পর্ব: ২
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : এই মূহুর্তে দেশের সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলি বাম ডান নির্বিশেষে এখনও হয়ত সি এ এ , এন আর সি বিষয়টি বোঝেননি , নয়ত বুঝেও বুঝতে চাইছেন না। জনগণের কথা নাই বা ধরলাম। সমীক্ষা ও সরকারি তথ্যে সাক্ষরতার হার বলা হচ্ছে ৭৫ শতাংশ। এই সমীক্ষায় কেরল এক ছোট্ট রাজ্য ,২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে কেরল ৯৪ শতাংশ সাক্ষর। জানা দরকার, সাক্ষর আর শিক্ষিতের হার এক নয়। সাক্ষর ব্যক্তি শিক্ষিত হবেন এমন কোনো মানে নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ভারতে সার্টিফিকেট দিয়ে শিঅতক্ষিতের অনুমান করা হয়। কিন্ত চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা যায় রাস্তায় যদি একশ জনকে জিজ্ঞাসা করা হয় সি এ এ কি এবং এন আর সি কি শতকরা ৯৮ শতাংশ বলতে পারবেন না বিষয়টি খায় না মাথায় দেয়?
রাজনৈতিক নেতাদের দ্বিতীয় ওতৃতীয় ধাপে আছেন তাঁরাও বোঝেন না বিষয়টি। রচতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়া। প্রশ্ন করে দেখতে পারেন একশ জনের মধ্যে স্বচ্ছ ধারণা ৯৫ জনেরও নেই । আর যাঁরা বোঝেন তাঁরা চাকরি করেন পেটের দায়ে। সংবাদ মাধ্যম মালিক যেভাবে জনগণকে বোঝাতে বলেন তাঁরা সেই ভাবে বোঝান। দিগদর্শন কোনো রাজনৈতিক দলের হাতের পুতুল নয়। সুতসাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে পরোয়া করে না। এতদিন সি এ এ ও এন আর সি সম্পর্কে বিভিন্ন মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের বাতেলা শুনেছেন। মিলিয়ে নিন দিগ্ দর্শনের প্রতিবেদনের সঙ্গে ।
প্রথমে জেনে রাখুন বাংলা ভাগ হয়েছে দ্বিজাতি তত্ত্বে নয়। হিন্দু উচ্চবর্ণের ও নিম্ন বর্ণের বিভেদ তৈরি করে শাসন ক্ষমতা হস্তগত করার জন্য। নিম্নবর্ণের বাঙালির মধ্যেএস সি এস টি , ওবিসি ও মুসলিম বাঙালি। দুই বাংলার জনসংখ্যার নিরিখে সংখ্যাগুরু নিম্ন বর্ণের শুদ্র বাঙালি আর মুসলিম বাঙালি। ফলে বাংলা শাসনের দায় বর্তায় এই সম্প্রদায়ের হাতে। সেক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের সংখ্যালঘু হিন্দু বাঙালির বিপদ। বাংলার উচ্চবর্ণের হিন্দু নেতাদের অন্যতম শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বলেছিলেন, দেশ ভাগে পাঞ্জাব আলাদা হোক না হোক বাংলা ভাগ চাইই চাই। কমিটি গঠিত হল। কারা কারা ছিলেন কমিটিতে? অবশ্যই মধ্যমণি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। উচ্চবর্ণের প্রতিষ্ঠায় ছিলেন বাম ডান সকলেই। জ্যোতি বসু, রতনলাল ব্রাহ্মণ, কিরণশঙ্কর রায় আরও উচ্চবর্ণের মানুষ। । বিরোধী ছিলেন সুভাষচন্দ্রের ভাই শরৎচন্দ্র বসু। তালিকায় রাখা হয়নি যোগেশ চন্দ্র মণ্ডল , আম্বেদকরকে। যোগেশ চন্দ্র বলেছিলেন, শেখ আর শুদ্দুরের একই দুশমন। বামুন, কায়েত, বৈদ্য, উচ্চ হিন্দুগণ।১৯৪৬ সালে কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে আম্বেদকর বোম্বাই থেকে জিততে পারলেন না। যোগেন মণ্ডল তাঁকে বাংলা থেকে জেতান। সেদিন মুসলিম বাঙালিরা কিন্তু আম্বেদকরকে ভোট দেন। বাংলা ভাগের রহস্য পরের পর্বে বলব। এখন সরাসরি সি এ এ প্রসঙ্গে আসি।
লেখক, মানবতাবাদী কর্মী মানিক ফকির দীর্ঘদিন ধরে সি এ এ ও এন আর সি নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে আসছিলেন। ক্রমশ তাঁর কথা সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে। মানিক ফকির একটি বই লিখেছেন। সেখানে প্রথম পাতায় লিখেছেন বিজেপি , আর এস এস বন্ধুদের প্রতি সীমাহীন আনুগত্য ভক্তি আর বিশ্বাসের ওপর শুধু নির্ভর না করে তীক্ষ্ণ যুক্তি, সঠিক নথিপত্র এবং সরকারি তথ্যের ওপর নির্ভরশীল হোন। সি এ এ আইন সম্পর্কে আমি মিথ্যা বলছি প্রমাণ করতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরষ্কৃত করা হবে। মানিক ফকির বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেছেন ভোটের পরেই বাতিল হবে ভোটার কার্ড আর আধার কার্ড। বেশিরভাগ বাঙালির ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ হবে। ব্যাংকের টাকা তুলে ঘরে রাখুন। আমরা আদালতে যাচ্ছি , বিজেপি নেতা শান্তুনু ঠাকুর বলেছেন তাঁর নাগরিক পরিচয় নেই। আমরা চ্যালেঞ্জ করছি বে নাগরিক লোকসভার সাংসদ হয় কিকরে? জে পি সি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত সরকার বলছেমোট ৩১,৩১৩ জন ছাড় পেয়েছেন ভারতে। তার মধ্যে হিন্দু ২৫,৩১৩ জন। যাদের আধার কার্ড বাতিল হচ্ছে তারা পাসপোর্ট অ্যাক্ট বা ফরেন অ্যাক্ট অনুযায়ী ইললিগাল হয়ে বাস করছিলেন।