নাটকওলার প্রযোজনা আলাদিন আট থেকে আশি মন কেড়েছে সবার

*****

দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক : রূপকথার আড়ালে দেশে দেশে সামাজিক নীতিকথা পরিবেশন বহু যুগের প্রচলিত প্রথা। যেখানে যুক্তি থাকে অযৌক্তিকতার মোড়কে। না হলে বারো হাত কাঁকড়ের টেরই হাত বিচি হয কি করে? আরব্য রজনীর রূপকথা রূপকথা হলেও সমসাময়িক যুগের আরব, পারস্য, মিশর, ভারত ও মেসোপটেমিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে হলিউড পর্যন্ত স্বীকৃতি পেয়েছে। আরব্য রজনীর সব গল্পই কিন্তু আরব্য নয়।। বহু গল্পই ফরাসি অনুবাদক অন্তোইন গ্যল্যান্ড এর সৃষ্টি। যেমন রামায়ণ। বাল্মীকি রামায়ণ বাংলায় অনুবাদে কৃত্তিবাস যেমন নিজের মনের মাধুরী মিশিয়েছেন তেমন বঙ্গতনয়া চন্দ্রাবতী রচনা করেছেন তাঁর মত রামায়ণ।

মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে সানি চট্টোপাধ্যায় নাটকওলার প্রযোজনায় সম্প্রতি মধ্য কলকাতার জ্ঞান মঞ্চে দেখার সুযোগ মিলল আলাদিন দেখার। রূপকথার মোড়কে মানব সমাজের লোভ, মোহ , বিশ্বাসভঙ্গ ,কালা জাদু ও ইচ্ছাপূরণের পাঁচমিশালী কল্পকথা দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেয়। গল্পের কেন্দ্রবিন্দু এক দরিদ্র যুবক আলাদিন, সুলতান কন্যা জেসমিন ও জিন। এযুগের সঙ্গে মানানসই করতে জিন হয়েছে জিনি। সাদাসিধে সুলতানের কন্যা ও রাজত্ব দখলের ভিলেন মন্ত্রীমশাই ষড়যন্ত্রী মশাই জাফরের বৃত্তে কাহিনীর এগোয়। শেষে মধুরেন সমাপয়েৎ। রাজকন্যা ও রাজত্ব পেল সর্বহারা আলাদিন।

নাটকটির ইউ এস পি প্রয়োগরীতি। মঞ্চ , পোশাক সর্বোপরি মঞ্চের পিছনের চিত্রায়ন এক পরিকল্পনার ছাপ রেখেছে। I অভিনয়ে ছাপ রেখেছেন আলাদিন চরিত্রে শুভ্রদীপ বণিক, জেসমিন চরিত্রে নিশা হালদার ও জিনির চরিত্রে নাট্যকার পরিচালক সানি চট্টোপাধ্যায় , ভিলেন মন্ত্রীর ভূমিকায় অরিন্দম সর্দার ও সুলতানের চরিত্রে চিরঞ্জিৎ দাস দর্শকদের নজর কেড়েছেন। এছাড়াও নজর কেড়েছেন পাখির চরিত্রে কৌশিক খাঁ। অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত সময়ের পুরোটাই সংলাপ ছাড়া শুধু ভাব প্রকাশে সফল হয়েছেন জ্যোতির্ময় পণ্ডিত।

সহযোগী যেসব শিল্পীরা নাটকের দাবি পূরণ করেছেন সুমিত দে, কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক, স্বর্ণেন্দু ভৌমিক, সুজন ঘোষ, শর্মিলা চ্যাটার্জি, ঋতজা ব্যানার্জি, সহেলি মান্না, মৃণাল মুখোপাধ্যায়, সুজন ঘোষ।আবহ ও চিত্র প্রক্ষেপণে সৃজিত মণ্ডল, পোশাকে সংহিতা দত্ত চক্রবর্তী, জ্যোতির্ময় পণ্ডিত, ঊষা আচার্য নাটকের পূর্ণতা দিয়েছেন।মঞ্চে নির্মাণে অরুণ মণ্ডল, আলোক প্রক্ষেপণে সমর পাড়ুই, নৃত্য পরিকল্পনায় চিরঞ্জিৎ দাস যথাযথ। গানে বৈচিত্র্য এনেছেন সুচন্দ্রা ভট্টাচার্য ও পরিচালক সানি চট্টোপাধ্যায়। নাটকটি রূপকথার আঙ্গিকে গড়ে তোলার হলেও কিছু ইঙ্গিত দেয় বর্তমান আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতাকে। কিন্তু বিষয়টি কিছুটা অস্বচ্ছ হয়ত পরিচালক রেখেছেন বাস্তব কিছুটা পরিস্থিতির সঙ্গে সমঝোতা করে। অবশ্য উপায় নেই। অনুদানের হয়ত কিছুটা বাধ্যবাধকতা থেকে যায়। তবু সীমাবদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার মানুষের কথা এসেছে। যা কল্পরাজ্যর থেকে বাস্তব পরিস্থিতিতেও সমান প্রযোজ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *