পর্ব : ৫১
কবি কালিদাস গণিকাদের কাব্যিক বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর কাব্যে।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : পর্ব ৫০ এ কালিদাসের রচনায় গণিকাদের প্রসঙ্গ সম্পর্কে মনন মুখোপাধ্যায়ের প্রাচীন ভারতের সাহিত্যে ও সমাজে যৌনতা প্রবন্ধের উল্লেখ করেছিলাম। স্বদেশচর্চা লোক আদিরস সেকাল -একাল শারদ ২০১৬ সংখ্যায় মননবাবু লিখেছেন,,, রতি মন্দিরবাসিনী বারাঙ্গনাদের উজ্জ্বল দেহসৌষ্ঠব ও তাদের কামনা বাসনায় পরিপূর্ণ যৌবন মদমত্ততা কালিদাসের সাহিত্যকে সবথেকে প্রভাবিত করেছে। কালিদাসের অনবদ্য সৃষ্ট নাট্যরূপ অভিজ্ঞানম শকুন্তলম। নায়িকা শকুন্তলা স্বর্গের গণিকা মেনকার কন্যা, অর্থাৎ বেশ্যার মেয়ে। কালিদাস গণিকাদের উন্মত্ত যৌবনরাগে দীপ্ত কামনা ও বাসনার কথায় তাঁর লেখনীকে প্রাণময় করেন। শকুন্তলা নাটকের সংলাপে দুষ্মন্ত বলছেন _ হবে না হবে না আর তখন ওই হবে নাহবে না বলার সময় শকুন্তলাকে কী সুন্দর দেখাচ্ছিল। আর তারপর সে মুখখানা কাঁধের দিকে বাঁকিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করল, তখন কেন তাকে চুম্বন করলাম না। কেউ বাধা দেওয়ার ছিল না।
শকুন্তলার মা অপ্সরা মেনকা শুধু দেবতাদের মনোরঞ্জন করতেন তা নয়। মর্ত্যের ঋষি রাজাদেরও মনোরঞ্জন করাই কাজ অপ্সরা মেনকাসহ অন্য অপ্সরাদের।
লেখক কালিদাসের রচনার বর্ণনা দিয়েছেন বিস্তারিত।,,,,,,,, আর লতামণ্ডপে লুকিয়ে থাকা দুষ্মন্তের উদ্দেশ্যে শকুন্তলার আত্মনিবেদন ও কামনার কথাই ধ্বনিত হয়েছে,_ হে লতামণ্ডপ, হে আমার সর্বসন্তাপনিবারণ , আমার অনুরোধ, আবার এসো ভালো করে ভোগ করার জন্য। কালিদাস যৌবন মদিরাকে সাহিত্যে পান করেছেন। শকুন্তলা যখন মদন অগ্নিতে দগ্ধ দুষ্মন্তের সংলাপ – গ্রীষ্মের আধিক্যের জন্যই কি শকুন্তলা অসুস্থ , নাকি অন্য কিছু? ( শকুন্তলার বুকেরদিকে তাকিয়ে ) না, গ্রীষ্ম নয়, কারণ অন্য, প্রেয়সীর দুটি স্তনে বেনার মূল বেঁটে স্নিগ্ধ প্রলেপ দেওয়া হয়েছে।,,,,,,,,( পৃষ্ঠা ২২৪)
পুরাণ সাহিত্যে নারী স্তন নিয়ে রচনা অজস্র।
স্তন প্রসঙ্গ যখন এল তখন আর্ট একটু বিস্তারিত দেখা যাক। ওই পত্রিকারশারদ সংখ্যা ২০১৬ টেট রামকৃষ্ণ রায় তাঁর স্তন বিচিত্রা প্রবন্ধে লিখেছেন, স্তনের বহু নাম। দেশবিদেশের সব নাম জড়ো করলে তা অষ্টোত্তর শত নামকেও যাবে ছাপিয়ে। সংস্কৃতে স্তনের নামাবলীতে আছে – কুচ, উরোজ, উরসিজ, উরোভব, পয়োধর, বক্ষজ। স্থূল ও সমুন্নত স্তন বোঝাতে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পীণ, পীবর ইত্যাদি শব্দগুলি। উপরোক্ত শব্দগুলি বাংলা সাহিত্যেব্যবহৃত হলেও অতি চলিত, পরিচিত বা দেশজ শব্দ হল মাই। দুধ শব্দটা কোথাও কোথাও বা কখনও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাংলার বাইরে মাই* শব্দটির চলন নেই। সেখানে চুচি, তোয়া, থন, আরদুধ শব্দগুলি বরং বেশি চালু। আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত শব্দ তোয়া, দুধ আর নূনু ( এই শব্দটি ট্রোব্রিঅ্যাণ্ড দ্বীপমালাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।( পৃষ্ঠা ৯৩)। ( চলবে)
পরবর্তী পর্ব : আগামী শুক্রবার,১১ অক্টোবর,২০২৪