অন্নদা ঠাকুরের দাবি,বিবেকানন্দ বাংলায় জন্মেছেন তিন উচ্চবর্ণের পরিবারে।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: শুধু রামকৃষ্ণদেব নন ,অন্নদা ঠাকুর তাঁর স্বপ্নজীবন গ্রন্থে সারদাদেবী ও বিবেকানন্দের পুনর্জন্মের দাবি করেছেন। সারদাদেবীও বলেছিলেন, বিবেকানন্দ আবার জন্মাবেন। এঁদের দাবি স্বপার্ষদ জন্ম নিয়েছেন রামকৃষ্ণদেব।অন্নদা ঠাকুর লিখেছেন রামকৃষ্ণদেবের ১৮ জন শিষ্য ১২৮ অংশে জন্ম নিয়েছেন। বিবেকানন্দ জন্মাবেন তিন অংশে। একজন ব্রাহ্মণ, একজন কায়স্থ একজন বৈদ্য। অর্থাৎ অন্নদা ঠাকুরের কথামত বিবেকানন্দ জন্মাবেন তিন উচ্চ বর্ণে। বিবেকানন্দের সেই মুচি মেথর চণ্ডাল বা আদিবাসী, তপশিল, উপজাতি বংশে জন্মাচ্ছেন না। ভালো কথা। অন্নদা ঠাকুর আর কি বলেছেন?
এই বিষয়ে যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রয়াত প্রবীর ঘোষ তাঁর অলৌকিক নয়, লৌকিক গ্রন্থের চতুর্থ খণ্ডে লিখেছেন ,,,, এক প্রশ্নের উত্তরে শ্রী শ্রী সারদা মা স্বামী জ্ঞানাত্মনন্দজীকে বলেছিলেন, ঠাকুর (শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব) বলেছিলেন যে একশ বছর পরে আবার আসবেন।,,,,,,,, শ্রী শ্রী সারদা মা বলেছেন, ঠাকুরের থাকবে সন্ন্যাসীর বেশ। তিনি যে বাউল বেশে আসবেন বলেছেন। বাউলবেশ – গায়ে আলখাল্লা , মাথায় ঝুঁটি, এতখানা দাড়ি। বললেন , বর্ধমানের রাস্তায় দেশে যাব, পথে কাদের ছেলে বাহ্য করবে, ভাঙা পাথরের বাসন হাতে, ঝুলি বগলে। বর্ধমানের রাস্তা কেন? প্রশ্নের উত্তরে মা বললেন, এইদিকে দেশ ( জন্মস্থান) ।( শ্রী শ্রী মায়ের কথা, পৃষ্ঠা ৩০১)
রাজ্যে যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রয়াত প্রবীর ঘোষ তাঁর অলৌকিক নয়, লৌকিক চতুর্থ খণ্ডে লিখেছেন যোগী যোগানন্দ সর্বতীর্থ বর্ধমানের একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ১০ জুলাই ,’৮৭ এক এফিডেফিটকরে দাবি করেছেন, যুগাবতার শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব লীলা সংবরণ করার পর পুনরায় নব কলবরে সপার্ষদ একশত বৎসর গতে অবতীর্ণ হওয়ার বৃত্তান্ত আমি অপ্রাকৃতিক জ্ঞান চক্ষু দ্বারা প্রত্যক্ষ করিয়াছি এবং তাঁহাদের বর্তমান স্থূল শরীরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কোন ব্যক্তি বা সংস্থা গ্রহণ করলে আমি তাঁহাদের সনাক্ত করিতে সক্ষম , ইহা আমার জ্ঞানমতে সত্য। ( দে’জ, পৃষ্ঠা ২৬৪)
প্রয়াত প্রবীর ঘোষ এই গ্রন্থে আরও লেখেন, শুধু এই এফিডেফিট করেই থেমে থাকেননি যোগী আনন্দ। তিনি যে বাস্তবিকই সপার্ষদ রামকৃষ্ণদেবকে দর্শন করেছেন , তাঁর এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য রেজিস্ট্রি ডাকে চিঠি পাঠালেন রামকৃষ্ণ মিশনের গম্ভীরানন্দজীকে, ইসকনের সেক্রেটারিকে এবংতৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে।,,,,,, যোগী যোগা নন্দের কথায় ১৯৮৫ সালে হিমালয়ে থাকাকালীন তিনি দৈব আদেশ পান , এবং তারপর শ্রীগুরু রামকৃষ্ণদেবের ইচ্ছা অনুসারেই তিনি আদালতে এফিডেবিটের মাধ্যমে জনগণকে জানতে চেয়েছিলেন ,রামকৃষ্ণদেবের সপার্ষদ জন্মগ্রহণ করেছেন। জিজ্ঞাসা করেছিলাম , সপার্ষদ মানে, তাঁরা সংখ্যায় কতজন? লিখে উত্তর দিলেন , ঠাকুর রামকৃষ্ণের আঠারো জন ঘনিষ্ঠ ভক্তই জন্মেছেন। অন্নদা ঠাকুর তাঁর স্বপ্নজীবন গ্রন্থের ২২০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন , রামকৃষ্ণ তাঁকে দেখা দিয়ে বলেছিলেন, আমার গতজন্মের আঠারো জন ভক্ত একশ আঠাশটি শরীর চালনা করে তোমার কাজের সহায়তা করতেআবার বাংলায় যাচ্ছে।( পৃষ্ঠা ২৬৬)
যোগী যোগানন্দের ( বাঁদিকে) দাবি, পূর্বজন্মে তিনিই ছিলেন রামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ শিষ্য স্বামী অদ্ভুতানন্দ ( ডানদিকে)।
যোগানন্দ মহারাজ নিজের ব্যাপারে প্রবীর ঘোষকে জানান, গতজন্মে তিনি ছিলেন স্বামী অদ্ভুতানন্দ। রামকৃষ্ণ চার অংশে বিবেকানন্দ তিন অংশে জন্ম নিয়েছেন। শুধুতাই নয়, প্রবীর ঘোষ অতীতে ছিলেন কালিদাস এবং গতজন্মে ছিলেন বিদ্যাসাগর। এরকমটাই দাবি করেন। যোগী যোগানন্দ আরও বিষ্ফোরক দাবি করে লিখিতভাবে বলেছিলেন, দুঃখ তাঁকে রামকৃষ্ণ মিশনও কম দেয়নি? তারই ফলশ্রুতিতে যোগী যোগানন্দ লিখলেন, বিনীতভাবে জানাই হিন্দু- ধর্মের শ্বাশত অনুশাসন ” ব্রহ্ম বাক্য নিষ্ফল হবে না” কি মিথ্যা বলিয়া পরিগণিত হইবে? ঠাকুর রামকৃষ্ণের পুনর্জন্ম যদি না হয় তাহা হইলে হিন্দুধর্ম শাস্ত্র ও রামকৃষ্ণ তত্ত্ব মিথ্যা বলিয়া পরিগণিত হইবে।,,,,,,,( চলবে)
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল ১৯ আগষ্ট ২০২৪