সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : ২০২৩ এ আমেরিকার এক সমীক্ষক সংস্থা পিউ ( পি ই ডব্লিউ) ২৪ টি দেশ নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায় মোট ২৭ হাজার ২৮৫ জনকে নিয়ে। ফল বলছে, দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষ দেশের উন্নতির জন্য স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রী শাসক চান।৭২ শতাংশ চান সেনা শাসন।
স্বৈরাচারী শাসক চান যাঁরা তাঁদের যুক্তি, উদার গনতন্ত্রে দেশে গঠনমূলক কাজ করতে পারেন না শাসক। তাই চাই স্বৈরাচারী শাসক। আবার দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে দেশে চাই সেনা শাসন। শুধু আমাদের দেশেই নয়, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, এশিয়া, সাহারান , আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার জনগণও তাই চান। তবে শতাংশের হিসেবে প্রথমে ভারত। এরপর কেনিয়া ৫২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ৫১ শতাংশ। রাজ্যের অবহেলিত বিজেপি নেতা প্রবীণ তথাগত রায় মন্তব্য করে বলেছেন, স্বৈরাচারী শাসক চাওয়ার পেছনে কিছু যুক্তি সঠিক হলেও সেনা শাসন ঠিক নয়।
মানুষের সেনাদের প্রতি একটা শ্রদ্ধা থেকেই এই ধারণা। তবে সেনাশাসন কতটা মারাত্মক হতে পারে মানুষের ধারণা নেই। পাকিস্থান বা যেসব দেশে সেনা শাসন হয়েছে সেই সম্পর্কে মানুষের স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, গত ৭৬ বছরে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি মানুষের বিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তাই তাঁরা এক স্বৈরাচারী শাসক চাইছেন।আবার পাশাপাশি অনেকে মনে করছেন সেনা শাসন হলে দেশ দুর্নীতি মুক্ত হবে। সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন নির্বাচিত সরকারি পদক্ষেপ দেশের বিচারপতিরা অসাংবিধানিক বলে রায় দিচ্ছেন। ফলে আদালত আর সেনার প্রতি আস্থা বাড়ছে।
এই প্রেক্ষিতে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের তারিখ নির্ঘণ্ট প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। বিকেল তিনটেয় দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে লোকসভা নির্বাচনের দেশব্যাপী তারিখের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশার বিধানসভার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হল। এছাড়াও কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভার উপনির্বাচনের দিনও ঘোষিত হল।২০১৯ সালে রাজ্যে সাত দফায় ভোট হয় ৪২ টি কেন্দ্রের। এবারেও জল্পনা ছিল তাই। ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে ৮ দফা ভোট হয়। অনেকের ধারণা, এবার রাজ্যে নয় দফা ভোট হবে।সব জল্পনা উড়িয়ে নির্বাচন কমিশন সাত দফার ভোট ঘোষণা করল। মনে রাখতে হবে আগেই এরাজ্যে কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বাংলায় সাড়ে ন’শো কোম্পানি বাহিনী চেয়েছে।
ভোট ঘোষণার আগেই চলে এসেছে দেড়শ কোম্পানি। রাজ্যের শাসক দলের দাবি ছিল এক দফায় ভোট করতে হবে। অন্য দিকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, কংগ্রেস, বাম একদফা ভোটের বিরোধী। মূল কারণ বিরোধী দলগুলির সংগঠন শাসক দলের মত মজবুত নয়। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত বুথ ও নির্বাচনী কেন্দ্রে কর্মী কম। বেশি সংখ্যায় নির্বাচন হলে এক কেন্দ্র থেকে অন্যত্র কর্মী নিয়ে যাওয়া সহজ হবে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনও জানে, অবাধ ও সুষ্ঠ ভোট করাটা তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জ। অন্য রাজ্য থেকে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনী এখানকার পথঘাট ও নাগরিকদের মনস্তত্ত্ব বোঝেন না। ফলে শাসক দল তাঁদের প্রভাবিত করতে পারে। তাছাড়া এখানকার শাসক দলের ভোটকর্মীদের ভোট করানোর কৌশল সম্পর্কেও অতটা ধারণা নেই। সুতরাং বেশি দফায় ভোট হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী বেশি সংখ্যায় নিয়োগ করা যাবে।
দেড়মাসব্যাপী রাজ্যের ৪২ টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণের প্রথম দিন শুক্রবার ১৯ এপ্রিল। মোট ৭ দফার নির্বাচনে ৪২টি কেন্দ্রে ভোট। শুক্রবার ১৯ এপ্রিল যে কেন্দ্রগুলিতে ভোট হতে চলেছে সেগুলি হল কোচবিহার,আলিপুরদুয়ার,ও জলপাইগুড়ি। পরবর্তী ভোট শুক্রবার ২৬ এপ্রিল। সেদিন ভোট হবে দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাটে। তৃতীয় দফায় ভোট হবে মঙ্গলবার ৭ মে। মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদে। চতুর্থ দফায় ভোট সোমবার ১৩ মে। কেন্দ্রগুলি হল বহরমপুর, বোলপুর, বীরভূম, কৃষ্ণনগর, আসানসোল, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান দুর্গাপুর ও রানাঘাট। পঞ্চমদফায় ভোট সোমবার২০ মে। ভোট হবে বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হুগলি, শ্রীরামপুর, আরামবাগ, উলুবেড়িয়া ও হাওড়ায়।২৫ মে শনিবার ভোট পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, ঝাড়গ্রাম তমলুক কাঁথি, ঘাটাল ও মেদিনীপুরে শেষ ভোট সপ্তম দফায় ১ জুন শনিবার ডায়মন্ড হারবার, বসিরহাট, জয়নগর, দমদম, বারাসত, কলকাতা দক্ষিণ, কলকাতা উত্তর, মথুরাপুর ও যাদবপুরে।
তৃণমূল দলের সব তালিকা প্রকাশ হলেও বিজেপি এখন পর্যন্ত ১৯ টি ও বামদল ১৬ টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।কংগ্রেস এখনও একটি আসনেও প্রার্থী ঘোষণা বিকরেনি। আই এস এফ আটটি আসন চায়। বামদলের সঙ্গে আলোচনাচলছে । সি পি এম শরিকদের সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে। সম্ভবত দুয়েকদিনের মধ্যে বাম , কংগ্রেস আই এস এফের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়ে যাবে। উল্লেখ করা যায় উত্তরপ্রদেশে ৮০ টি আসনের ভোট হবে আট দিনে। বিহারের ৪০ টি আসনেও ভোট হবে সাতদিনে। ,৪ জুন মঙ্গলবার ভোটের ফল ঘোষণা শুরু । দেশের সব আসনের ফল বেরোতে বেরোতে মধ্যরাত পেরিয়ে যাবে সন্দেহ নেই। রাজ্যে তৃণমুল ও বিজেপি বিরোধী ভোট কি বাম কংগ্রেসকে এগিয়ে দেবে? বাম কংগ্রেস ভোট শতাংশ যদবাড়ে লাভের গুড় কে খাবে? বিশ্ব জুড়েই ভোগবাদ যেমন বাড়ছে , রাষ্ট্রের স্বৈরতন্ত্রী মনোভাব ততই বাড়ছে। দক্ষিণপন্থী শক্তির শক্তি বাড়ছে। সমীক্ষা তো তাই বলছে।