শ্রীজিৎ চট্টরাজ : মোহনবাগানীরা জেনে বা না জেনে বলে থাকেন জাতীয় দল মোহনবাগান। এই গুজবের কোনো সত্যতা নেই। তেমন আজ পর্যন্ত বয়সে ছোট হয়েও যতবার ডার্বিতে দুদল মুখোমুখি হয়েছে ১৩ বার বেশি জিতেছে ইস্টবেঙ্গল।২০২৪ সালের ১৩ জুলাই পর্যন্ত হিসেব বলছে, দুদলের ৩৯৮ টি ম্যাচ খেলা হয়েছে, যার মধ্যে ইস্টবেঙ্গল জিতেছে ১৪২ টি ম্যাচ।৫_০ গোলে হারার বদলা মোহনবাগান এখনও নিতে পারেনি। কিন্তু মোহনবাগান ১২৯ টি ম্যাচ মাত্র ম্যাচ জিতেছে ইস্টবেঙ্গলের বিরূদ্ধে। । এর মধ্যে ওয়াকওভার ম্যাচও আছে। বাকি ড্র ব্রিটিশ কে খালি পায়ে হারানো যেমন বাঙালির গর্বের কারণ, তেমনই ১৯২০ সালে সৃষ্টি হলেও একবছরের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল জিতেছিল হারকিউলিস কাপ। শচীন শিল্ড। মোহনবাগানের প্রথম পরাজয় কোচবিহার কাপে ১৯২৪ সালে। একবছরে প্রায় ৭: টি কাপ জেতার রেকর্ডও আজ কোনো দলই ভাঙতে পারেনি।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থক ও সভ্যরা কৃতজ্ঞ অধুনা বিলুপ্ত কলকাতার জোড়াবাগান ক্লাবের প্রতি।কেননা সেদিন অপমানিত না হলে ইষ্টবেঙ্গল ক্লাব তৈরি হতো না । ১৯২০ তে কোচবিহার কাপের ফাইনালে মুখোমখি মোহনবাগান ও জোড়াবাগান। জিতল মোহনবাগান। ক্লাবের অধিকাংশ কর্মকর্তা এপার বাংলার। অথচ দলে ওপার বাংলার শৈলেশ বসু ও নসা সেন খেলতেন। মোহনবাগানের কাছে পরাজয়ের দোষ চাপল এই বাঙাল খেলোয়াড়ের ওপর। কটূক্তি আর অপমান সহ্য করেননি ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট পূর্ববঙ্গীয় সুরেশ চৌধুরী। ঘটিদের জবাব দিতে নির্মাণ করলেন ইস্টবেঙ্গল। এই বছর ক্লাবের বয়স হল ১০৫।
বৃহস্পতিবারের বাদল ঝরা বিকেলে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হল। ভারত গৌরব সম্মানে সৌরভ গাঙ্গুলিকে এবং বিভিন্ন সম্মানেসম্মানিত করা হয় মোহাম্মদ সামি, নন্দকুমার সেকার, কার্লোস কুয়াদ্রাত, রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়, প্রশান্ত বন্দোপাধ্যায়, সাত্যকি দত্ত, প্রভসুখন সিং গিল, রাজদীপ সারদেশাই, সরোজ চক্রবর্তী, সুকৃতি কুমার দত্ত, জয়ন্ত বন্দোপাধ্যায়, ইমরান আজিজ মির্জা , অভিনেতা প্রসেনজিৎ ও দুই বছরের সেরা সমর্থক মুকুল গঙ্গোপাধ্যায় ও গণেশ দাসকে।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সকালে। তাঁবুতে প্রধান প্রতিষ্ঠাতা সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী, শৈলেশ বসু নশা সেনের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। সন্ধ্যায় মনোজ মুরলী নায়ারের রবীন্দ্র সংগীতের মধ্ দিয়ে সূচনা। সম্মানিত করা হয় ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় জয়দীপ মুখার্জি, সি এ বি সভাপতি স্নেহাশিস গাঙ্গুলি , নৃত্যশিল্পী ও সৌরভ জায়া ডোনা গাঙ্গুলি কে।তাঁদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন ক্লাব সভাপতির মুরারিলাল লোহিয়া ও দেবব্রত সরকার। প্রাইড অফ বেঙ্গল পুরষ্কার মহম্মদ সামির হাতে তুলে দেন মন্ত্রীঅরূপ বিশ্বাস ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
ইস্টবেঙ্গল প্রতিষ্ঠাতা সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী।
অভিনেতা প্রসেনজিৎ উন্মোচন করেন ক্লাবের আলমানক ২০২৪ পত্রিকা। সৌরভ গাঙ্গুলি পুরস্কারের সাম্মানিক ৫ লক্ষ টাকা দান করলেন ফুটবলের উন্নতিতে। বললেন লাল হলুদজার্সি আলাদা উৎসাহ জোগায়। অনুষ্ঠানেরশেষ মূহূর্তে ক্লাব দলের ষষ্ঠ বিদেশি খেলোয়াড় হেক্ত্বর ইউতসের নাম ঘোষণা করে। মঞ্চে পুরো দল এলে সমর্থকেরা উদ্দীপনায় উত্তাল হয়ে ওঠেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সাংবাদিক লেখক গৌতম ভট্টাচার্য ও শর্মিষ্ঠা গোস্বামী। উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান ক্লাব সভাপতি মুরারি লাল লোহিয়া, সচিব রূপক সাহা ও সম্পাদক দেবব্রত সরকার। ক্ষুদিরাম অনুশীলনে পূর্ণ জনসমাগমে ১ অগস্টের অনুষ্ঠানে আবার প্রমাণিত হল সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল।