বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব : ২৬

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: অনেকের ধারণা সর্বজনলব্ধ দেহোপজীবীনিদের থেকে রাজরক্ষিতারা আলাদা সম্মান পেতেন। অর্থাৎ বিশেষ কোনো এক রাজপুরুষ বা পুরোহিতের সঙ্গে সত্যিই কিছু মেয়েকে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে হত। কি সেই ইতিহাস? এই সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য পরিবেশন করেছেন আনোয়ার হোসেন ( মঞ্জু প্রকাশন) প্রাচীন গ্রীসে প্রেম ও যৌন জীবন গ্রন্থে ( মূল রচনা নিকোলাঅস্ট ভ্রসিমজিস ) লিখেছেন,,,,,, প্রাচীন গ্রীসে বারবণিতা নিঃসন্দেহে পতিতাই ছিল। কারণ তারাও অর্থের বিনিময়েই নিজেদেরকে ভোগ করতে দিত। তবে তারা পদস্থ লোকেদের যৌনসঙ্গীও হতে হত। আমরা এদের জাপানি গেইশাদের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। গ্রীক ভাষায় হেটাইরা ( hetaira) শব্দের অর্থ বন্ধু বা সঙ্গী। জাপানি উৎসবে এদের পুরুষদের সঙ্গী হতে হত। এটাই প্রথা।,,,,,( আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, বাংলাদেশ)

হেটাইরা বা বারাঙ্গনাদের উৎপত্তি সাধারণ বেশ্যাদের মতোই ক্রীতদাস সাবেক ক্রীতদাস ও বিদেশিদের মধ্য থেকে সংগ্রহ করা হত। গ্রীসের বিখ্যাত সুন্দরী বারাঙ্গনাদের অধিকাংশ ছিল বিদেশি এবং তারা আসত এক উন্নত সমাজ থেকে যে সমাজে মহিলারা নিঃসন্দেহে অধিক স্বাধীনতা ভোগ করত। শুধু সৌন্দর্য বেশ্যা হওয়ার মাপকাঠি নয় , অন্যান্য দক্ষতাও কাজ করত। গ্রীসের বেশ্যারা নিজেদের মেয়েদের ছোট থেকে ভবিষ্যতে সেরা বেশ্যা হিসেবে গড়ে তুলতে। অধিক উপার্জন করে বৃদ্ধা মাকে ভরণপোষণ করবে এমনটাও থাকে উদ্দেশ্য। ধ্রুপদী যুগের খ্যাতিমান এক বারবণিতা লেইস ( lais) ছিল অ্যালসিবিয়াডেস ( Aleabiades) _এর রক্ষিতা ট্রিমানজার ( Trimandra) কন্যা।

লেখক এই প্রসঙ্গে আরও লিখেছেন ,,,,,,, পুরুষদের কাছে বারবণিতাদের খ্যাতি ছিল প্রধানত সিম্পোজিয়াম ও পানোৎসবের কারণে। সিম্পোজিয়ামে কোন টেবিল বা চেয়ার ব্যবহৃত হত না। অংশগ্রহণকারীরা উপবেশন গ্রহণ করত আনুষ্ঠানিক আসনে এবং ভোজপর্বের পর শুরু হত মদ্যপান ও কথাবার্তা। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু থাকত রাজনীতি, দর্শন । তীর ধনুক নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক খেলা হত। বারবণিতারা মনোরঞ্জনের জন্য সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করত।

লেখক বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, সিম্পোজিয়ামে বারবণিতারা বাঁশি বাজাতো। সঙ্গে যৌন আবেদনমূলক নৃত্য পরিবেশন করত। কিন্তু সম্ভ্রান্ত ঘরের মহিলাদের কাজ ছিল অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করা। উত্তেজনা যখন চরমে উঠত স্ত্রীদের সামনেই সম্ভ্রান্ত ঘরের পুরুষরা সবার সামনেই যৌনতায় মেতে উঠত। উপভোগ করত সাধার দর্শকরা। যৌন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নাচ এবং অন্তত একটি বাদ্যযন্ত্রেপারদর্শী হতে হত।,, ( চলবে)

পরবর্তী পর্ব আগামী সোমবার ১৪ জুলাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *