গণেশ চতুর্থীতে মাতছে দেশ,কিন্তু গনেশ কি শুভ দেবতা?

( প্রথম পর্ব)

*

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: : সিদ্ধিদাতা গণেশায় নমঃ।এমনটাই আমরা বলে থাকি।কিন্তু শাস্ত্রে কি গনেশ শুভ দেবতা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন? বিষয়টা খতিয়ে দেখা যাক। অনেকেই বলে থাকেন হিন্দু সনাতন ধর্ম। অর্থাৎ সর্বত্র প্রাচীন ধর্ম। কিন্তু শীর্ষ আদালত বহুদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারি কাছে জানতে চেয়েছিল হিন্দু ধর্ম না কোনো একটি সামাজিক ধারা? সে প্রশ্নে উত্তর কিন্তু কেন্দ্রের কোন সরকারই দেয়নি। এক সময় শীর্ষ আদালত নিজেই জানিয়ে দেয়, হিন্দুত্ব কোনও ধর্ম নয়,জীবী দর্শন মাত্র।১৯৮৯ সালে (নির্বাচনী আপিলে নং ২৮৩৬ /১৯৮৯) ড: রমেশ যশবন্ত প্রভু ও প্রতিপক্ষ কাশীনাথ কুন্তে ও অন্যান্য মামলায়; (১৯১৪)৬, সুপ্রিম কোর্ট কেস ৩৬০ , ট্রান্সফারড কেস ( সি) নম্বর ৪১,৪৩ ও ৪৫/১৯৯৩ মামলায় , ড: এম ইসমাইল ফারুকি ও অন্যরা বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া ও অন্যরা মামলায় মহামান্য উচ্চ ন্যায়ালয় বলেছিল , হিন্দুত্ব একটি জীবনদর্শন।

১৯৬৬ সালের যজ্ঞ পুরুষদত্ত বনাম মুলদাস মামলা,১৯৭৬ সালে ওয়েলথ ট্যাক্স কমিশনার বনাম sriydhorr প্রভৃতি মামলাতেও হিন্দুত্বের সংজ্ঞা স্পষ্ট ভাবেই বলা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের হিন্দুত্বের সংজ্ঞা নির্দিষ্ট কিরার্ট পরেও তিস্তা শেতলবাদ আবার হিন্দুত্বের সংজ্ঞা নির্ধারণ ও নির্বাচনে হিন্দুত্বের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার জন্য সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন। সুপ্রিম কোর্টে কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে পূর্বের রায় বহাল রাখে।প্রশ্ন উঠতে পারে ,সুপ্রিম কোর্টের কেন রায় পাল্টানোর পথের যায়নি। মানি আর না মানি হিন্দুত্ব ও হিন্দুইজম এক জিনিষ নয়।হিন্দুত্ব ছেড়ে বিষয়ের ফেরার যাক।

শিবপুত্র গণেশ।

বর্তমান দৈনিক পত্রিকায় ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭সালে একটি এক কলমের খবর প্রকাশিত দেশ বিদেশ পৃষ্ঠায়। সংবাদটি হল বিজেপির বিরুদ্ধে বৃদ্ধির দলগুলি একটি মোর্চা তৈরির করেছিল। নাম হয়েছিল সংযুক্ত মোর্চা। ফিতে কেটে গণেশ ঠাকুরের মূর্তির সামনে ধূপ ধুনো জ্বেলের নারকেল ফাটিয়ে দিল্লিতে ৭ নম্বর আকবর রোডের সেই কার্যালয়ের উদ্বোধনের উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া। ছিলেন সব শরিক দলের নেতারাও। পট্টবস্ত্র পরেই পুরোহিত গণেশ মন্ত্র পাঠ করেন। ছিলেন বিএসএমটি নেতা বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, হরকিষেন সিং সুরজিৎ,ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত , এ বি বর্ধন ।কারণ শুভ সময়ের উপাসনা।

বিভিন্ন পুরাণে ভোনেশট দেবতা সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা আছে। যেখানে মূর্তি বর্ণনা লীলা উল্লেখিত হয়েছে। গণেশ আবাহন বহু প্রাচীন সন্দেহ নেই। পণ্ডিতেরা বলেন গুপ্ত যুগে খ্রিস্টীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হন। বলা হয়েছে শিব পার্বতীর সন্তান তিনি। বিশেষত তিন পুরাণ গণেশ পুরাণ, মুদগল পুরাণ ও গণপতি অথর্বশীর্ষে গণেশের বিস্তারিত উল্লেখ আছে।
সেই অরাচিন্ট যুগে যখন হিন্দু ধর্ম হিসেবে তেমন প্রতিষ্ঠিত হয়নি তখন ছিল পাঁচটি ধারা। শাক্ত,শৈব , বৈষ্ণব , গাণপত্য ও সৌর। কালী তন্ত্রের উপাসকদের বলা হয় শাক্ত। শিবের উপাসক শৈব, বিষ্ণুর উপাসক বৈষ্ণব, গাণপত্য গণেশের উপাসক ও সূর্যের উপাসক সৌর। গণেশ ঠাকুরকে নিয়ে শাস্ত্রে পুরাণে হাজার মত। বৈষ্ণববৈবর্তপুরাণ, স্কন্ধপুরাণ, নারদপুরাণ কোনো পুরাণে মিল নেই।

গণেশের এই মূর্তি পরিকল্পনা বোধহয় ব্রহ্মারূপী।

শাস্ত্র পুরাণ ছেড়ে চলুন দেখি সুধীরচন্দ্র সরকারের পুরাণ অভিধানর কি বলছে। বর্ণিত হয়েছে,দেহের খর্বাকৃতি, ত্রিনয়ন , চার হস্ত। হাতে শঙ্খ, চক্র গদা ও পদ্ম। ঠিক যেমনটি বিষ্ণুর নারায়ণের হাতে দেখা যায়।মনুষ্যের দেহ , মস্তক গজ। বাহন মূষিক। গোদা বাংলায় ইঁদুর।। মূষিক ধর্মের অবতার। কোনো পুরাণে বলা হয়েছে গণেশ অবিবাহিত। আবার কোথাও আছেগণেশের স্ট্রিট পুষ্টি। কোথাও বলেছে দুইটি স্ত্রী পুষ্টি, ও তুষ্টি।

গনেশের দেহের রং লাল । রজ:গুণের আধার?

কিন্তু যে মহারাষ্ট্রের দলিত সম্প্রদায় গণেশের পুজো করেন,সট মূর্তি চার হাতের হলেও হাতে আছে পাশ, অংকুশ, গদা ও ডালিম ফল। গায়ের রং অবশ্য লাল। কারণ? দেবী পার্বতী নাকি গায়ের ময়লা দিয়ে গণেশের সৃষ্টি করেন । দশ মাসের আগেই অপরিণত অবস্থায় জন্মান তাই দেহ রক্তরঞ্জিত। কেউ কেউ বলেন, অনার্য দেবতা গণেশ রজ: চিন্তার ফসল। বাংলায় যেমন অবাঙালি রাজা জমিদারের হাঁটু ধরে দুর্গাপুজোর প্রচলন, তেমন বাল গঙ্গাধর তিলক গনেশ পুজোর ব্যাপক প্রচলন করেন। মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রে গণপতি বাপ্পা মোরিয়া নামে পূজিত হন। আমরাও বলি। কিন্তু মোরিয়া শব্দের অর্থটাও জানাই দরকার। কথিত আছে চতুর্দশ শতাব্দীতে মোরিয়া গোসাবি নামের নিম্নে বর্ণের এক মহারাষ্ট্রের মানুষ যিনি পুনের চিঞ্চওয়াড়ে আসেন কর্নাটকের শালিগ্রামের আদি বাসিন্দা গণেশের ভক্ত ছিলেন। তিনি গণেশের কাছে বর পান যাতে গণেশের সঙ্গে তার নাম জুড়ে যায়।

গণেশের দুই স্ত্রী পুষ্টি ও তুষ্টি।

গণেশ তন্ত্রের পাতায় লেখা গনেশের প্রচণ্ড সুরা ও নারীলিপ্সা। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, গণপতি এক নন। বহু গণেশ আছেন। অতুলচন্দ্রগুপ্তের কথায় আদিতে গণেশ কর্মসিদ্ধির দেবতা ছিলেন না । ছিলেন বিঘ্নকারক দেবতা। বিঘ্ননাশক নন। অনেকটা শনি দেবতার মত। গণেশ রহস্য জানতে দ্বিতীয় পর্বে চোখ রাখুন।৬ সেপ্টেম্বর বিকেলেই প্রকাশিত হবে দ্বিতীয় ও অন্তিম পর্ব।( চলবে)

দ্বিতীয় পর্ব : ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *