ। জাতকে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অবজ্ঞার কারণ আটটি: দারিদ্র্য, রোগ, বার্ধক্য, মাতলামো, হিতাহিত জ্ঞানহীনতা, জড়বুদ্ধি, অতিশ্রম, বাধ্যবাধকতাবোধের অভাব। জনসাধারণের উদ্যানে ভ্রমণ, নদীতটে ঘুরে বেড়ান, আত্মীয় বা অনাত্মীয়ের বাড়ীতে বারবার যাওয়া, আপত্তিকরভাবে জামা পরা, কড়া মদ্যপান, বাড়ীর বাইরে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকা, দরজায় তাকিয়ে থাকা ইত্যাদি আচরণহেতু স্ত্রী নিন্দিতা হয়ে থাকেন।নরনারীর পারস্পরিক আকর্ষণ এমনই প্রবল যে তাদের অবাধে মিলন সম্বন্ধে কঠোর নিষেধ সত্ত্বেও যুগেযুগে এই মিলন হয়েছে।বৌদ্ধ কথাবত্থু’তে লিখিত একাধিপ্পয়ো প্রথানুসারেট যে কোন স্ত্রী পুরুষ্ট একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হলে তাদের দৈহিক মিলন হতে পারে। ( চলবে)
পরবর্তী পর্ব আগামী শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর,২০২৪