পর্ব: ১৫
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: ১৪ তম পর্বের শেষে নারী গণিকা যে শুধু পুরুষের যৌনলিপ্সা পূরণ করেন , তা নয়। নারী সমকামী সেযুগেও ছিল। অনেক গণিকা জীবিকার কারণে পুরুষভোগ্যা হলেও ব্যক্তিজীবনে কোনো নারীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করাটা অস্বাভাবিক ছিল না । আজও নয়। সায়নী ব্যানার্জি প্রসঙ্গ নারী সমকাম গ্রন্থে প্রবন্ধ লিখেছেন ,,,,,,,,,, রামায়ণ – এর অন্য এক চরিত্র ভগীরথের জন্ম বৃত্তান্তে জানা যায়, রাজা দিলীপ তাঁর দুই নিঃসন্তান স্ত্রীকে ইহলোকে রেখে পরলোক গমন করলে বংশ রক্ষার উপায় হিসাবে স্বয়ং মহাদেব দুই রাণীকে উপদেশ দেন একে অন্যের সঙ্গে সম্ভোগে লিপি হতে, আর সেই সমলিঙ্গের যৌন ক্রিয়াজাত সন্তান হলেন ভগীরথ, যাঁর পুণ্যে ও সাধনায় গঙ্গা মর্ত্যে আসেন। আর মহাভারতে উল্লিখিত রাজা দ্রুপদের সন্তান নপুংশক শিখণ্ডী/ শিখণ্ডিনী এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তাঁকে ব্যবহার করে ভীষ্ম বধের কথা তো মহাকাব্যের বাইরে মানুষের মুখে মুখে প্রবাদে পরিণত হয়েছে ( শিখণ্ডী খাড়া করা)। এছাড়াও ভারতীয় পুরাণে আছে, দেবতা আইয়াপ্পার কথা, যাঁর জন্ম হয় মোহিনীরূপী বিষ্ণু ও মহাদেবের সম্ভোগের ফলে। সমকামিতা নিয়ে আবার পরে আসব।
রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ভগীরথের জন্ম রাজা দিলীপের দুই রাণীর যৌন মিলনে।
গনিকা,পতিতা কত নামে অভিহিত দেহ বিক্রেতা মহিলারা। সানন্দা সাময়িক পত্রিকায় ১৯৯১ সালের ১৮ এপ্রিল সংখ্যায় দেহোপজীবিনী বিষয়ে শিবাশিস বন্দোপাধ্যায় এক সাক্ষাৎকার নেন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ মঞ্চের সদস্যা, নারী সংগঠনের কর্মী, সমালোচক ও সমধর্মী বিষয়ের প্রাবন্ধিক মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়ের। শিবাশিস লিখেছেন,,,,,,,, তিনি একটি গল্প বললেন। ক’বছর আগে এক কনফারেন্সে এক ভারতখ্যাত সংগঠনের নেত্রী মন্তব্য করেন যে বেশ্যাবৃত্তি চালু থাকা উচিত কারণ তা হলে আমাদের মা বোনেরা অবাঞ্ছি কামনা লালসার হাত থেকে বেঁচে থাকে। যেসব স্বামীরা যৌন অতৃপ্ত, তাদের জনবধূদের কাছে যেতে দেওয়াই উচিত। তাতে মৈত্রেয়ী এবং মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত সমাজসেবী বিদ্যা বালা তীব্র প্রতিবাদ করেন। বিদ্যা বাল্ বলেন, আমার ঘর বাঁচাতে ,,, আই ডোন্ট অ্যালাউ ডিগ্রেডেশন অফ আদার উইমেন। মৈত্রেয়ী প্রশ্ন করলেন, ডি গ্রেডেশনের বাংলা এখানে তো পতিতাই হবে নাকি? একটু নগ্নভাবে বলি, মানুষ খায় কেন? খিদে মেটাতে, একটি মেয়ে বেশ্যা হয় কেন? নিজের মাংস বেচা ছাড়া তার বাঁচার আর কোনও রাস্তা আমাদের অতি সুসভ্য সমাজ করে দিয়ে পারে না বলে। তাহলে যাঁরা পতিতা বলছেন,তাঁরা জানোয়ারের তুলনায় উন্নত কিছু বলে আমি মনে করি না।
মুম্বাইয়ের পতিতাপল্লী।
সময়টা আগস্ট ১৯৯০,। প্রতিবেদক শিবাশিস লিখেছেন, আমরা আবার দুয়েকটা কেস স্টাডির কথা বলব। সেপ্টেম্বর ৪ ,১৯৮৮ সালে ইউ এন আইয়ের একটি রিপোর্ট পাচ্ছি। মূলত সাংবাদিক গবেষক শুক্লা রুদ্রর গবেষণাএই রিপোর্টটির সূত্র। শুধুমাত্র চাইল্ড প্রস্টিটিউট তথা নাবালিকা গণিকাদের ( সংখ্যায় তিন লক্ষের বিষয়) সম্বন্ধে এতে বলা হয়েছে। বম্বের সবচেয়ে বড় নারীবাজার কামাথিপুরার বাসিন্দা প্রায় ৫০০০০ গনিকার মধ্যে ২০ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্কা।১৫ শতাংশ হচ্ছেন কর্নাটকে বহুল প্রচলিত দেবদাসী প্রথার শিকার। মুখ্যত যেসব জায়গা থেকে এরা পাচার হয়ে আসেন, সেগুলি হল ১) ঢোলাপুর – রাজস্থান ২) বসাই খুর্দ- উত্তরপ্রদেশ ৩) জাঙ্গল পিঠ ও হায়দ্রাবাদ- অন্ধ্রপ্রদেশ,৪) pune- মহারাষ্ট্র ৫) মজ : ফরপুর- বিহার ৬) ভুবনেশ্বর – ওড়িশা,৭) মাণ্ডি – হিমাচল। মাদ্রাজের গ্রাস রুট অ্যাকশন পত্রিকা ও ইন্ডিয়া টু ডের সমর্থিত তথ্য অনুযায়ী ধর্মের মোড়কে বেশ্যাবৃত্তি আধুনিক ভারতের ঐতিহ্য।প্রতি বছর মার্গ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেবী ইয়েলাম্বার উদ্দেশ্যে কর্নাটকে বেলগাঁও জেলায় অসংখ্য মাইনর মেয়ে উৎসর্গীকৃত হয়। গরু ভেড়ার মত এখানে মেয়ে বিক্রির হাট বসে। তাদের বিশ্বাস করানো হয় যে তুমি জন্ম থেকেই পুরুষের আনন্দের জন্য বলিপ্রদত্ত , অতএব বেশ্যা হও।( চলবে)
কর্নাটকে দেবী ইয়েলাম্বার মন্দিরে মেয়ে উৎসর্গ করে দেহব্যবসায় নামানো হয়।
আগামী পর্ব: ১৬ ,১ জুন শনিবার।