বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব : ৫৭

মধ্যযুগে স্তন ঢাকা থাকত অলঙ্কারে।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: নারীর স্তন অলঙ্কার ব্যবহারের পেছনে গৃহস্থ নারী বা গণিকাদের উদ্দেশ্য একই। পুরুষের আকর্ষণ সৃষ্টি করা। সরাসরি গণিকা না হলেও নারী সর্বদেশেই ভোগ্য্যা হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। পৃথিবীতে এমন দেশও আছে যেখানে অতিথি বাড়িতে এলে আমরা যেমন চা খাইয়ে অতিথি সেবার করি,সেদেশের বাড়ির নারীদের সেইসব অতিথিদের নিজের স্তন পান করাতে হয়। এটাই রীতি। এলাকাটি নিউগিনির অধিবাসী সম্প্রদায়। আবার এমন দেশও আছে যেখানে নারী শুধু যে দেহ বিক্রি করে তা নয,বুকের দুধও বিক্রি করে। যার জন্য সন্তানসম্ভবা নারীদের কদর বেশি ছিল জাপানে।

দুর্বল, বৃদ্ধকে স্তনদান ছিল প্রথা।

যদিও বিশ্বের সর্বত্রই একসময় নারীর বুকের দুধ বিক্রি হত। মহার্ঘ সেই দুধ খোলা হাট থেকে কিনতেন দূর্বল নারী ও বৃদ্ধবৃদ্ধারা। হাটে বসে থাকতে বিক্রেতা কন্যারা। খদ্দের এলে বুক টিপে টাটকা দুধ তাঁরা বিক্রি করত। শোনা যায় চীনে সমুদ্রযাত্রায় দুধের চাহিদা ছিল প্রবল। কিন্তু অপ্রতুল হওয়ায় মেয়েরা নিজেদের দুধ বিক্রি করতে বন্দরে হাজির হত। চীনারা সেযুগে স্ত্রী ছাড়াও গর্ভধারণে উপযুক্ত বহু নারী পুষে রাখত। জার্মানিতেও নতুন মা হয়েছেন এমন নারীর দুধ পর্যাপ্ত হয়ে গেলে ফেলে দিতে যাতে না হয় স্বামীরা নিজেরা স্ত্রীর বুকে মুখ দিয়ে সেই দুধ খেত। সুতরাং নারীর দেহের অঙ্গপ্রতঙ্গ নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টির যেমন উৎসাহ ছিল চাহিদাও ছিল। কবি কালিদাসের রচনায় এমন বহু উদাহরণ আছে।

ঋষি বিশ্বামিত্র ও স্বর্গের গণিকা মেনকার যৌন সম্পর্কের ফসল শকুন্তলা।

মনন মুখোপাধ্যায় স্বদেশচর্চা লোক শারদসংখ্যা ২০১৬ তে প্রাচীন ভারতের সাহিত্যে ও সমাজে যৌনতা শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন,,,, রতি মন্দিরবাসিনী বারাঙ্গনাদের উজ্জ্বল দেহসৌষ্ঠব ও তাদের কামনা -বাসনায় পরিপূর্ণ মদমত্ততা কালিদাসের সাহিত্যকে সবথেকে প্রভাবিত করেছে। কালিদাসের অনবদ্য সৃষ্ট নাট্যরূপ অভিজ্ঞানম শকুন্তলম। নায়িকা শকুন্তলা স্বর্গের গণিকা মেনকার কন্যা, অর্থাৎ বেশ্যার মেয়ে। কালিদাস গণিকাদের উন্মত্ত যৌবন রাগে দীপ্ত কামনা ও বাসনার কথায় তাঁর লেখনীকে প্রাণময় করেন। শকুন্তলা নাটকের সংলাপে দুষ্মন্ত বলছেন – হবে না হবে না আর তখন, ওই হবে না হবে না বলার সময় শকুন্তলাকে কী সুন্দর দেখাচ্ছিল। আর তারপর সে মুখখানা কাঁধের দিকে বাঁকিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করল, তখন কেন তাকে চুম্বন করলাম না। কেউ বাধা দেওয়ার ছিল না। ( চলবে)

আগামী পর্ব : ২ নভেম্বর, শুক্রবার ২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *