পর্ব:১৬৯

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : শিবমিশ্র উল্কার বয়স যখন ১৬ বছর পূর্ণ হলো তাকে তার প্রকৃত পরিচয় জানিয়ে বললেন, তুমি বিষকন্যা, তোমার উগ্র রূপ দিয়ে পুরুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা অর্জন করেছ, বন্দী রাজা চণ্ডকে মাতৃহত্যার কারণে হত্যা করো। উল্কাকে পাটলিপুত্রে পাঠানো হলো। এরপর হত্যার তালিকায় ছিলেন রাজা সেনজিৎ। সেনজিৎ ছিলেন নারী সম্পর্কে উদাসীন। কারণ তিনি ছিলেন নারীসঙ্গ সম্পর্কে ভীত। উল্কা সেনজিৎ এর সরলতায় দূর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শিবমিশ্রের লক্ষ্য পূরণ হলো না।

রাজা সেনজিৎ ও বিষকন্যা উল্কা।
লেখক তাঁর নিবন্ধে লিখলেন, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র কূটনীতির কট্টর শাস্ত্র, যেখানে রাজা , সেনাপতি, বিষকন্যা সকলেই প্রায় অবয়বহীন। পক্ষ- প্রতিপক্ষ কারও মনের হৃদয়ের সন্ধান পাওয়া যায় না। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে রাজা সেনজিৎ আর বিষকন্যা উল্কা দুজনেই রক্তমাংসের মানুষ। অন্তর্দ্বন্দ্বে দীর্ণ তাদের হৃদয়। দৈহিক লালসা নয়, প্রেমের জোয়ারে ভেসে গেছেন রাজা সেনজিৎ আর বিষকন্যা উল্কা দুজনেই। উল্কার প্রকৃত পরিচয় পাওয়া সত্ত্বেও সেনজিৎ উল্কার প্রেমে পাগল। অন্যদিকে উল্কা শত্রুপক্ষের রাজাকে অনুকূল পরিবেশে পেয়েও তার বুকে ছুরি না বসিয়ে নিজের বুকে বিদ্ধ করেছে ছুরি।, ঘাতক হয়েছে আত্মঘাতী।

প্রেমের কাছে পরাভব মেনেছে সব ষড়যন্ত্র, কূটনীতি, প্রতিহিংসা আর জিঘাংসা। শিকার- শিকারীর অবস্থানের ভূমিকার এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে যা রাষ্ট্রনীতিতের হয়তো অসম্ভব কিন্তু সাহিত্যের আঙিনায় সম্ভব। উল্কার মৃত্যুর, বিষকন্যার মৃত্যু, কিন্তু চিরন্তন প্রেমিকার শাশ্বত উত্থান। এক হয়ে গেছে প্রেম আর মৃত্যু। অনন্য এই উত্তরণ, আশ্চর্য এই সমাপন। (চলবে)
আগামী পর্ব ১ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৫

