পর্ব: ৬০
বৈদিক যুগ থেকেই নারী ভোগ্যবস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, স্ত্রীলোককেসাধ্বী রাখিবার জন্য পুরুষ সমস্ত সামাজিক শক্তিকে তাহার বিরুদ্ধে খাড়া করিয়া রাখিয়াছে – টাইট স্ত্রীলোকের কাছে পুরুষের কোন জবাবদিহি নাই _ ইহাতেই স্ত্রীলোকের সহিত সম্বন্ধে পুরুষ সম্পুর্ণ কাপুরুষ হইয়া দাঁড়াইয়াছে।( লোকহিত প্রবন্ধ, রবীন্দ্র রচনাবলী,১২ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৪৮)
মহাভারতের ধর্মজ্ঞ চরিত্র ভীষ্ম নারী অবমাননার চূড়ান্ত মন্তব্য করেছেন।
কথায় বলে, যা আছে ভূভারতে, তাই আছে মহাভারতে।সত্যিই তাই ভারতে নারী শোষণ যতটা আছে ততটাই আছে মহাভারতের পর্বে পর্বে। কঙ্কর সিংহের ধর্ম ও নারী প্রাচীন ভারত গ্রন্থে নারী -নিন্দায় মহাভারত প্রবন্ধে লিখেছেন,,,,,, সামগ্রিকভাবে মহাভারত ক্ষত্রিয়দের গৌরবগাঁথা এবং সহযোগী ব্রাহ্মণদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অনুশাসন। মহাভারতে নারীর অবনমন চূড়ান্ত। মহাভারতের আদিপর্বের যজাতির পুত্র দ্রুহু স্পষ্টভাষায় নারীকে ভোগ্যপণ্যরূপে চিহ্নিত করেছেন।( মহাভারত ১/৮৪)। মহাজ্ঞানী ভীষ্ম বলেছেন, বিধাতা যে সমুদয় সৃষ্টি কার্যে প্রবৃত্ত হয়ে সহাভূত সমুদয় ( পঞ্চভূত) ও নারী – পুরুষ সৃষ্টি করেন সেসময়েই নারীকে দোষের আকর রূপে সৃষ্টি করেন।( মহাভারত ১৩/৩৮)। ধর্মজ্ঞ ভীষ্ম আরো বলেন ইহলোকে স্ত্রীলোক অপেক্ষা পাপশীল পদার্থ আর কিছু নেই। প্রজ্বলিত অগ্নি, ময়দানবের মায়া, ক্ষুরধার, বিষ, সর্প ও মৃত্যু – এই সমুদয়ের সাথে নারীদের তুলনা করা যায়।(১৩/৩৯)। এইসব অভিমত ধর্মজ্ঞ ভীষ্মের।
রাজা যযাতির পুত্র দ্রুহু নারীকে ভোগ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।( ছবিটি কাল্পনিক)
তিনি ছিলেন অকৃতদার। সারাজীবন ব্রহ্মচর্য লালন করে গেছেন। পিতাকে খুশি করতে যে ক্ষত্রিয় বীর চিরদিনের জন্য নারীসঙ্গ বর্জিত জীবনযাপন করেছেন, সেই নারীর ওপর তাঁর বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধও ছিল না। অনুশাসন পর্বে ভীষ্ম আরও বলেছেন, স্ত্রীগণের প্রতি কোনও কার্য বা ধর্ম নির্দিষ্ট নাই। কারণ তাঁরা বীর্যশূন্য, স্বার্থজ্ঞানহীন ও মিথ্যাবাদী (১৩/৩৯)। এখানেই শেষ নয়।
কঙ্কর সিংহ তাঁর বইতে ভীষ্ম সম্পর্কে আরও বিষ্ফোরক তথ্য দিয়ে লিখেছেন, নারী অবসরে পেলেই ধনবান ও রূপবান পতিদের পরিত্যাগ করে পরপুরুষ সম্ভোগে প্রবৃত্ত হয়।।,,,,,,, যেমন কাষ্ঠ রাশি দ্বারা অগ্নির এবং সর্বভূত সংহার দ্বারা অন্তকের তৃপ্তিলাভ হয় না, তেমনি অসংখ্য পুরুষ সংসর্গ করলেও স্ত্রীলোকের তৃপ্তিলাভ হয় না।(১৩/৩৮)। অর্থাৎ পয়সার বিনিময়ে যাঁরা দেহদান করেন তাঁরা গণিকা। বাকি যাঁরা শুধু কামোনার্ট জন্য বহু পুরুষের শয্যাসঙ্গী হন তাঁরা কোন পর্যায়ের পাঠকের বিবেচনার জন্য রাখা যেতে পারে। (চলবে)
আগামী পর্ব শুক্রবার ১৫ নভেম্বর,২০২৪