পর্ব :৩
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায: বেশ কয়েকদিন কেটে গেল সি এ এ চালু হয়েছে। প্রথম কয়েকদিন সি এ এ বিরোধী কণ্ঠ শোনা গেছে বাম, কংগ্রেস ও রাজ্যের শাসক দলের । কিন্তু ভোটের পারদ যত চড়ছে তত সেই কণ্ঠ স্থিমিত । কারণ? নিজে বাঁচলে বাপের নাম। কে বেনাগরিক হবে সেটা পরে ভাবলেও চলবে। এখন ৪২ টি সিটের কতগুলি ঝুলিতে পোরা যায় সেটাই লক্ষ্য। এই সি এ এ ও এন আর সি নিয়ে যিনি বেশি সোচ্চার হয়েছিলেন তিনি সংসদীয় বাও কটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বহীনতায় তীব্র আক্রমণ করেছিলেন। তবে এই মূহুর্তে তাঁর বক্তব্যে কিঞ্চিৎ বদল দেখা গেল। গেল। এখন সেই প্রতিবাদী মুখ মানিক ফকির বলছেন,, জনতা যেন তৃণমূল কংগ্রেসকেই ভোট দেন। কারণ তৃণমূল একমাত্র সি এ এ বিরোধী বক্তব্যে স্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করচে। মানিক বাবু বলেছেন, মমতা ব্যানার্জি একমাত্র বলছেন, আমরা সবাই নাগরিক। আমাদের অন্ধের লাঠি মমতা। ভুলে গেলে চলবে না আমাদের সংবিধান ১৯৪৮ এর আগে যাঁরা এসেছেন তাঁদের জন্য । ফর্ম ফিলাপ করা তো পরের কথা,, পোর্টাল নিজের আই ডি দিয়ে খুললেই বাঙালি ফেঁসে যাবে। এই রাজ্যে একমাত্র বাঙালি আন্দোলন করতে পারে রাজ্যে মমতা সরকার আমাদের নেপথ্যে সমর্থন করছে বলে। অভিষেক ব্যানার্জি আইন বাঁচিয়ে যতটা সম্ভব বুঝিয়েছেন ওঁরা আমাদের সঙ্গে আছেন। কয়েকদিন আগে রাজ্য সরকারের এক মন্ত্রী শোভনলাল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হল । উনি আমার বই পড়ে বলেন অকিশ্বাস্য ঘটনা ঘটছে।
মানিক ফকির বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে কেন্দ্রীর আইনের বিরোধিতা করার সাহস দেখিয়েছেন এর জন্য উনি গ্রেপ্তারও হতে পারেন ৷ তবে সেই পরিস্হিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা উনি রাখেন। বিজেপির টার্গেট এবার ভোটে জিতে জিতে এলে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষনা করবে ৷ তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে সি এ এ লাগু করে মুসলমানদের অধিকার কেড়ে বাঙালিকে দুভাগে ভাগ করে দিচ্ছে ৷ শুধু হিন্দুরাষ্ট্র নয, মনুস্মৃতি চালু করে বাঙালিকে দাস শ্রমিক বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। রাজ্যের অন্য বিরোধী দল আই এস এফএবং কংগ্রেস ওবামেরা এখনও তেমন ভাবে উদ্বাস্তুদের পাশ দাঁড়ায়নি৷ আসামে সি এ এ সমর্থন করছে এখানে মহম্মদ সেলিম আমাদের আন্দোলনে পাশে থাকব বলেও সরে গেছেন। আসামে বাঙালি এখন বলির পাঁঠা। বহু অহম সম্প্রদায়, কার্বি ও জনজাতি তো বটেই ,২৫ হাজার বাঙালি মুসলিম এখন বেনাগরিক। মুসলমান বাঙালি এখনও বুঝতে পারছে না আসামে ইউ সি সি চালু হয়ে গেছে । অর্থাৎ ইউনিভার্সাল সিভিল কোড। ফলে নামাজ যাকাত, কুরবানী বাতিল। অমিত শাহ বলেই দিয়েছেন উদ্বাস্তু মানে উইপোকা। তিনি বলেছেন, সব শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এটা ভাঁওতা। কেননা সংবিধানে শরণার্থী বলে কোনো শব্দ নেই।এই মূহুর্তে বাস্তব সত্য এটাই,৩১ হাজার ৩০৪ জন মাত্র এ রাজ্যে ওপার থেকে আসা বৈধ নাগরিক।
মানিক ফকিরের আরও বক্তব্য,১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ আইন করে দেশের মূলনিবাসী আদিবাসীদের এক সম্পদাযকে ভারতীয়_ ক্রিমিনাল বলেছে। অবৈধ বলেনি। কিন্তু উদ্বাস্তুদের বলা হয়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ৷ বাঙালি নিধন যজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে ৷একবার তাকানো যাক ১৩ মার্চ,২০২৪ আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায়। অনিন্দিতা ঘোষাল লিখেছেন একদিকে বাংলাদেশ, পাকিস্থান, এবং আফগানিস্থান থেকে আসা হিন্দু, শিখ , জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিষ্টানদের নির্যাতিত অমুসলিম অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য আইন চালু হয়ে গেল। অন্যদিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিলেন যে ২০১৫ সাল থেকে রাষ্ট্রের তৈরি অগ্নি পরীক্ষার এতগুলো পর্যায়ে অবতীর্ণ হয়েও প্রায় সারে ২৬ লক্ষ অসমের মানুষ এখনও আধার কার্ড হাতে পাননি এবং ১৯ লক্ষ লোক এন আর সি লিস্টে নাম তুলতে পারেননি। মজার ব্যাপার হল এই সাড়ে ২৬ লক্ষের মধ্যে অনেকের নাম এন আর সি র ফাইন্যাল বা সাপ্লিমেন্টারি লিস্টে থাকা সত্বেও আধার কার্ড আজ অবধি তাঁরা হাতে পাননি, এবং ১৯ লক্ষ লোক এন আর সি লিস্টে নাম তুলতে পারেননি। মজার ব্যাপার হল এই সাড়ে ২৬ লক্ষের মধ্যে অনেকের নাম এন আর সি’ র ফাইন্যাল বা সাপ্লিমেন্টারি লিস্টে থাকা সত্বেও আধার কার্ড আজ অবধি তাঁরা হাতে পাননি। অথচ কেন্দ্র ও রাজ্যে ডাবল ইঞ্জিন বিজেপি সরকার অনেকবার প্রকাশ্যে বলেছে, আধার কার্ড থাকা বা না থাকার সঙ্গে নাগরিকত্বের কোনো যোগাযোগ নেই। বিশেষ উদ্বেগের বিষয় অসমের জনগণ বিশেষ করে সুরমা বা বরাক ভ্যালির বাঙালিদের নাগরিকত্ব , ডি ভোটার এন আর সি প্রস্তুত করার দাবিতে ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টে প্রথম জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিল। প্রতিবেদক প্রতিবেদনটি শেষ করেছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে। তিনি লিখেছেন গোটা সমস্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা। কেউ অর্ধে সত্য জানেন , কেউ কিছুই জানেন না। কেউ সমস্যার কথা জানেন না। দেখশুনে মনে হয় , সরকারও চায় না ধোঁয়াশা কাটুক।