বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব – ৫৩

অতীতে দক্ষিণ ভারতে স্তন কর দিতে হত।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : গত পর্বে আলোচনা শুরুর করেছিলাম নারীর স্তন নিয়ে। শুধু যৌনতার প্রয়োজনেই মেয়েদের ব্যবহার এমনটা নয়। ব্যাবিলনে অনেক ক্ষেত্রে সন্তানবতী মায়েদের বুকে দুধের অভাব হতো। সেক্ষেত্রে কিছু গণিকাদের গর্ভবতী করাই হত এই সমাজের মায়েদের সন্তানদের খাদ্যের দুধ সংগ্রহের জন্য। বলা হত স্তন্যদায়ী -ধাত্রী। পুরুষের বিকৃত কাম ক্ষুধা পূরণেরও কিছু লোমহর্ষক তথ্য আছে। বেশিদিন আগের কথা নয়। লেখক রামকৃষ্ণ রায় তাঁর স্তন বিচিত্রা প্রবন্ধে ( স্বদেশচর্চা লোক,শারদ,২০১৬) সংখ্যায় লিখেছেন,,,, আঠেরো শ শতকে একসময় যে একদল মানুষ আত্মনির্যাতনে এমনকি বিকৃত কামক্ষুধার তাড়নায় জননাঙ্গটি পর্যন্ত অপসারিত করে বাসনা চরিতার্থ করত তারা বেশিরভাগই রাশিয়ান বংশোসম্ভুত।

হুন সম্রাট অ্যাটিলা নারী লুণ্ঠন করে তাদের স্তনে দাগিয়ে দিত বিজয়ের চিহ্ন।

,,,,,,ভি পেলিকান ও ডব্লিউ কোচ – এর অভিজ্ঞতালব্ধ বিবরণীতে প্রকাশ, সে সময়ে এমন একটা আইন চালু করা হয়েছিল যে, সাত থেকে দশ বছরের মেয়েদের স্তনের বৃন্ত কেটে ফেলা হয়েছে কিনা তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দাখিলের জন্য বিচারালয়ে এসে হাজিরা দিতে হত।,,, একসময় রাশিয়ান স্কপসী নামে যে গোপন সংস্থাটি একদল মানুষ গড়ে তুলেছিল তাতে স্ত্রী- পুরুষ উভয়েরই স্তনদ্বয় ও জননাঙ্গ অপসারিত করা ছিল বিশেষ নিয়মানুধীন। অমান্যকারী বা কারিণীর দলে ঠাঁই হত না। ওদের সম্বন্ধে যতটুকু জানা যায় তা হল, কোনও পর্বানুষ্ঠানের দিন উল্লেখযোগ্য আহার্য ছিল কোন মেয়ের সদ্য- কর্তিত -রক্তাক্ত সামান্য এক টুকরো স্তন মাংস। অবশ্য একথা নাকি অসমর্থিত।

লেখক লিখেছেন,যদি পিছন পানে ফিরে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, রণোম্মত্ব যোদ্ধারা লুণ্ঠন সম্ভারের মধ্যে যত নারীকে অপহরণ করে এনেছে তার বেশিরভাগই ক্ষত চিহ্ন এঁকে দিয়েছে বুকে, বিশেষত তাদের দুই কোমল স্তনে। জগজ্জয়ী হুন সম্রাট অ্যাটিলা কর্তৃক নারীদের স্তনেও আঁকা থাকত অনুরূপ নির্যাতনের চিহ্ন। চতুর্দশ শতকে হিব্রু পান্ডুলিপিতে পাওয়া যায়, হতভাগিনী নারীদের সাজা দেবার উদ্দেশ্যে স্তন দুটি দড়ি দিয়ে বেঁধে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হত।

জাপানি প্রশাসন চিনা মেয়েদের শিবিরে আটকে রাখত জাপানি সেনাদের মনোরঞ্জনের জন্য।

এবার পিছিয়ে যাবো মাত্র একশ বছর আগে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। রাধিকা কুমারস্বামী তাঁর কমফর্ট উওম্যান: পুরুষতন্ত্রে নগ্নতম যুদ্ধাপরাধ ( স্বদেশচর্চা লোক, শারদ ২০১৬) প্রবন্ধে লিখেছেন,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েকবছর আগে ১৯৩২ সালে সাংহাইতে জাপান ও চীনের যুদ্ধের পরে জাপানি সেনাবাহিনীর জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে নারী সংসর্গ প্রদানের উদ্দেশ্যে কমফর্ট স্টেশন নামকএকটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। এর পরবর্তী এক দশক ধরে কমফর্ট মহিলা নামক ধারণাটি জাপান- নিয়ন্ত্রিত পূর্ব এশিয়ায় জাপানি সামরিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই কমফর্ট স্টেশনগুলি ছিল জাপানি সেনাদের যৌন লালসা চরিতার্থ করারএক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং ওই কমফর্ট মহিলারা ছিলেন ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণা করে নিয়ে আসা যৌনসেবা দিতে বাধ্য তরুণী নারী। প্রথম সামরিক যৌনদাসী হিসেবে জাপানের কিয়ুসু এলাকা থেকে কোরীয় তরুণীদের পাঠানো হয় সাংহাইতে। ( চলবে)

পরবর্তী পর্ব , আগামী শুক্রবার ১৮ অক্টোবর,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *