পর্ব: ৬০
মহাভারতের পর্বে পর্বে গণিকাদের উল্লেখ আছে।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: মহাভারতের গণিকা সমাজে ভোগের বস্তুত হিসেবে পরিগণিত হলেও প্রয়োজনে গুরুত্বও ছিল। ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী গ্রন্থে ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশে নারীর স্থান প্রবন্ধের লিখেছেন ,,,,,,,,,, দ্রৌপদী সমভিব্যাহারে যখন পাণ্ডবগণ শোকাভিভূতা মাতার দর্শনে গিয়েছিলেন তখন তাঁদের সঙ্গে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন গণিকারাও (@৫/২২/২১)। অন্যদিকে, দুর্যোধন মৃগয়ায় গেলে তাঁর সঙ্গে গণিকারা ছিলেন (৩/২৩৯/২২ থেকে)। প্রকাশসর্বগম্যা (৮/৯৪/২৬) নারী বলতে বারবণিতাকে বোঝাত। এদের বেশভূষা সম্বন্ধে গিয়ে (৮/৯৪/২৯) মহাভারতকার বলেছেন যে, এরা পরবে লাল কাপড়চোপড়, লাল রঙের সোনা। লাল রং ছিল যমের প্রতীক; বধ্যভূমিতে নীয়মান মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিকেও লাল পোশাক পরান হত। বারনারীদের পক্ষে এই রং কেন বিহিত হত বলা যায় না। হতে পারে যে সমাজে অন্যান্য শ্রেণীর নারীদের থেকে সহজে এদের চেনার জন্য এদের রক্তবর্ণ পরাররীতি ছিল। এমনও হতে পারে, বারাঙ্গনা গমনের কুফল সম্বন্ধে তাদের দর্শনমাত্রেই লোককে সচেতন করার উদ্দেশ্যে মৃত্যুসূচক বর্ণ বিহিত হয়েছিল।( পৃষ্ঠার৫৫)
রামায়নেও গণিকা প্রসঙ্গ আছে।
রামায়ণেও তাকানো যাক। ধর্ম ও নারী প্রাচীন ভারত গ্রন্থে কঙ্কন সিংহ প্রাচীন ভারতে গণিকা প্রবন্ধে লিখেছেন,,,,,,, রামায়ণে মহাভারতে বিলাসের উপকরণের তালিকায় গণিকাদের দেখা যায়। এ থেকে বোঝা যায় গণিকা পোষণ ছিল ঐশ্বর্যের পরিচায়ক। তাদের সংখ্যা নির্ভর করত রাজন্যবর্গ ও সমাজের বিত্তবানদের সম্পদের অনুপাতের। গণিকা সম্ভোগে তখন সমাজে কোনও লুকোচুরি ছিল না। সমাজের অনেক গভীরে চলে গিয়েছিল এই ব্যবস্থা। রাষ্ট্রে -সমাজে এক শ্রেণীর পুরুষের হাতে প্রচুর উদ্বৃত্ত অর্থ – সম্পদের সঞ্চয় না থাকলে এইভাবে গণিকা পোষণ সম্ভব হত না। সমাজকে এইভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা অবশ্য শাস্ত্রীয় অনুমোদন পেয়েছিল।( পৃষ্ঠা৮৩)
সে যুগে অশ্বমেধ যজ্ঞে গণিকাদের ভূমিকাও ছিল।
লেখক এই প্রবন্ধে লিখেছেন, প্রাচীন ভারতের সাহিত্যে গণিকাদের উপস্থিতি ছিল সর্বক্ষেত্রে। সুন্দরী নারী ক্রয় করে দেবমন্দিরে উপহার দিলেই শুধু পুণ্য অর্জন করা যেত না, দলে দলে সুন্দরী নারীদের ব্রাহ্মণদের উপহার দিলেও পুণ্য সঞ্চয় করা যেত। প্রাচীন সাহিত্য সে কথাটা বার বার বলেছে। অশ্বমেধ যজ্ঞের পর ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির অন্যান্য ভোগ্যবস্তুর সাথে অসংখ্য তরুণী সমাগত ব্রাহ্মণ এবং রাজন্যবর্গদের মধ্যে বিতরণ করেন। এটা ছিল অতিথি আপ্যায়নের একটা অংগ, রাজা শশবিন্দুও তার অশ্বমেধ যজ্ঞে বহু সুন্দরী নারী দান করেছিলেন। রাজা ভোগীরথও শতশত সুন্দরী তরুণী দান করেছিলেন। এইসব উদাহরণ মহাভারতের বিভিন্ন পর্বে ছড়িয়ে আছে।( পৃষ্ঠা ৮৩) (চলবে )
আগামী পর্ব , সোমবার ,১১ নভেম্বর,২০২৪