দেখো আমার বাংলা, বর্ষবরণ ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের অব বেঙ্গলের

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক: জিনগত ভাবে মানুষ ভ্রমণপ্রিয়। ১৯ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাঙালি ভ্রমণে নয়, চেঞ্জে যেত মূলত চিকিৎসকের পরামর্শে। আর ছিল তীর্থযাত্রা । ভ্রমণ শব্দটির জনপ্রিয়তা বাড়ে সত্যজিতের কাঞ্চনজঙ্ঘা আর তপন সিংহের নির্জন সৈকতে ছবির প্রভাবে। সঙ্গী হত বেডিং হোল্ডঅল, ফ্লাক্স এমনকি কেরোসিন স্টোভ পর্যন্ত।। এরপর ইউরোপিয়ান কায়দায় বাঙালি ট্যুরিস্ট হয়ে ওঠে। কেউ পছন্দ করেন পাহাড় , তো কেউ সমুদ্র। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন, অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ। কবি নীরেন্দ্র চক্রবর্তী লেখেন সবাই এখন ছাড়ছে ঘর, কেষ্ট , বিষ্টু, মহেশ্বর। ব্যাপার দেখে হচ্ছে শখ, আমিও হব পর্যটক। বয়স্করা বিভিন্ন স্পেশাল পর্যটন ব্যবসায়ীদের তত্ত্বাবধানে ভ্রমণে যেতেন । এখনও যান। বিজ্ঞানের অবদানে পৃথিবীটা এখন একটা গ্রাম হয়ে গেছে। বাঙালি ইতিমধ্যে ভ্রমণ ব্যবসায় উদ্যোগী হয়েছেন। দেশের সীমা পেরিয়ে বাঙালি এখন বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে। পাশাপশি এই সব ভ্রমণ সংস্থাতেও ভরসা রাখছেন। সত্যি বলতে কি, কম খরচে নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় পেশাদার ভ্রমণ ব্যবসায়ীরা ভ্রমণপিপাসুদের সঠিক পরামর্শ শুধু নয়, নিরাপত্তা দিয়ে ঘুরিয়ে আনছেন গ্রাহকের সামর্থ মত।

পর্যটনএখন শিল্প। কবি ডি এল রায় বলেছিলেন এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। বাংলার মানচিত্রে রয়েছে হিমালয়, রয়েছে সমুদ্র। রয়েছে বহু তীর্থস্থান ও ঐতিহাসিক স্থান। রয়েছে বারো মাসে তেরো পার্বণ। বহু বাঙালি এখনও নিজের রাজ্যের এলাকাগুলি ঘুরে দেখেননি। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। সরকারি পর্যটন দপ্তরও উদ্যোগী হয়েছে। কলকাতার ট্যুরিজিম ব্যবসায় জড়িত ব্যবসায়ীরা গড়েছেন নিজেদেরসংগঠন ট্রাভেলস এজেন্টস এসোসিয়েশন অব বেঙ্গল। সোমবার বিকেলে কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজন করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। ট্যাগ লাইন দিয়েছে দেখো আমার বাংলা। গত করোনা পরিস্থিতিতে ভ্রমণ শিল্পে পড়েছিল ভাঁটা। অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এবং দৈনন্দিন জীবনের খরচ বাঁচিয়ে মানুষ পর্যটন বাবদ সঞ্চয় করেন। আশার কথা, পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে বাংলার পর্যটন শিল্প আবার প্রাণ পেতে চলেছে।

এদিনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যটন ব্যবসায়ীদের সাফল্যের নিরিখে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। সম্বর্ধিত হন রাজ্য পর্যটন শিল্পের আধিকারিক। পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কৌশিক কর জানান, এখন ইন্টারনেটের যুগ । অধিকাংশ মানুষ অনলাইন ব্যবস্থায় ভ্রমণ পরিকল্পনা করেন । পর্যটন ব্যবসায়ীদেরও ডিজিটাল ব্যবস্থায় দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা যেমন নিজেদের ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের সুযোগ সুবিধের কথা বেশি করে ভাবতে হবে। গঠনমূলক পরিকল্পনায় বাংলার ইতিহাস সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। লক্ষ্য সুন্দরবন থেকে সান্দফু।বিভিন্ন হোটেল, হোম স্টে ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীদের জল সংরক্ষণের সচেতনতা পৌঁছে দিতে হবে। সচেতনতার বার্তা দিতে হবে পরিবেশ দূষণ মুক্ত থাকার। অবহেলায় বাংলার সংস্কৃতি এখন ম্লান। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, লোক শিল্পকে পৌঁছে দিতে হবে। সরকারি পর্যটন প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় ট্যুরিস্ট সংস্থাগুলিকে অগ্রণী হতে হবে। বাংলার ছৌ, গম্ভীরা চাদর বদর, ভাওয়াইয়া ও রায় বেঁশের মত বীররসের নৃত্য পৌঁছে দিতে হবে। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রেস ক্লাবের সবুজ লনে বীরভূমের রায়বেঁশে শিল্পীরা তাঁদের শৈলী পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানান সংগঠনের সহ সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *