*
শ্রীজিৎ চট্টরাজ : মানুষ ও জন্তুর মধ্যে প্রধান প্রভেদ এই যে মানুষ নেশা করিতে শিখিয়াছে, জন্তু শেখে নাই। বিড়াল দুধ মাছ খায়, ঔষাধার্থে ঘাস খায়, কিন্তু তাকে তামাকের পাতা বা গাঁজার জটা চিবাইতে কেউ দেখা নাই। মানুষ অন্ন বস্ত্রের সংস্থান করে, ঘর সংসার পাতে, জীবন ধারণের জন্য যা- কিছু আবশ্যক সমস্তই সাধ্যমত সংগ্রহ করে, কিন্তু এতেই তার তৃপ্তি হয় না – সে একটু নেশাও চায়,,,,,,,,,, তামাক আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গেই তার নিন্দক জুটিয়াছে। তামাক খাইলে ক্ষুধা নষ্ট হয়, বুদ্ধি জড় হয়, হৃদপিন্ড দূষিত হয় ইত্যাদি। কিন্তু কে গ্রাহ্য করে? জগতের আবাল বৃদ্ধ তামাকের সেবক , বনিতারাও হইয়া উঠিয়েছেন। তামাকের বিরূদ্ধে যেসব ভীষণ অভিযোগ শোনা যায়, তামাক খোর তার খণ্ডনের কোন প্রয়াসী করে না, শুধু একটু হাসে ও নির্বিকার চিত্তে টানে।,,,,,,,,,,একটু না হয় ক্ষুধা কমিল, চেহারায় পাক ধরিল , হৃদ পিণ্ড ধড়ফড় করিল কিন্তু আনন্দটা কি কিছুই নয়? মোটের উপর লাভটাই আমাদের বেশি। লোকসানের মাত্রা যদি বেশি হইত , তবে আপনিই আমরা ছাড়িয়া দিতাম উপদেশের অপেক্ষা রাখিতাম না।,,,,,,,,, সমাজহিতৈষী মহাশয় হতাশ হইয়া বলিলেন , তবে মর তোমরা পীত্বা পীত্বা পুন: পীত্ব। দিনকতক যাক , তারপর বুঝিব কার পরমায়ু কত কাল। বিবিধ রচনা প্রবন্ধে ১৯৪৯ সালে লিখেছিলেন রাজশেখর বসু। এক সাক্ষাৎকারে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অকপট স্বীকারোক্তি দেন আমি ভাত খাই কেন জানো, ভাত খাওয়ার পর একটা সিগারেট খাব বলে। তামাকের পক্ষে কুযুক্তিও সাহিত্যের ভাষায় প্রকাশ পায়। ছেলেবেলায় নরেন ভিন্ন জাতের মানুষের গড়গড়াতে মুখ দিয়ে পরীক্ষা করতে চেয়েছিল জাত যায় কি না। মজার ব্যাপার, অন্যের মুখের জিনিস কেউ না খেলেও স্কুল কলেজে বন্ধুর আড্ডায় সিগারেটের কাউন্টার নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত আশির দশকের শুরু পর্যন্ত। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ধারণা ছিল মানুষ তামাক ব্যবহার করছেসাড়ে তিনহাজার বছর আগে থেকে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটায় মরুভূমিতে ইউ এস এয়ারফোর্সের ঘাঁটিতে পাওয়া গেছে প্রাগৈতিহাসিক কিছু নিদর্শন। যা কিনা পোড়া কিছু তামাক বীজ। ন্যাচার হিউম্যান বিহেভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই অঞ্চলের অধিবাসীরা তামাক চিবিয়ে খেতে অভ্যস্ত ছিলেন প্রায় সাড়ে বারো হাজার বছর আগে থেকে। তামাক পাতার নিকোটিন জিনের মধ্যে নেশার ক্রিয়া ঘটায়। এক সময়ে তামাক পাতা ছিল টাকার বিকল্পের বিনিময় বস্তু। সেই তামাকের নেশায় মানুষ যত অসুস্থ হচ্ছে নষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রের শ্রমশক্তি।
অথচ তামাক যে জীবনের জন্য ক্ষতিকর সেকথা বিজ্ঞান জানালো এই তো সেদিন।১৯৫০ সালে বিজ্ঞানী রিচার্ড ডল ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে জানালেন ধূমপান ও ফুসফুসের ক্যান্সারে একটা সম্পর্ক আছে।১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি নামক আরেকটি গবেষণা প্রকাশ করে। বলা হয় ২০ বছরের গবেষণায় চল্লিশ হাজার চিকিৎসকের গবেষণায় তামাকের সঙ্গে ক্যান্সারের যোগ প্রমাণিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় বিশ্বে প্রতি বছর ৬০ লাখ লোক মারা যান তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে। এঁদের মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৬ লক্ষ মানুষ। ভারতে এই সংখ্যা ১.৩৫ মিলিয়ন। অন্যদিকে ভারতই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তামাকের ভোক্তা। বিশ্ব জুড়ে তামাকের কারণে মৃত্যুর হার যে বাড়ছে শুধু নয়, তামাকের ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণও সংকট ডেকে আনছে। প্রতি দশজন একজনের মৃত্যু হচ্ছে তামাকে।এই প্রেক্ষিতে হু প্রতি বছর ৩১ মে বিশ্ব তামাক বর্জনের দিন ধার্য করেছে। পিছিয়ে নেই ভারতও। কলকাতার ডিসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই প্রথম ১৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মুখিয়ে ক্যান্সার সনাক্তকরণ শিবিরের আয়োজন করেছে । বেসরকারি হাসপাতালের উদ্যোগে এই প্রথম তামাক বিরোধী শিবির পরিচালনা করছেন। যেখানে চিকিৎসকেরা মুখের ক্যান্সারের প্রাথমিক চিহ্নিত করছেন। শিবিরের উদ্বোধন করেন পূর্ব রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র। শিবিরের প্রথম দিনেই প্রায় তিনশ পরিবার বিনামূল্যে পরীক্ষা পরিষেবা গ্রহণ করেছেন। বুধবার বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন হাসপাতালের গ্রুপ ডিরেক্টর শাওলি দত্ত।
শাওলি দত্ত বলেন , ক্যান্সার চিকিৎসার পাশাপাশি দরকার প্রতিরোধ সচেতনতা। সজল দত্ত প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালে ৭৫০ শয্য্যার। এরমধ্যে ক্যান্সারের জন্য নির্দিষ্ট ১০০ শয্যা। শিলিগুড়িতে আছে ৩০০ শয্যা। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের প্রতিটি শর্ত আমরা পূরণ করে পরিষেবা দিয়ে থাকি।৩১ মে তামাক বর্জন দিবস উপলক্ষে ১৫ মে থেকে পক্ষকালের পরীক্ষা ও মুখের ক্যান্সারের সচেতনা শিবির আয়োজন করেছি বিনামূল্যে। ক্যান্সারের প্রথম অবস্থায় উপসর্গ মানুষ অবহেলা করেন। ফলে বিষয়টি গুরুতর হয়ে ওঠে।৪৫ টিরও বেশি বিভাগ নিয়ে আমরা পরিষেবা দিচ্ছি। আমাদের রয়েছে সেরা চিকিৎসকের তালিকা। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখের ক্যান্সার , তার চিকিৎসা ও সচেতনা নিয়ে বক্তব্য রাখেন ডা: আশীষ উপাধ্যায়, ডা: রামানুজ ঘোষ, ডা,: সমুজ্জ্বল দাস, ডা,: শ্রেয়া মল্লিক, ডা: অতুল নারারাও রাউত ও ডা: মনোরঞ্জন চৌহান প্রমুখ।