পর্ব: ৪০
প্রাচীন গ্রিসে রক্ষিতা
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : পতিতা অর্থে বোঝায় বারোবণিতা। কিন্তু রক্ষিতা প্রসঙ্গে গ্রিসের ইতিহাস জানানো দরকার।আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তাঁর অনূদিত প্রাচীন গ্রিসে প্রেম ও যৌন জীবন গ্রন্থে লিখেছেন,,,,,,,গ্রিসের অনেক এলাকায় বর্তমান শতাব্দীর সূচনাতেও এই আদিম ব্যবস্থাটি টিকেছিল এবং এখনো কোন না কোন রূপে টিকে আছে। শুধু গ্রিস নয়, প্রাচ্যের অনেক দেশেই রক্ষিতা রাখার প্রচলন রয়েছে। রক্ষিতা বা উপপত্নী ব্যবস্থাটির প্রধান কারণ ছিল তার গর্ভে সন্তান উৎপাদন , বিশেষ করে কারো বৈধ স্ত্রী যদি বন্ধ্যা হয় অথবা শুধু কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়, সেক্ষেত্রে রক্ষিতার কাছে গমন অথবা তাকে বাড়িতে স্থায়ীভাবে রেখে মিলিত হওয়াকে আইন সম্মত বিবেচনা করা হত এবং দৃশ্যত: রাষ্ট্রেরও তাই কাঙ্ক্ষিত ছিল। পেলোপনেসীয় যুদ্ধের সময় এথেন্সের প্রত্যেকটি নাগরিককে উৎসাহিত করা হয় রক্ষিতা গ্রহণের জন্য, এমনকি বিদেশি রক্ষিতা হলেও আপত্তি ছিল না। যুদ্ধে যে প্রাণহানি ঘটেছিল তা বৈধ সন্তানের জন্মদানের মাধ্যমে পূরণ করার জন্যই গৃহীত হয়েছিলএই ব্যবস্থা।( পৃষ্ঠা ৪০/৪১)
প্রাচীন গ্রিসে ধনী পরিবারে কিশোর যৌনসঙ্গী পোষা ছিল সম্মানের
গ্রিসে নারী রক্ষিতা রাখা যেমন বৈধ ছিল তেমন যৌনতায় পুরুষ কিশোর রাখাও ছিল সম্মানের। গ্রিক পুরাণে বলা হয়েছে গ্রিক দেবতা অ্যাপেলোর ছিল দুই কিশোর যৌনসঙ্গী হায়াসিন্থাস ও সাই পেরিস। এই বালকপ্রীতি পেইডেরাস্টিয়া নামে পরিচিত। যতক্ষণ না পুরুষের দাড়ি গজাতো ততক্ষণ বালক মনে করার রীতি ছিল। বয়স নির্ধারিত ছিল বারো। সর্বাধিক সতেরো। আবার নারীদের মধ্যেও সমকামিতা ছিল স্পার্টার ইতিহাসে শিক্ষিকা ও ছাত্রীর মধ্যে যৌন সম্পর্ক থাকত। খেলাধুলায় মেয়েদের স্বাধীনতা যেমন ছিল তবে নগ্ন অবস্থায়। প্লেটোর সিমপোসিয়াম এ এমন মেয়েদের উল্লেখ আছে , যারা পুরুষদের ধার ধারত না সম্পর্ক গড়ে উঠত নারীদের সঙ্গেই। আমাদের প্রতিবেদন মূলত নারী বার বণিতা প্রসঙ্গে সেহেতু ফিরে যাব শেয়ার প্রসঙ্গেই।
দ্রৌপদী ও তাঁর পঞ্চস্বামী।
ভারতে অর্থ বা বস্তুর বিনিময়ে দেহদান যেমন ছিল বৈধ তেমন এক নারীর বহুপতিত্বও ছিল বৈধ। প্রথমেই মনে পড়ে মহাভারতের দ্রৌপদীর কথা। সেযুগে এমন ঘটনা অস্বাভাবিক না হলেও মহাভারতে যুধিষ্ঠিরের বক্তব্য কিন্তু অন্তত কথা বলে।বেদব্যাসী মহাভারত শীর্ষক নিবন্ধে অধ্যাপিকা কল্যাণী বন্দোপাধ্যায় তাঁর ধর্ম ও নারী গ্রন্থে লিখেছেন,,,,,, যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীর সঙ্গে পঞ্চপাণ্ডবের বিবাহের প্রস্তাব উত্থাপন করলে ব্যাসদেবএইরকম বিবাহকে লোকাচার গর্হিত ও বেদবিরুদ্ধবলে অভিহিত করেন। আর সেই সঙ্গে এই প্রস্তাব সম্পর্কে অন্য সকলের অভিমত জানাতে চান। উত্তরে দ্রুপদ রাজাও বলেছিলেন, যাহা লোকাচার ও বেদবিরুদ্ধ, আমার মতে তাহাই অধর্ম। হে দ্বিজোত্তম , এক স্ত্রী বহু পুরুষদের পত্নী , ইহা কদাপি দৃষ্ট হয় না। ইহা মহাত্মা প্রাচীন পুরুষদিগেরও আচরিত ধর্ম নহে এবং গুণবান ব্যক্তিরাও এরূপর ধর্মের অনুষ্ঠান করিবেন না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বেদভিত্তিক হিন্দুদের সনাতন ধর্মে নারীর একাধিক পতিত্ব নিন্দিত এবং লোকাচার বহির্ভূত ছিল। তথাপি যুধিষ্ঠির তার প্রস্তাবে অটল থাকেন এবং দৃঢর্তরে সঙ্গে বলেন,আমার মুখে কদাচ অনৃতবাক্য নিঃসৃত হয় না এবং আমার মনোমন্দিরে অধর্মের প্রবেশাধিকার নাই। আমি ইহাকে কোনক্রমে অধর্ম বলিতে পারি না।( পৃষ্ঠা ৫৮) (চলবে )
পরবর্তী পর্ব ৩ সেপ্টেম্বর,২০২৪