বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব ৩০

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : দেবদাসী প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসা যাক। দেশ পত্রিকায় প্রায় দু দশক আগে নারায়ণ সান্যাল তাঁর দেবদাসী প্রথার উৎস, ইতিহাস ও পরিণতি শীর্ষকনিবন্ধে লিখেছিলেন,,,,, কৌটিল্যের অর্থ শাস্ত্রে মৌর্য যুগে দেহ ব্যবসায়ী শব্দটা রমণীদের প্রধান তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম ভাগ _ দেবদাসী শব্দটা ব্যবহার না করে বলা হয়েছে- দেবতাদের সেবা করবে। পুরোহিত – তন্ত্রের অধীনে। দ্বিতীয় ভাগ _ অবরুদ্ধ। তারা আবার দু – জাতের। একদল বিশেষ বিশেষ পরিবার রক্ষিতা। রাজা – শ্রেশ্ঠী ধন কুবেররা তাদের ভরণ পোষণ করবেন। তারা মনিবের প্রাসাদেও থাকতে পারে, অথবা বাগানবাড়িতে। কিন্ত পরিবার গত সতীত্ব তাদের মেনে চলতে হত। দ্বিতীয় দলের অবরুদ্ধা হচ্ছে সর্বজনভোগ্যা গণিকা বা বারাঙ্গনা। তারা পুরোপুরি সরকারি চাকুরে। তফাৎ এই যে, তারারিজাইন দিতে পারত না, আর তাদের কন্যাসন্তান আবশ্যিকভাবে মায়ের চাকরিটি পেত। রূপ ও গুণের বিচারে তাদের তিনটি শ্রেণী। নিম্নতমদের বার্ষিক উপার্জন _ প্রচলিত শব্দটা ছিল ভোগ _ হাজার কার্ষাপণ। তৃতীয় ভাগ _ ভূয়িশ্যা। তারা সহজিয়া। তাদের আবাস নগর প্রাচীরের বাহিরে। তা বলে আইনের আওতার বাহিরে নয়। তারা তাদের মাসিক উপার্জনের ভিতর থেকে দুইদিনের রোজগার সরকারকে দিতে বাধ্য থাকত। পরিবর্তে রাষ্ট্র ব্যবস্থা করা নটাদের নিরাপত্তার।

নারায়ণ সান্যাল আরও লিখেছেন , দেবদাসী ভিন্ন অন্যান্য শ্রেণীর দেহ ব্যবসায়িনীদের জন্য ছিলেন একজন অফিসার গণিকাধ্যক্ষ। দৈনিক তাঁর কর্মচারী অর্থ সংগ্রহ করত _ ঠিক যেমন স্টেট বাসের কন্ডাক্টর তার দৈনিক উপার্জন দিনান্তে বুঝিয়ে দেয় । কিন্তু নাগর যদি অর্থের অতিরিক্ত কোনও প্রণয়োপহার দেয় _ স্বর্ণালঙ্কার হলেও তা গণিকার প্রাপ্য। এইসব নিয়মকানুন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করলেও কৌটিল্য দেবদাসী শ্রেণীর আইনকানুন লিপিবদ্ধ করেননি। বলেছেন, সে দায়িত্ব পুরোহিততন্ত্রের । অর্থাৎ মৌর্য যুগ থেকেই দেবদাসীদের উপর ঐ পুরোহিত কূলের অধিকার ইতিহাস স্বীকৃত। কৌটিল্যের কাল এবং গুপ্তযুগের মাঝখানে দু -দুটি প্রামাণ্য গ্রন্থ রচিত হয়েছিল বলে অনুমান করা যায়। প্রথমটি বাৎস্যায়নের কামসূত্র দ্বিতীয়টি ভরতের নাট্য শাস্ত্র। দুটিতেই বলা যায় দেবদাসী – কনস্পিক্যুয়াস , সম্পুর্ণ অনুল্লেখিত থাকায়। চানক্যের অর্থশাস্ত্রে প্রতিগণিকা নামে এক ধরণের গণিকার উল্লেখ পাওয়া যায়। এই সম্পর্কে স্বদেশচর্চা লোক , আদিরস সেকাল – একাল শারদ সংখ্যা ২০১৬ তে সঙ্গীতা চৌধুরী গণিকাবৃত্তি: প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে নিবন্ধে আরও কিছু তথ্য দিয়েছেন যা পরবর্তী পর্বে আলোচনা করব।( চলবে)

পরবর্তী পর্ব আগামী ২৯ জুলাই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *