ক্ষমতায় ফিরছেন ট্রাম্প? নিকি হ্যালির আত্মসমর্পণ

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : ডোনাল্ড ট্রাম্প কি আবার আমেরিকায় ক্ষমতায় ফিরছেন? ২০২৪ এ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে চলেছে। রিপাবলিকান প্রার্থীর দৌড়ে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মহিলা প্রার্থী নিকি হ্যালি। কিন্তু আমেরিকায় যে কয়েকটি প্রদেশে প্রার্থী নির্বাচনের যে হিসেব তাতে প্রায় বেশিরভাগ প্রদেশে নিকি পরাজিত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার ১৫ টি প্রদেশের নির্বাচনে ১৩টিতেই নিকি পরাজিত। তাই প্রার্থী পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে গেলেন নিকি হ্যালি। অর্থাৎ আগামী নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রার্থী হওয়া নিশ্চিত।

                 আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষকের একাংশের ধারণা আমেরিকায় ক্রমশঃ ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরেও সমীহ পাচ্ছেন না প্রত্যেক বছর মার্কিন কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে একটি নির্ধারিত সময়ে ভাষণ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেই উপলক্ষে সদ্য প্রয়াত রাশিয়ার বিরোধী দলনেতা আলেক্সাই ন্যাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া ন্যাভালনয়া এবং ইউক্রেনের ফাস্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু দুজনেই সেই আমন্ত্রণ উপেক্ষা করেছেন। অবশ্যই যা কূটনৈতিক কারণেই। কিন্তু একটুও না দমে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ট্রাম্পের নাম না করে তীক্ষ্ণ সমালোচনা করেন। তবুও তাঁর কথায় যেন আত্ম বিশ্বাসী মনে হয়নি।

মিশেল ওবামা রিপাবলিক দলের নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি প্রেসিডেণ্ট প্রার্থী হবেন না

২০২২ সালে এমারসন কলেজের তরফে একটি সমীক্ষা হয় আমেরিকায়। সেই সমীক্ষায় বলা হয় জনপ্রিয়তার বিচারে বর্তমান প্রেসিডেন্ট তেমন দাগ না কাটলেও নির্বাচনের নিরিখে ট্রাম্পের চেয়ে বেশি সমর্থন পাচ্ছেন।২০২০ তে বাইডেনের কাছে পরাজিত হতে না হতেই ট্রাম্প ঘোষণা করে দিয়েছিলেন ২০২৪ এর নির্বাচনে তিনি আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সেই ঘোষণা মত ট্রাম্প তাঁর ফ্লোরিডা সদর দফতরে বসে গত বছরেই ঘোষণা করেন, আমেরিকাকে আবার মহান ও গৌরবময় করতে মার্কিন দেশের নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করছি। 

     যদিও ট্রাম্পের দলে রাষ্ট্রপতির দাবিদার আরও অনেকে ছিলেন। যাঁদের অন্যতম প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও ছিলেন। আর এক প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডিসান্টিস দলে মাত্র ২৫ শতাংশ সমর্থন পান। ট্রাম্প পান ৫৫ শতাংশ সমর্থন। বরং রিপাবলিক দলের তরফে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন নিকি হ্যালি। আমেরিকার নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের দুবছর আগে থেকেই প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে লিজ চেনিও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প।

গত বছরের শেষে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ফক্স নিউজ চ্যানেলে সঞ্চালক শন হ্যানিটির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, জিতে ফিরলে এবার সীমান্ত বন্ধ করে দেব। এক নতুন আমেরিকা তৈরি করব। আমেরিকা হবে আমেরিকানদের। এই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন ট্রাম্প আবার আমেরিকার গণতন্ত্রকে হত্যা করে স্বৈরাচারীশাসক হতে চান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ অনুমান করছেন, ট্রাম্পের বিকল্প হিসেবে নিকি হ্যালি লড়াই করলেও রিপাবলিক দলের মনোনয়ন শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পই পাবেন। এলাকা অনুযায়ী যদি ট্রাম্প যেতেন অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বের রাজনৈতিক পরিবেশ এখন অস্থিরতা। 

      একদিকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্য প্রাচ্যে অস্থিরতা। পাশাপশি বিশ্বে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই শিথিল হচ্ছে। চিন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। এই সুযোগ ট্রাম্প নিয়ে বলছেন, বিশ্বের খবরদারি করতে গিয়ে আমেরিকার স্বার্থ ভুলব না। আমেরিকা হবে আমেরিকানদের। এই শ্লোগানটি আমেরিকায় ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে আমেরিকার অর্থনীতি থমকে গিয়েছিল। ধনী দেশ হলেও২০২৩ সালে মার্কিন অর্থনীতির প্রধান মাইকেল গ্যাপেন আগাম ভবিষ্যতবাণী করে দেন ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্ব বেড়ে হবে ৫.৫ শতাংশ। সেখানে ২০২৩ সালে চাকরি পান২.৬৩ লক্ষ। ১৯৬৯ সালের পর যা সর্বনিম্ন।২০২৪ সালে আমেরিকায় প্রতিমাসে ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ বেকার হবেন।

অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক দলে বাইডেনের বিকল্প হিসেবে  প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ঘরণী মিশেল ওবামার প্রতি দলের সদস্যদের সমর্থন বাড়ছে। প্রায় ৪৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সদস্যরা মিশেল ওবামার প্রতি সমর্থন দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে বাইডেন সমর্থন পেয়েছেন মাত্র ৩৮ শতাংশের। এছাড়াও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, হিলারি ক্লিনটন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যভিন নিউসম, মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হ্যুইটমেট আছেন প্রার্থী পদের দৌড়ে।৮১ বছরের প্রেসিডেন্ট শারীরিক ভাবে কতটা সুস্থ তাই  নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আমেরিকায় আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেমন হবে বা কে প্রেসিডেন্ট হবে তার আভাস মিলবে আরও কিছুদিন পর।

তবে এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় খবর ট্রাম্প যদি আবার ফেরেন তাহলে কি  হবে? ট্রাম্পের অতীত টা একবার দেখে নেওয়া যাক।

পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েল ধর্ষনের অভিযোগ করেছিলেন ট্রাম্পের বিরূদ্ধে।

সময়টা ২০০৬। ভূতপূর্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বয়স তখন ৬১। এক গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের আলাপ ৩৮ বছর বয়সী লাস্যময়ী পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলের সঙ্গে। স্টমির আসল নাম স্তেফানি ক্লিফোর্ট। সেই সময়ে সদ্য ট্রাম্পের সন্তানের মা হয়েছেন ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী মেলেনিয়া। ডাক্তার তাঁকে বিশ্রামে থাকতে বলেন। সেই পুত্র সন্তানের নাম ব্যারন। ব্যারন এখন বছর কুড়ির তরুণ ।কামিনী কাঞ্চনে আসক্ত ধনকুবের ট্রাম্প অস্থির হয়ে পড়েন নিত্যনতুন শয্যাসঙ্গিনীর জন্য। 

  স্ত্রী যদি সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের দেখাশোনার কাজে ব্যস্ত থাকেন , যৌনতায় যদি ডাক্তারের বারণ থাকে তাহলে ট্রাম সাহেবের করার কি আছে? গলফের মাঠে স্টমিকে দেখে ক্ষুধার্ত বাঘের মত নজর ফেলেন পর্নো তারকা স্টর্মির দিকে। ট্রাম্পের শিকারী চোখ যখন স্টর্মির শরীরের সব বিপদজনক ভাঁজ নিরীক্ষণ করছে, স্টর্মিও বুঝে যান তাঁর শরীরে সাঁতার কাটার জন্য ধনকুবের ট্রাম্প কতটা উদগ্রীব। ফলে টাকার বিনিময়ে স্টেমি বিছানায় বরণ করে নেন ধনকুবের ট্রামকে।

ট্রাম্পের এই যৌন তৃপ্তির চাহিদা বরাবরের। গোল বাঁধল ট্রাম্প যখন অর্থের প্রাচুর্যে ক্লান্ত তখন তাঁর ইচ্ছা হলো খ্যাতি আর প্রতিপত্তি অর্জনের।আমেরিকার প্রেসিডেন্ট চেয়ারে পড়ল নজর। বারাক ওবামার তখন অন্তিম লগ্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে।রিপাবলিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন ট্রাম্প। অকল্পনীয়ভাবে জিতেও যান। ২০১৭ নভেম্বর মাসে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাস আগে মার্কিন ইতিহাসের লেখক ও অধ্যাপক রোনাল্ড এল ফেইনম্যান আগাম আভাস দিয়ে বলেছিলেন, ট্রাম্প যদিও যেতেন,১৯৯ দিনের বেশি তিনি স্বপদে থাকতে পারবেন না। কিন্তু তাঁর ভবিষ্যতবাণী ভুল প্রমাণিত করে নির্বাচিত হন ট্রাম্প।

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ট্রাম্প বুঝেছিলেন, জনমানসে একটা ক্লিন ইমেজের প্রয়োজন। চতুর ট্রাম্প বোঝেন তাঁর অতীত জীবনের দুর্বলতা নিয়ে তাঁর যৌনসঙ্গিনীরা দর কষতে পারেন। তিনি সবচেয়ে চিন্তিত ছিলেন স্টর্মি ড্যানিয়েলকে। ব্যক্তিগত আইনজীবী কোহেন মারফৎ মুখ বন্ধ রাখার জন্য এক লাখ তিরিশ হাজার ডলারের নজরানা দিতে চান। সম্ভবত স্টর্মির চাহিদা ছিল বেশি। ফলে সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে যেমন ব্যাকা আঙুল ব্যবহার করতে হয়, তেমনই ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী পর্নো তারকা স্টর্মিকে ধমক দিয়ে চুপ করাতে চান। এটাই হিতে বিপরীত হলো।

             পর্নো তারকা সোজা ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেট কোর্টে মামলা ঠুকে দেন। মামলায় অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্পের আইনজীবী মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর যৌনসম্পর্কের কথা গোপন রাখার জন্য তিনি কোনো টাকা দাবি করেননি। এই নিয়ে যে চুক্তির কথা ট্রাম্প আইনজীবী বলছেন সেটা মিথ্যে । সেই মামলা এতদিন চলছিল।শেষপর্যন্ত সেই মামলায় ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ভারতীয় সময় মঙ্গলবার গভীর রাতে আত্মসমর্পণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির দপ্তর চার্জ গঠনের আগেই তাঁকে প্রশাসন গ্রেপ্তার করে।

পর্নো তারকা ও পরিচালক জেসিকা ড্রেকও অভিযোগ করেন ১০ হাজার ডলার দিয়ে ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে রাত কাটাতে চেয়েছিলেন

ট্রাম্পের বিরূদ্ধে মোট ৩৪ দফা অভিযোগ। যদিও ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছিলেন, তিনি আদালতে অভিযোগগুলির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। কিন্তু ২০২৪ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি অংশ নেওয়ার জন্য তহবিল গঠন করলেও মার্কিন আইন অনুযায়ী তিনি প্রেসিডেন্ট পদে নাম দাখিলে অনুমতি নাও পেতে পারেন এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল।নিউ ইয়র্ক শহর জুড়ে কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ঘিরে ফেলা হয়।২০২১ সালে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সমর্থকদের বিশৃংখলা সৃষ্টির লজ্জাজনক ঘটনা প্রশাসন স্মরণে রেখে ।

পর্নো তারকা স্টর্মির অভিযোগ শুধু নয়, আরও বেশ কিছু বেআইনি কাজের অভিযোগেও অভিযুক্ত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জোর করে যৌনসম্পর্কের অভিযোগ এনেছেন আরও অনেকে। ২০০৬ সালে একই অভিযোগ আনেন আর এক পর্নো তারকা ও পরিচালক জেসিকা ড্রেক। তিনি জানান, বছর দশেক আগে ট্রাম্প একদিন ফোনে তার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে নেন। এক হোটেলের স্যুটে ট্রাম্পের সঙ্গে রাত কাটান জেসিকা একা যেতে তিনি সাহস পাননি। তাই দুই বান্ধবীকেও সঙ্গে নেন। ট্রাম্প বিছানায় তিনজনকেই জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে থাকেন। শেষপর্যন্ত ট্রাম্পের বিকৃত যৌনতা র জন্য বিরক্ত হয়ে জেসিকা হোটেল ছেড়ে চলে যান। ট্রাম্প তাঁকে ফিরে আসার অনুরোধ করেন এবং এক রাতের জন্য দশ হাজার ডলার দিতে চান।জেসিকা ট্রাম্পের অনুরোধ রাখেননি।

হলিউড অভিনেত্রী ডেমি মূর বলেছিলেন ট্রাম্প কি জিনিস, আমি জানি।

জনৈক মডেল সালমা হায়েক অভিযোগ জানিয়ে বলেছিলেন, বহু বছর আগে ট্রাম্প আমার বয় ফ্রেন্ডের কাছ থেকে আমার ফোন নম্বর নিয়ে ওঁর এক রিসোর্টে আমাকে আমন্ত্রণ জানান। আমি জানতাম ওই রিসোর্টে ট্রাম্প তাঁর মেয়ের বয়সী মেয়েদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করত। আর এক মহিলা রোয়ান ব্রিউ মম অভিযোগে জানান, নারীরা ট্রাম্পের কাছে শুধুই ভোগের বস্তু জিল হার্থ নামে এক মডেল বলেন,৯০ এর দশকে ট্রাম্পের লালসার শিকার হন তিনি। স্তেফনিয়া ফার্নান্দেজ বলেন,১৭ বছর আগে এক সুইমিং পুল পার্টিতে তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন ট্রাম্প। হলিউড অভিনেত্রী ডেমি মূর বলেছেন ট্রাম্প যে মোটেই জেন্টলম্যান নন,সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি ।

সংবাদসূত্র মারফৎ জানা গেছে, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর রিৎজ কার্লটন হোটেলের একটি বিলাসবহুল স্যুটের ভাড়া দৈনিক ১৪ হাজার পাউন্ড। ওবামা যখন রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন, সস্ত্রীক এই হোটেলেই উঠেছিলেন। লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মিরর পত্রিকা লিখেছিল, ২৫৯০ স্কোয়ার ফুটের এই স্যুটের জানলা দিয়ে ক্রেমলিন রেড স্কোয়ার, সেন্ট ব্যাসিল ক্যাথিড্রাল চার্চ দেখা যায়।অভিযোগ , রাশিয়ান গোয়েন্দা বিভাগের কর্তাদের হাত করে ট্রাম্প জোরদার গোপনীয়তার সঙ্গে ২০১৩ সালে মিস্ ইউনিভার্স ও একদল মক্ষিরাণীকে নিয়ে রাত কাটান ট্রাম্প।

এমনকি বিকৃত রুচির পরিচয় তিনি দেন এমনই বলেছেন মক্ষিরাণীদের কয়েকজন। ট্রাম্প তাঁদের নগ্ন হয়ে মূত্রত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ট্রাম্প সেই মুহূর্তগুলি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন।নিউজিল্যান্ডের যৌনবিজ্ঞানী জন উইলিয়াম মানি অপ্রয়োজনীয় যৌন আগ্রহকে প্যারাফিলিয়া বলে চিহ্নিত করেন।যদিও মার্কিন মনোবিজ্ঞানী গ্লেন গ্যাবার্ড বলেন, কোনো যৌন বিকৃতি বলে কিছু হয় না,যতক্ষণ তা নিজের বা সঙ্গীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি না করে। সেক্ষেত্রে যৌনসঙ্গিনীকে জোর করে নগ্ন হয়ে মূত্রত্যাগের নির্দেশ দেওয়া অমানবিক তো বটেই। সেটা যৌন বিকৃতিরই লক্ষণ।ধনকুবের প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাঁর বিকৃত ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দিতেন।

২০০৬ সালে মিস্ যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছর বয়সী ক্যারোলিনা হলভে অভিযোগ জানিয়ে বলেছিলেন , সেই সময় প্রতিটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় উপস্থিত থাকতেন ট্রাম্প। ৭০ বছর বয়সী লিডস ক্রুকের অভিযোগ, নিউ ইয়র্কের একটি ফ্লাইটের কেবিনে ট্রাম্প তাঁকে যৌন নির্যাতন করেন যখন তাঁর বয়স ছিল ২২। একটি রিয়েল স্টেট কোম্পানিতে রিসেপশনিস্ট ছিলেন তিনি। লিফটে জড়িয়ে ধরেন তাঁকে।

মার্কিন সাংবাদিক মাইকেল উলফ এক বিষ্ফোরক তথ্য দিয়েছেন তাঁর ফায়ার ফিউরি, ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস বইটিতে। দুশো জনের বেশি ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার ভিত্তিতে লেখা এই বইয়ের ছত্রে ছত্রে লেখা ট্রাম্পের দাম্পত্য জীবনের অস্থিরতার কথা। ট্রাম্প নাকি তাঁর তৃতীয় স্ত্রী ৪৯ বছর বয়সী মেলেনিয়ার সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমোন না। ট্রাম্প সারাদিন কি করেন,কোথায় যান তাই নিয়ে বরাবর মেলেনিয়ার উৎসাহ নেই।

২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রাক্তন স্ত্রী ইভাঙ্কা ট্রাম্পের মা ট্রাম্পের নারী শিকার নিয়ে বই লেখেন রেজিং ট্রাম্প।

২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রাক্তন স্ত্রী ইভাঙ্কা ট্রাম্পের মা ইভানা একটি বই লিখেছেন রেজিং ট্রাম্প। সেখানে তিনি লিখেছেন ১৯৯২ সালে মার্লা মেপলস নামে একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় ইভানা বিচ্ছেদ নেন। বিচ্ছেদের সময়ে ট্রাম্পকে দেখেছি ওঁর কাছে বিচ্ছেদটাও যেন একটা ব্যবসায়িক চুক্তি। ২০১৭ তে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরে কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি বিভাগ গবেষণা করে জানায়, ট্রাম্প একজন মানসিক ভারসাম্যহীন।

সংবাদসূত্রের খবর মেশিন লার্নিং ও কম্পিউটারাইজড বৈজ্ঞানিক মেথড ব্যবহার করে ১০৬ জন ব্যবসায়িক নেতার প্রোফাইল ডিক্রিপ্ট করেন গবেষকরা। এই তালিকায় ছিলেন_ ইলন মাস্ক, বিল গেটস, ওপরাহ উইন ফ্রে ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক অবচংকা বলেন , এই সব মানুষদের টুইট বিশ্লেষণ করে সর্বোচ্চ স্থানে ট্রাম্পকে রাখা হয়েছে। এই ব্যক্তিত্বদের তালিকা প্রস্তুত করেছিল ফোবস ম্যাগাজিন ও ফরচুন পত্রিকা।

পারিবারিক সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ট্রাম্পের ভাইঝি মেরী ট্রাম্প

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুধু মডেল বা পর্নো তারকারাই অভিযোগ করেছেন তাই নয়, ভাইঝি মেরী ট্রাম্পও মারাত্মক অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন,১৯৯১ সালে মেরীর বাবা ফ্রেডর ট্রাম্প মারা যান। তাঁর বিশাল সম্পত্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্য ভাইরা আত্মসাৎ করে নেন। এই অভিযোগের আগেই কাকা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে মেরী একটি বই লেখেন, টু মাচ অ্যান্ড নেভার এনাফ হাউ মাই ফ্যামিলি ক্রিয়েটেড দি ওয়ার্ল্ড মোস্ট ডেঞ্জারাস ম্যান। বিতর্কিত বইটি এখন পর্যন্ত ১০ লাখ কপি বিক্রি হয়ে গেছে।

   ট্রাম্প বইটি প্রকাশ রুখতে হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।কারণ প্রকাশক ছিলেন যেমন জেদি,তেমন সাহসী। আর এক মডেল অ্যামি ডরিস একটি ব্রিটিশ দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন,২০১৬; সালে যখন ট্রাম্প প্রথম ভোটে দাঁড়ায় তখনই আমি মুখ খুলতাম। কিন্তু আমার শিশুকন্যারা ছিল নেহাতই ছোট। তাই ভয়ে চুপ ছিলাম। আমি ট্রাম্পের লালসার শিকার হয়েছিলাম।ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এও অভিযোগ প্রবেশিকা পরীক্ষা তিনি টাকার জোরে অন্য কাউকে দিয়ে করান। অর্থাৎ শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি আমেরিকাতেও হয়।

