পর্ব:১৬৮

প্রাচীন বৈশালী নগর।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বেশ কয়েকটি পর্বে বিষকন্যা নিয়ে বলছি। শিব মিশ্র কন্যাটির নাম রাখেন উল্কা। তাকে নিয়ে গঙ্গার অপরপাড়ে লিচ্ছবী দেশে বৈশালীতে পলায়ন করেন। প্রজাপীড়ক অত্যাচারী নিষ্ঠুর রাজার বিরুদ্ধে প্রজারা বিদ্রোহ করে। গর্জমান চণ্ডকে সিংহাসন থেকে টেনে নামানো হয়। তাঁর মণিবন্ধ পর্যন্ত হাত কেটে ফেলা হয়। জঙ্ঘাগ্রন্থি থেকে পা দুটি কেটে নেওয়া হয়। তারপর তাকে পিঞ্জরবদ্ধ করে রাখা হয়। যাতে প্রজারা রোজ তাঁকে অপমান করতে পারে। ড: গৌরীশঙ্কর দে তাঁর বিষকন্যা নিবন্ধে লিখেছেন, শিব মিশ্র বৈশালীতে সাদরে গৃহীত হয়েছিলেন। তাঁকে সম্মানে মন্ত্রণাদাতা সচিবের পদে নিযুক্ত করা হয়। আর তাঁর গৃহে সেই শ্মশানলব্ধ অগ্নিকন্যা সাগ্নিকের যত্নে বর্ধিত হয়ে উঠতে থাকে। শিব মিশ্র শিশুনাগবংশের এই বিষকণ্টক দিয়েই শিশু নাগবংশের উচ্ছেদ সাধনের পরিকল্পনা করতে থাকেন।

রাজ বিদ্রোহে রাজা অপসারণেও বিষকন্যা ব্যবহৃত হত।
উল্কার বয়স যখন যেদিন ষোড়শ বৎসর পূর্ণ হল, শিব মিশ্র তাকের তার প্রকৃত পরিচয় জানিয়ে বললেন, তুমি বিষকন্যা; তোমার উগ্র আলোকসামান্য রূপ তাহার নিদর্শন। পুরুষ তোমার প্রতি আকৃষ্ট হইবে, পতঙ্গ যেমন অগ্নিশিখার দিকে আকৃষ্ট হয়। তুমি যে পুরুষের কোন্থলগ্না হইবে তাহাকেই মরিতে হইবে।,,,,, বর্তমান রাজা সেনজিৎ ব্যসনপ্রিয় যুবা, শুনিয়াছি রাজকর্মে তাহার মতি নাই; সর্বপ্রথম তাহকের অপসারিত করিতে হইবে।

বিষকন্যা উল্কার দ্বিতীয় শিকার রাজা সেনজিৎ।
উল্কাকে লিচ্ছবি রাষ্ট্রের প্রতিভূস্বরূপ পাটলিপুত্রে প্রেরণ করা হল। উল্কা প্রথমে বন্দী রাজা চণ্ডকে হত্যা করে মায়ের প্রতি নৃশংস ব্যবহারের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে। জীবন্মৃত অপমানিত ব্যবস্থা থেকে চণ্ডকে মুক্তি দিয়েছিল তাকে হত্যা করে। উল্কার পরবর্তী আক্রমণের লক্ষ্য ছিল রাজা সেনজিৎ। কিন্তু তিনি ছিলেন নারীজাতি সম্পর্কে বিতৃষ্ণ, ভীত। রাজার নারী বিদ্বেষ উবে গেল উল্কার সঙ্গে পরিচয়ের পর। মহারাজ মনে মনে উল্কার প্রতি অনুরক্ত হয়ত পড়লেন। তারপর? (চলবে)
পরবর্তী পর্ব, আগামী শুক্রবার ২৮ নভেম্বর,২০২৫

