বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব: ৫৬

রামায়ণের যুগে নটীরাও রাজবর্গের যৌনতার সঙ্গিনী হতে হত।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: গত পর্বে জানিয়েছি পৌরাণিক যুগ বলে যা দাবি করা হয় , তার সত্যতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও রামায়ণে মহাভারতে পেশাদার নট- নটীদেরও অস্তিত্ব ছিল। সেযুগেও তাহলে থিয়েটারের চল ছিল? ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী গ্রন্থে লেখকদ্বয় সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশে নারীর স্থান শীর্ষক প্রবন্ধে নট- নটী প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ, নৃৎ ধাতুনিষ্পন্ননট শব্দে বোঝায় অভিনেতা, বা নর্তক। পতিত ক্ষত্রিয়ের পুত্রকেও বলা হত নট( মনু ১০/১২)। সঙ্গীতে একটি রাগের নাম নট।সম্ভবত নটেরা এই রাগেই বেশিরভাগ সময় গান গাইত। নট বোঝাতে শৈলুষ শব্দেরও প্রয়োগ আছে। শৈলুষ শব্দের অন্যন্য অর্থের মধ্যে আছে গায়ক, অভিনেতা, দলের নেতা, ঐক্যতান সঙ্গীতে তালরক্ষক বৈহাসিক বা প্রহসনের অভিনেতাকেও শৈলুষ নামে অভিহিত করা হত। দুর্বৃত্ত বোঝাতেও এই শব্দের প্রয়োগ আছে।l( পৃষ্ঠা: ১০৬)

রামায়ণের দুই মুখ্য চরিত্র রাম ও সীতা

লেখকদ্বয় লিখেছেন,,,,,,, বনগমনে উদ্যত রামচন্দ্রের সঙ্গে সীতা যেতে চাইলে তিনি তাঁকে নিবৃত্ত করতে চেয়েছিলেন। এতে বিক্ষুব্দা সীতা দেবী পতিকেসখেদে বলেছিলেন, তুমি তোমার সতী পত্নীকে শৈলুষের মতো অপরের হাতে দিয়ে যেতে চাইছ? নট ভার্যা বা নটীরা যে জনগণের মনোরঞ্জনে ব্যগ্র ছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় মহাভাষ্য (৬/১/২/৭)। বলা হয়েছে যে, রঙ্গমঞ্চে নট স্ত্রীদের লোকে জিজ্ঞাসা করত তোমরা কাদের? নটীর উওর , আমি তোমারই আমি তোমারই। আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর সেক শুভোদয়া গ্রন্থে আছে যে, নটী বিদ্যুৎপ্রভার সঙ্গে রাজমন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে আরও কয়েকজন সম্ভোগরত হয়েছিলেন। এই গ্রন্থের চরিত্রগুলি দ্বাদশ -ত্রয়োদশ শতকের। এতে উল্লেখ আছে যে, এই রমণী রাস্তায় বক্ষের আবরণ উন্মোচন করে একজনকে দেখিয়েছিল। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে শৈলুস শব্দের ব্যাখ্যায় টীকাকার লিখেছেন যে ইনি সেইরূপ লোক যিনি স্ত্রীকে অপরের সম্ভোগের জন্য দিয়ে জীবিকার্জন করেন।

বক্ষের কথা যখন উঠল তখন স্তন ভূষণের সম্পর্কে কিছু বলতে হয। আঠেরো শতকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে শুধু পতিতারা স্তন ভূষণে পুরুষকে প্রলুব্ধ করতে এমনটা নয়। গৃহস্থ ঘরের মেয়েরাও স্তন ভূষণের সময়ে পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। সেযুগে পূরুষ নির্ভরতা স্টটির বেশি ছিল মেয়েরা বড় হতেই অভিভাবকদের মত মেয়েরাও নিজেরা চিন্তিত হয়ে পড়ত কোনো পুরুষের ভরণীয় না হয়ে উঠলে অন্য বিবাহিতা নারীদের কাছে ব্যাঙ্গের কারণে হয়ে উঠতে হবে।

১৮ শতকে ইংল্যান্ডে গণিকাদের সজ্জা

অন্যদিকে গণিকারাও জানত পুরুষের প্রথম দুর্বলতা নারীর স্তন। সুতরাং স্তন আকার সুঢৌল কিরার্ট সাথে সাথে বিভিন্ন ভাবে স্তনকে অলঙ্কার দিয়ে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল। রামকৃষ্ণ রায় স্বদেশচর্চা লোক পত্রিকার শারদ ২০১৬ সংখ্যায় স্তন বিচিত্রা প্রবন্ধে লিখেছেন,,,,,, জেনে অবাক হবেন উক্ত দুটি দেশের রুচিবতী ললনারা স্তন বালা বা স্তনাঙ্গুরী ( Brest- ring) ব্যবহার করত। শুধু তাই নয়, ওটা ছিল নাকি একটি সামাজিক প্রথাও। তারা স্তনের বোঁটাদুটি ছ্যাদা করে তাতে দামি পাথর বা হীরকখচিত সুবর্ণবলয় দুলিয়ে দিত। অনেকটা আমাদের দেশের কানের দুল, মাকড়ি কি নোলক, নাকছাবি, নথ পরার মত ব্যাপার পৃষ্ঠা ১৩১। ( চলবে)

আগামী পর্ব: ২৮ অক্টোবর, সোমবার ২০২৪

*********

*********

*********

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *