*
দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক : ভারতের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ নোবেল স্মৃতি পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন ২০০৪ সালে৩ জানুয়ারি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে বিজ্ঞান ও বাস্তব যৌক্তিকতা শীর্ষক ভাষণে বলেছিলেন, এদেশে ধনী- দরিদ্রের বৈষম্য এতই বাড়ছে যে অচিরেই ভারত দুভাগে ভাগ হয়ে যাবে _ একভাগ হবে ক্যালিফোর্নিয়া এবং আর একভাগ হবে সাব সাহারা আফ্রিকা। অমর্ত্য সেন সেই বক্তব্যের ধারাবাহিক প্রতিফলন দেখতে চলেছি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতা প্রেস ক্লাবে এ ফোরাম অফ দি সিভিল সোসাইটি ব্যাংক বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চ একটি সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে। সংগঠনে যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্ব রঞ্জন রায় সৌম্য দত্ত জানান, বেসরকারি হাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলিকে তুলে দিয়ে দেশকে বিক্রি করার যে চক্রান্ত দেশের কেন্দ্রীয় সরকার করছে তার প্রতিবাদ জানাতেই একবছর আগেই জুলাই মাসে এই অরাজনৈতিক সংগঠন গড়েছেন রাজ্যের সাধারণ নাগরিকেরা। আমরা লক্ষ্য করছি, দেশে যে পরিমাণ আর্থিক জালিয়াতি হচ্ছে তার ৬৫ শতাংশ প্রবীণ নাগরিক। যত ব্যাংক ও বীমা সংস্থা বেসরকারি হাতে যাবে ততই জালিয়াতি বাড়ছে। এবারের বাজেট চমকপ্রদ হতে চলেছে বলে রাষ্ট্রপতি যে মন্তব্য করেছেন তাতে অশনি সংকেত দেখছি ব্যাংক বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়তে চলেছে। ইতিমধ্যেই মোদী সরকার দেশের সব সম্পদ পুঁজিপতিদের হাতে বেচে দিচ্ছে। আমরা কোন রাজনৈতিক দলে নেই। আমাদের মধ্যে কেউ ব্যাংক কর্মচারীও নিয়ম। অতি সাধারণ নাগরিক। আমাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যদি কেউ জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমরা জীবন দিয়ে রুখব । এদিনের অনুষ্ঠানে ব্যাংক প্রতারণার শিকার কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।
এদিন ব্যাংক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও সংগঠনের তরফে সৌম্য দত্ত জানান, ইতিমধ্যেই আমরা লিগ্যাল সেল খুলেছি।আমাদের সঙ্গে ৯৮৩০০৪৪৭৩৭ নম্বরে যোগাযোগ করলে প্রতারিত মানুষদের আইনি সাহায্য দিয়ে পাশে দাঁড়াবো। মনে রাখা দরকার ব্যাংকে আধার সংযোগের জন্যই জালিয়াতি হচ্ছে প্রতারকদের কাছে গ্রাহকের নাম ধাম শুধু নয়, ব্যাংকের কোন শাখায় কোন আধিকারিক কাজ করছেন সব জালিয়াতদের নখদর্পণে। কিভাবে সম্ভব? আমরা বেশ কিছু প্রতারিত গ্রাহকদের সঙ্গে আইনি লড়াই করে অনেককে লুঠ হয়ে যাওয়া টাকা ব্যাংক থেকে
আদায় করতে পেরেছি। শুধু ব্যাংক নয়, বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে আমরা আন্দোলনে আছি। এখন আমরা শীর্ষ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। লোকসভা নির্বাচনে আমরা সভা করে নো ভোট টু বিজেপি বলেছি। বিজেপি কোমর কমজোরী হয়েছে এবার তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠছে।
সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্যসভার সদস্য প্রয়াত দীপেন ঘোষ তাঁর উদারনীতির মুখাবয়ব বইতে এসো রক্ষা করো দেশের সম্পদ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছিলেন,১৯৫১ সালে সারা দেশে বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট সংখ্যা ছিল যেখানে ৫৬৬, তা ১৯৬৯ সালে ব্যাংক জাতীয়করণের আগে এসে দাঁড়ায় মাত্র ৮৯- এ।১৮ বছরে ৪৭৭ টি বেসরকারী ব্যাংক পাততাড়ি গুটিয়েছিল আমানতকারীদের পথে বসিয়ে। যারা থেকে গিয়েছিল বড় বড় পুঁজিপতি মালিকাধীন ব্যাংকগুলো, তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে নিজেদের কারবারে খাটাতো, সেই বিনিয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই ছিল সন্দেহজনক। অথচ এদে হাতেই আবার সঁপে দিতে চলেছে বিজেপি – জোট সরকার ব্যাঙ্কিং শিল্প।( পৃষ্ঠা ৫৯)
প্রয়াত দীপেন ঘোষ পরিসংখ্যানে জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির হেফাজতে গচ্ছিত আছে এখন প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ কোটি টাকার আমানত। কিন্তু এর ৬৯.২ শতাংশই পাওয়া গেছে ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র আমানতকারীদের কাছ থেকে। বেসরকারী কোম্পানিগুলির অংশ হলো মাত্র ৩.৬ শতাংশ। যদিও মোট অগ্রিম ও ঋণের পরিমাণে ৫০ শতাংশেরও বেশি ভাগ বসিয়েছিল তারাই। এতেও তারা সন্তুষ্ট নয়। তারা এই আমানতের পুরোটাই ভাগ নিতে চায়।( পৃষ্ঠা ৬০)। দীপেনবাবু স্পষ্ট বলেছিলেন, লগ্নি পুঁজির খুবই অভাব দেখ দিয়েছে। চড়া সুদে টাকা নেওয়ার চেয়ে ব্যাংক থেকে
সাধারণের টাকা তুলে শেয়ারে খাটিয়ে মুনাফা করা সুবিধে হয় ব্যাংকগুলি যদি কব্জা করা যায়।
এই সংগঠনের সৌম্য দত্ত বলেছেন, ওঁরা দিল্লি গিয়ে কপিল সিব্বলের সঙ্গে কথা বলে আইনি প্রক্রিয়া রূপ দেবেন। কিন্তু সৌম্যবাবু নিশ্চয়ই জানেন, কপিল সিব্বল যে কংগ্রেস দলের নেতা, সেই কংগ্রেস দলের সর্বোচ্চ নেত্রী সোনিয়া গান্ধী কিন্তু বিজেপি যখন সংসদে ব্যাংক জাতীয়করণ আইন সংশোধন করার বিল আনার প্রস্তুতি নিয়েছিল তখন বণিকসভায় গিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন তার দল এই বিলের বিরোধিতা করবেন না।