পর্ব: ৪৯
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : গত পর্ব থেকে কাশ্মীরের গণিকাদের সম্পর্কে বলছিলাম। কাশ্মীরের সাহিত্যে গণিকা প্রসঙ্গ বেশ গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। সেখানকার বিখ্যাত সাহিত্যিক , কবি দামোদর গুপ্তার কুট্টনীমত গীতিকাব্যধর্মী একটি রচনা। এই প্রসঙ্গে স্বদেশ চর্চা লোক পত্রিকার ২০১৬ আদিরস, সেকাল- একাল শারদ সংখ্যায় লেখকদ্বয় শুভ্রদীপ দে ও সুস্মিতা দে ( ভৌমিক) লিখেছেন দামোদর গুপ্তার রচনাটি প্রাচীন ভারতীয় গণিকা সমাজের বিবরণে সমৃদ্ধ। ওঁরা লিখেছেন,,,,, বারাণসী নগরী এর পটভূমি। মালতী নামের বারাণসী নগরীতে সেকালে বসবাসকারী এক পরমাসুন্দরী বারবণিতা বিকরবালা নামের এক বৃদ্ধা ও কুরূপা রমণীর কাছে যায়। বৃদ্ধা বিকরবালা তাকে কীকরে পুরুষের মন জয় করতে হয়, সে সকল শিক্ষা তথা উপদেশ দেন কুট্টনীমতম কাব্যের মূল উপজীব্য বিষয়বস্তু প্রকৃতপক্ষে সেটিই।
কুট্টনীমতম কাব্যের কথা কাশ্মীরেরই সুবিখ্যাত ঐতিহ্যাসিক কাব্য রাজতরঙ্গিনী-তে উল্লিখিত আছে। ভারতের একমাত্র ভূ -স্বর্গ কাশ্মীরের সুষমা বা খ্যাতি কেবলমাত্র তার নৈসর্গিক সৌন্দর্যেই নয়, বরং বহুসংখ্যক সৌন্দর্যপ্রেমী সংস্কৃত সাহিত্য উপাসকবৃন্দের বৃহৎ পরম্পরায় উদ্ভবের জন্য। দামোদর গুপ্তা, ক্ষেমেন্দ্র ব্যাসদাস এবং কলহন এই পরম্পরাই অন্যতম সদস্য।
কবি ক্ষেমেন্দ্র তাঁর কলাবিলাস গ্রন্থে কি লিখেছেন সেই প্রসঙ্গে লেখকদ্বয় লিখেছেন,,,, যদিও কলাবিলাস কোনও যৌন সম্পর্কিত বা গণিকা সম্বন্ধিত গ্রন্থ নয়। তবে এখানে হিরণ্যগুপ্তের পুত্র চন্দ্রগুপ্তাকে বিভিন্ন কু বিষয়ে শিক্ষাদানকালে মূলদেব গণিকাদের কলাকৌশলের বিষয়ে শিক্ষাদান করেন। এই গ্রন্থের মাধ্যমে অন্যান্য পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে গণিকারা কিরূপ ব্যবহার করে এবং বিশেষ করে দুষ্ট লোকেদের সঙ্গে, তাছাড়া সমাজে তাদের ভাবমূর্তি কিরূপ ছিল সে সকল বিষয়েই জানা যায়।
কাশ্মীরের প্রাচীন গণিকা।
লেখকদ্বয় আরও লিখেছেন,,,,,তবে সময়মাতৃকা নিঃসন্দেহে একটি গণিকা সম্বন্ধিত কাহিনী, যেখানে সময় মাতৃকার অর্থ হল একজন শিক্ষিকা মাতা যার কাছে গণিকারা শিক্ষালাভ করে থাকে। এই কাহিনীটি একটি ভবিষ্যৎ গণিকার, যে একজন নাপিতের মাধ্যমে পরিচিত হয় কলাবতী নামক এই বিষয়ে একজন পারদর্শিনী মহিলার সঙ্গে এবং সেই নতুন গণিকাটি একজন যুবককে প্রতারণা করার জন্য নির্দেশিত হয়।
পরবর্তীকালে ভাগ্যের জোরে তাকে চোর, বারাঙ্গনা, বিভন্ন জনের স্ত্রী, সবজি বিক্রেতা, দাসী, ব্রহ্মচারিণী, প্রতারক ও শেখে, আবার গণিকাদের শিক্ষিকা ও প্রধানা হিসেবেই ফিরে আসতে হয়। সময়মাতৃকাতেও তৎকালীন সমাজব্যবস্থার ছবিও খুব পরিষ্কার। ক্ষেমেন্দ্রের কলা বিলাস – এ বর্ণিত হয়েছে যে গণিকাগণ ৬৪ কলা পটিয়সী ছিলেন। তাঁদের নাগপাশে অনেক কামুকই দেউলিয়া হয়েছে।( চলবে)
পরবর্তী পর্ব ,৪ অক্টোবর, শুক্রবার