বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব: ৩৭

পৌরাণিক যুগে গণিকা স্বীকৃতির অন্যতম শর্ত ছিল নৃত্যে পারদর্শিতা।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: গণিকাবৃত্তি নগরজীবনের অঙ্গ হিসেবে ধরা হলেও বৈদিক যুগের শুরু থেকেই গণিকাবৃত্তির প্রমাণ মেলে। ঋগবেদে বিশ্যা শব্দের উল্লেখ আছে। যার অর্থ একজন মহিলার গৃহে বহু পুরুষের আনাগোনা।তবে ভ্রাতৃহীনা মেয়েরাই প্রধানএই পেশায় যুক্ত হত। পুংশ্চলি ও মহানগ্নী নামে দুটি দুটি ভিন্ন শাখায় এই শব্দগুলি হয়ত গণিকাদের নাম। অথর্ববেদে বলা হয়েছে গ্রামীণ উৎসবে নৃত্যে এই মেয়েদের ব্যবহার হত। পুরুষ গায়ক ও নৃত্যশিল্পীরা এই গণিকাদের ভোগ করতেন। সাঙ্খ্যায়ণ আরণ্যক ও বাজসনেয়ী সংহিতাতেও এই পেশার কথা আছে।

প্রাচীন ভারতে যুদ্ধবন্দিনীদের গণিকা বানানো হত।

সুকুমারী ভট্টাচার্য তাঁর প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ গ্রন্থে লিখেছেন,,,,,যুদ্ধে পাওয়া বন্দিনী নারী অনাদিকাল থেকে সকল সমাজেই গণিকালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। অবশ্য এরা অনেকসময়েই অনেকটা ঘুর পথে এসে পৌঁছত। প্রথমে সেনাপতি বা রাজার অন্তঃপুরে অন্যান্য বহু নারীর সঙ্গে একমত একটি পুরুষের ভোগ্যবস্তু হয়ে দিন কাটাত; পরে গৃহস্বামী অন্যান্য পুরুষ আত্মীয়দের ; এবং সবশেষ গণিকালয়ে এসে পৌঁছাত এরা।যুদ্ধ ছাড়াও দেশের দুর্দিনে দুর্ভিক্ষে বা রাষ্ট্র বিপ্লবে দুঃস্থ পিতামাতা ভরণপোষণে অক্ষম হয়ে কখনো কখনও কন্যা বিক্রয় করতেন; হয় তারা ধনীগৃহে, রাজঅন্তঃপুরে , মন্দিরে প্রথমে স্থান পেত এবং রূপযৌবন খানিকটা ম্লান হলে গণিকালয়ে আসত, নইলে সরাসরি গণিকালয়েও কন্যা বিক্রয়ের ব্যবস্থা ছিল।( পৃষ্ঠা ৭০)

সামাজিক উৎসবে পৌরাণিক যুগে গণিকাদের ভূমিকা ছিল।

নারী একদিক থেকে সমাজে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, অন্যদিকে ভোগের বস্তু। সর্বজনীন ভোগ। তবে রামায়ণ , মহাভারতে এবং বৌদ্ধ যুগে একটা সম্মান ছিল। তবে সে সম্মান কতটা বাস্তবিক সম্মান না চাহিদা পূরণের বস্তুর প্রয়োজনীয়তা মনে করে সম্মান সেটা বলা মুশকিল। যেমন আজকের যুগে ব্রাহ্মণ পুরোহিত। পূজোয়, বিয়েতে বা সামাজিক মঙ্গল কাজ পুরোহিতের প্রয়োজনীয়তা আছে। কিছু সম্মানও আছে।কিন্তু সে সম্মান কতটা বাস্তবিক ? বরং পুরোহিতের চাল – কলা, দক্ষিণা নিয়ে একটা পরিহাস সমাজে হয়। হয়ত তেমন সম্মানই গণিকারা পেতেন পৌরাণিক যুগে।

কঙ্কর সিংহ তাঁর ধর্ম ও নারী , প্রাচীন ভারত গ্রন্থে লিখেছেন,,,,,, মহাকাব্য রামায়ণ- মহাভারতে নানাভাবে গণিকাদের দেখা যায়। উৎসবে, মৃগয়ায়, যুদ্ধযাত্রায়, যুদ্ধক্ষেত্রে সব জায়গায় গণিকাদের উপস্থিতি যেন অপরিহার্য ছিল।প্রকার মনোরঞ্জন রাজার সুশাসনের অত্যাবশ্যক অঙ্গ। আর ক্ষত্রিয় রাজার স্বার্থরক্ষা করা ছিল ব্রাহ্মণ শাস্ত্রকারদের ধর্ম। তাই শাস্ত্রীয় অনুমোদনএবং রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় রাজা, রাজ পরিষদ, সৈনিক , বণিক এবং সাধারণ প্রজাদের পর্যন্ত দেহসুখ বিধানের জন্য কাম – কলায় কুশলী স্তব এবং বর্ণ ভিত্তিক অসংখ্য গণিকা পোষণ ছিল প্রাচীন ভারতে সাধারণ নিয়ম। ( পৃষ্ঠা ৮২) ( চলবে)

পরবর্তী পর্ব ,২৩ আগষ্ট,২০২৪

চোখ রাখুন আগামীকাল ইউটিউব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *