পর্ব: ১৩৭

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : খ্রিষ্টপূর্ব চার শতকের শুরুর সময়। গণিকাদের যিনি প্রধান হতেন তাঁর নানার বিষয়ে পারদর্শী হতে হতো। নিজস্ব সমাজে অন্য মেয়েদেরও কুশলী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নজর দিতে হতো। তালিকায় ছিল গীত, বাদ্য, পাঠ্য, নৃত্য , নাট্য, অক্ষরলিপি অলঙ্করণ, চিত্র অঙ্কন,বিজয় বেণু মৃদঙ্গ বদনে, পরচিত্তজ্ঞান, আকার ইঙ্গিতে কথা বলার দক্ষতা, গন্ধ সংযুক্তি, মালা গাঁথা গ্রাহকের অঙ্গমর্দন ইত্যাদি ছাড়াও চৌষট্টি কলা বিদ্যা।

এই শিক্ষা ব্যবস্থা যে শুধু গণিকাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল তা নয়। দাসী ও নটীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল।তবে দাসী শব্দের যে অর্থ তা হল গণিকাতিরিক্ত বেশ্যা। গণিকা ও বেশ্যার যে সূক্ষ্ম পার্থক্যটি ছিল সেকথার পূর্বের পর্বে আলোচনা হয়েছে। গণিকাদের সমাজে গুরুত্ব থাকলেও নিজের অর্জিত অলঙ্কারের প্রতি অধিকার ছিল না। নিজের মা ছাড়া প্রিয় কোনো জনের কাছে অলঙ্কার গচ্ছিত রাখলে ৪ ১\৪ পণ দণ্ড দিতে হত। নিজের বস্ত্র, ব্যবহার্য জিনিষ ইত্যাদি বিক্রয়ের বা গচ্ছিত রাখলে দণ্ডের পরিমাণ ছিল ৫০ ১/৪। এই গণিকা বা বেশ্যাদের যাঁরা বিভিন্ন শিক্ষা দান করতেন তাঁদের ভরণপোষণের দায়িত্ব ছিল রাজার।

বৈদিক যুগের বেশ্যা।
গণিকাকন্যাদের যেমন গণিকা হতে হত, তেমন গণিকা পুত্রদের নটীদের আচার্য নির্বাচিত করা হতো। গণিকাদের আচরণ কেমন হবে সেই সম্পর্কে বিধান ছিল। কাউকে অযথা তিরষ্কার করলে গণিকাকে ২৪ পণ জরিমানা দিতে হত। হাত ,পা বা লাঠি দিয়ে কাউকে আঘাত করলে দণ্ড ছিল তিরস্কারের দ্বিগুণ। কারো সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে গিয়ে কারও কান ছিঁড়লে রাজাকে জরিমানা দিতে হত ৫০১/২ পণ। গণিকার স্বেচ্ছাচারিতা নিষিদ্ধ ছিল। কৌটিল্য বলেছেন, অনিচ্ছুক গণিকা বা কুমারীর ওপর বলাৎকারের অপরাধে কামুক ব্যক্তিকে মোটা পরিমাণ দণ্ড দিতে হত। এমনটাই লিখেছেন সুরেশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ও রমলাদেবী তাঁদের ভারতীয় সমাজে প্রান্তবাসিনী গ্রন্থের গণিকা সংক্রান্ত তথ্যের আকর পরিচ্ছদে ১৩৪ পৃষ্ঠায়।(চলবে)
পরবর্তী পর্ব সোমবার,১১ আগস্ট,২০২৫
