সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : ১৭ এপ্রিল। এই বছর এই দিনে রামনবমী পালিত হতে চলেছে। অথচ কেন্দ্রীয় অনুমোদিত এক গবেষণা কেন্দ্র বলছে, রামের জন্ম ৪ ডিসেম্বর। সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। কিন্তু রামায়ণের রচনায় তিথি মেনে বহুদিন ধরে এপ্রিল মাসে রামের জম্মদিন পালিত হচ্ছে। এবারও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন অস্ত্রমিছিল করে জাঁকজমকভাবে পুরুষোত্তম রামের জন্মদিন পালন করবেন। করোনা পরিস্থিতিতে জমকালো ভাবে রামনবমী পালন না করার দুঃখ, এবার রাম ভক্তরা সুদে আসলে পুষিয়ে নেবেন। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত এবার ভক্তদের উৎসাহ আরও বেশি। কারণ অযোধ্যায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। তবে নিন্দুকরা বলেন, রামের প্রতি শ্রদ্ধার চেয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির এক কৌশল ছাড়া বিষয়টি আর কিছু নয়। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০১৮ র ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজ্যের কয়েকটি প্রাচীন ধারায় সংগঠিত মিছিল ছাড়া অস্ত্র নিয়ে মিছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু সেবছর উৎসব শান্তিপূর্ণ হয়নি। সাম্প্রদায়িক উস্কানির বলি হন এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র। চরম সংযমের পরিচয় দিয়ে নিহত পুত্রের পিতা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, রক্তের বদলা রক্ত নয়। কারোর বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগও জানান নি।
তবে বেশ কিছু মুসলিম সংগঠনের সঙ্গে রাজ্যের এক ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াহিয়া সেই ঘটনার জন্য তৎকালীন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে দায়ী করেছিলেন। এবার সেই বাবুল যখন তৃণমূলে যোগ দিয়ে বালিগঞ্জ কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে বিধানসভার নির্বাচনে প্রার্থী হলেন, সেই সব সংগঠন আন্দোলনে দাবি তুললেন, ছাত্রের খুনে হাত রাঙিয়েছেন যে বাবুল, তাঁকে যেন মানুষ ভোট না দেয়। সেবারেও রামনবমী উদযাপন যে শুধু বিজেপি বা হিন্দুত্ববাদী সংগঠন করেছে তা নয়। রাজ্যের শাসকদলের উৎসাহীরাও রামনবমী পালন করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন হাম কিসিসে কম নেহি। সূত্রের খবর, আগামীকাল রাজ্য জুড়ে বিজেপি যেমন একহাজার শোভাযাত্রা করবে, তেমন দলীয় পতাকা ছাড়া তৃণমূল দলের সমর্থকরাও শোভাযাত্রার আয়োজন করছে। পর্যবেক্ষকদের অনুমান, সামনে লোকসভা নির্বাচন। তাই হিন্দু ভোট জড় করতে দুদলের এই প্রয়াস। ২০১৮ তে আমরা বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে দেখেছি ত্রিশূল হাতে দুর্গা সেজেছিলেন । সেই বছর তৃণমূল নেতা সৌরভ চক্রবর্তীকে দেখা গেছে এক বিজেপি নেতার সঙ্গে পা মিলিয়ে রামনবমীর মিছিলে হাঁটতে। যাদবপুরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই এ ভি বি পি সমর্থিত ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রামনবমী পালনের অনুমতি দিয়েছে।।এবার অবশ্য রাজ্যের উচ্চ আদলত জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো অস্ত্র নিয়ে মিছিল হবে না। একটি মিছিলে ২০০ র বেশি লোক মিছিলে থাকবে না।সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক শ্লোগান দেওয় যাবেনা না। তবু আশঙ্কা থেকেই যায়, দেশের কথা থাক আগামীকাল রামনবমী এরাজ্যে শান্তিপূর্ণ ভাবে পালিত হবে তো?
আসলে ভোট বড় বালাই। সে প্রসঙ্গ না হোক উহ্য থাক। ফিরে যাই রামনবমী প্রসঙ্গে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, হিন্দি গো বলয়ের আর্য সংস্কৃতির আগ্রাসন ঘটাতেই বাংলার অনার্য সংস্কৃতিকে গিলে খাওয়ার এক কৌশলী প্রচেষ্টা। বাংলায় রামনবমীর প্রাক্কালে বাংলার মানুষ কিন্তু মেতে থাকবেন অন্নপূর্ণা পুজোয় এবং বাসন্তী পুজোয়। কিন্তু রামনবমী পালনের ঘটনাকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। আসুন বরং দেখা যাক, রামচন্দ্র প্রসঙ্গ। মূলত পুরানকে অবলম্বন করেই রাম ভক্তরা রামচন্দ্রকে বিষ্ণুর অবতার বলে মানেন। অবতার কাকে বলে? সুধীর চন্দ্র সরকার সংকলিত পৌরাণিক অভিধান বলছে, দেবতারা সময়ে সময়ে মনুষ্য মূর্তি পরিগ্রহ করে পৃথিবীতে আগমন করেন। স্বয়ং ভগবান (পূর্ণ ব্রহ্ম) বা তাঁর অংশে জীবদেহ পূর্ণাবতার বা অংশাবতার রূপে ধরাধামে অবতরণ করেন এবং অধর্মের নাশ (?) ধর্ম সংস্থাপন এবং জীবোদ্ধার করেন। রামায়ণের সমাজ গ্রন্থে কেদারনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, রামের অবতারভুক্তি বুদ্ধদেবকে অবতারভুক্তি করার পর । সে এক রহস্য। এই প্রতিবেদনে যা বলতে গেলে প্রতিবেদন দীর্ঘ হয়ে যাবে।পাঠকের অনুরোধ পেলে বারান্তরে জানাবার ইচ্ছে রইলো।
বিজ্ঞাপন
কিছু গবেষকদের ধারণা, রামায়ণের রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় বা দ্বিতীয় শতক। কেউ বলেন, চতুর্থ শতক। লক্ষ্য করবেন, কৃষ্ণের জন্মদিনে কেন্দ্রীয় ছুটি।রামনবমীতে নয়। অবশ্য রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছেন। আবার বলি ভোট বড় বালাই।২০১৫ তে ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চের তরফে এক প্রদর্শনী হয় দিল্লিতে। উদ্বোধন করেন কেন্দ্রের তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা। প্রদর্শনীর নাম ছিল ঋকবেদ থেকে রোবোটিক্স। ইনস্টিটিউটের ডাইরেক্টর সরোজ বালা জানান, ৭হাজার টাকা দিয়ে তাঁরা একটি সফটওয়্যার আনান আমেরিকা থেকে। সেই সফটওয়্যার থেকেই নাকি জানা গেছে, রামের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৫১১৪ বছরে ১০ জানুয়ারি বেলা ১২ টা ৫মিনিটে। এর আগে ড: পি ভি বর্তক জানিয়েছিলেন, রামের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৭৩২৩ এর ৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার। বনবাস ৭৩০৬ খ্রিস্টপূর্ব ২৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ,দশরথের মৃত্যু খ্রিস্টাব্দপূর্ব ৭৩০৬ এর ৫ ডিসেম্বর,রাবণের মৃত্যু ৭২৯২,১৫নভেম্বর, রবিবার। তাহলে এপ্রিল মাসে রাম নবমী? হিসেব কি মিলছে? ( শেষ পর্ব আগামীকাল)