মার্কিন গনতন্ত্রে এই প্রথম দেশের কোনও ক্ষমতার শিখরে থাকা মানুষকে ফৌজদারি অপরাধে গ্রেফতার করা হয়। তবে তাঁর বিরূদ্ধে ওঠা মানহানির মামলায় হেরে গেছেন পর্নো তারকা। তাই ট্রাম্পের আইনি লড়াইয়ের খরচ পর্নো তারকাকেই বহন করতে হবে এমনই আদেশ দেয় আদালতের। যে আইনজীবী মারফৎ টাকা পাঠিয়ে পর্নো তারকার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প সেই আইনজীবী গ্রেপ্তার হওয়ার পর সত্যি কথা আদালতে উগড়ে দেন। ট্রাম্প গ্রেপ্তারের পর একটি বিষয়ে কলকাতার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। পার্থ চ্যাটার্জিকে যখন আদালতে তোলা হয়,তখন যেমন জনতা চোর চোর স্লোগানে আওয়াজ তোলেন, আমেরিকাতেও ট্রাম্প যখন আদালতে ঢোকেন ও বেরিয়ে আসেন তখন একদল ট্রাম্প বিরোধী ট্রাম্পকে কটূক্তি করতে থাকেন।

           আমাদের দেশে আর একটি ঘটনা বেশ চিত্তাকর্ষক।মার্কিন দেশে হাতি শিকারের অনুমতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বেজায় চটেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুর। তিনি বলেছিলেন ট্রাম্প আসলে এক নির্বোধ মানুষ। আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিজী সমস্ত প্রটোকলের উর্দ্ধে উঠে আমেরিকা ভ্রমণে গিয়ে বলে এসেছিলেন আব কি বার, ট্রাম্প সরকার।যদিও মোদিজীর সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন আমেরিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ।ট্রাম্পের ভবিতব্য কি সেটা ভবিষ্যতই বলবে। তবে ট্রাম্প ভেঙেছেন , কিন্তু মচকাননি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন না জেনেই বাইডেন সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে।

     আমেরিকার রিপাবলিকান দলও অবশ্য আগামী নির্বাচনে আইনি জটিলতা না থাকলে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়ে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছিল। এদিকে ট্রাম্পের কারাবাসে খুশি সে দেশের ভারতীয় অভিবাসীরা।কেননা তাঁরা চিন্তিত ছিল, আগামী নির্বাচনে যদি ট্রাম্প ফিরে আসেন তাহলে তাঁদের আমেরিকা ছেড়ে দেশে ফিরে যেতে হবে।করোনা পরিস্থিতির পর সেদেশে বেকারত্ব বেড়েছে। ট্রাম্প তাই আমেরিকানদের কাছে জনপ্রিয় এক স্লোগান উপহার দিয়েছেন। আমেরিকা ফর আমেরিকান। বিদেশিদের তাড়িয়ে সেই চাকরি তিনি ক্ষমতায় ফিরলে আমেরিকার যুবসমাজকে উপহার দেবেন। আমেরিকান যুব সমাজ তবে কি ট্রাম্পকেই ফিরিয়ে আনবেন? অভিভাবক আমেরিকার নাগরিকেরাও কি তাই চান?

মোদীজি কি এবারেও আওয়াজ তুলবেন আব কি বার , ট্রাম্প কি সরকার?

   ভারতে মোদী যদি ফিরে আসেন আর তাঁর সেই শ্লোগান আব কি বার ট্রাম্প কিl সরকার বলতে আবার আমেরিকায় গিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের অনুরোধ করবেন? সেদিকেই নজর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে মোদীজি যদি আবার ফেরেন তবে নিশ্চয়ই মনে রাখবেন যাঁর জন্য তিনি আমেরিকায় গিয়ে প্রটোকল ভেঙে সেদেশে প্রেসিডেণ্ট পদে ট্রাম্পের পক্ষ সমর্থন করেন, সেই ট্রাম্প কিন্তু করোনা সময়ে ভারত থেকে ওষুধ পাঠাতে দেরি হয়েছিল বলে বেশধমক দিয়েছিলেন। আত্মনির্ভর ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সেদিন অপমান হজম করতে হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *