বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব : ১৮

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বেশ্যা পরিচয় যে শুধু বৈদিক সমাজ জীবন থেকে আজকের ২১ শতাব্দীর মেয়েদের বইতে হচ্ছে তা নয়। বৈদিক যুগের অনেক পরে রচিত পুরাণেও উল্লেখ হয়েছে। প্রথমে লিঙ্গপুরাণে নজর রাখা যাক। লিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রতীক। এই সম্বন্ধে বাংলা ও বাঙালি সাময়িক পত্রে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন সন্দীপ ঘোষ। তিনি লিখেছেন, শিবলিঙ্গ শব্দটি নিয়ে তন্ত্র ও পুরাণকাররা নিজেদের উৎকট রুচির পরিচয় তো দিয়েছেনই, সময় সময় তা নীল সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত বললেও অত্যুক্তি হয় না। লিঙ্গ অর্থে বহু কিছু ও শিব ও অবৈদিক দেবতা হওয়ার জন্য এই অশ্লীলতা অনেক ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। কালিকাপুরাণের মত উপ পুরাণের শ্লীলতা ছাড়ানো গল্প বাদ দিয়ে বলা যায় লিঙ্গ এখানের বিরাটের বিপরীত নুড়িমাত্র। কূর্মপুরাণে বিবাদমান ব্রম্যা বিষ্ণুর মাঝখানেও লিঙ্গ , প্রতীক পুরুষ চিন্হ নয়। পদ্মপুরাণে বর্ণিত ভৃগু কর্তৃক শিব পার্বতীর দীর্ঘ সময়কালীন বিহারে অধৈর্য হয়ে যোনিলিঙ্গ রূপ প্রাপ্ত হওয়ার অভিশাপও গল্প ধরে নেওয়া যেতে পারে। বামনপুরাণ, ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ ইত্যাদি সব পুরাণের কাহিনীর মূলে এক সামান্য এদিক ওদিক , শ্লীল – অশ্লীল _এর সহবস্থান সর্বত্রই।

লিঙ্গপুরাণে আছে ঋষি ও দেবতাগণের প্রশ্নের উত্তরে ব্রহ্মা জানান, প্রকৃতি হচ্ছে লিঙ্গ এবং সাক্ষাৎ পরম ব্রহ্ম হচ্ছে লিঙ্গী। প্রলয় মূহূর্তে এই লিঙ্গ আবির্ভূত হয়। বেশ্যা শব্দের সঠিক অর্থ সম্বন্ধে অবহিত না হয়েই আমরা শব্দটিকে ব্যবহার করি বটে কিন্তু চৌষট্টি কলায় পারদর্শিনী অসামান্য রূপবতী গুণবত শীলাবতী হলেও বাৎস্যায়নের মতে তাঁরা কুম্ভদাসী , রূপাজীবা, পরিচারিকা কুলটা , স্বৈরীণী, নটী, শিল্পকারিকা, প্রকাশবিনষ্টা ছাড়াও গণিকা হতে পারেন কিন্তু বেশ্যা নৈব নৈব চ। তন্ত্রে পূর্ণাভিষিক্তা শক্তিই বেশ্যা। ব্যভিচারিণী , কুলটা _ এঁরা বেশ্যা নন। কালী , তারা, ত্রিপুরা ইত্যাদি দশমহাবিদ্যা ও তাঁদের আবরণ দেবতাদের বেশ্যা বলা হয়।

প্রবন্ধকার সন্দীপ ঘোষ লিখেছেন , শাস্ত্রে বেশ্যা ভিন্নার্থক পরিভাষিক শব্দ। যে পণ্ডিতরা একে সমর্থন করেন তাঁদের মতে বেশ্যাদ্বার পুণ্যশোষী। যে পুরুষ বেশ্যাদ্বারে প্রবেশ করে তার সমস্ত পূণ্যবল ওই বেশ্যাদ্বার শোষণ করে নেয়। শ্রুতি সুখকর হলেও তা শাস্ত্রসম্মত নয়। বেশ্যা শব্দের বর্ণ বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় ব, ঋ, এ, ঝ, শ, ঋয, ঋ আ। শ্রী পঞ্চানন শাস্ত্রীর মতে, তন্ত্রাবিধানের বর্ণ বিধানে আছে _ ব= বাল্ বা নব, এ= শক্তি, শ= বৃষঘ্ন ( বৃষ যদি ধর্ম হয় তবে বৃষঘ্ন ধর্মহানি বোঝায়), য= কালী আ= প্রতিষ্ঠা। সব মিলিয়ে যা দাঁড়াল তা হল বালশক্তি বা নবজাতক সাধনা শক্তি সহায়ে বৃষঘ্ন বা ধর্মহানি ( দূর করে) কালী তত্ত্বে প্রতিষ্ঠিতা সাধিকাই বেশ্যা। শাস্ত্রের অপর ব্যাখ্যা ব = মাতা, এ= স্বয়ং ভগবতী, শ= বৃষঘ্ন বা ধর্মবাধা, য= সর্বেশ্বরীতে প্রতিষ্ঠাতা স্বাধিকাই বেশ্যা।( চলবে)

পরবর্তী পর্ব: ১৯ সোমবার ১৭ জুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *