পর্ব : ৫৯
মহাভারত নারীর অন্তঃপুর।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধায় ও রমলাদেবী তাঁদের ভারতীয় সমাজে প্রান্ত বাসিনী গ্রন্থে মহাভারতের নারী সমাজের উল্লেখ করতে গিয়ে লিখেছেন,,,,,, একস্থানে ( মহাভারত ১/১২২) পাণ্ডুরাজা রাণীকে বলছেন যে, প্রাচীন স্ত্রীলোকেরা ছিল অনাবৃতা। জনৈক টীকাকার – এর অর্থ করেছেন অপ্রতিভিদ্ধভোগ্যা, অর্থাৎ যে কোন লোকের সংভোগ্যা। কুমারী অবস্থা থেকে আরম্ভ করে তারা বিবাহিত জীবনেও পুরুষান্তরের সঙ্গে সঙ্গত হত এবং এতে তাকে অপরাধী করা হ’ত না। রাজার কথা থেকে মনে হয়, তাঁর যুগেও পশুপ্রকৃতির লোকেরা এ’রকম আচরণ করত।( পৃষ্ঠা ২৭)
বৈদিক যুগের জুয়া খেলায় স্ত্রীকে বাজি রাখার প্রথা মহাভারতে মেলে।
এই লেখকদ্বয় আরও লিখেছেন, রামায়ণ ও মহাভারত যুগের আগে বৈদিক যুগে যৌনতা ও নারী সম্পর্কে এমন কিছু সামাজিক প্রথার উল্লেখ আছে, তার প্রতিধ্বনি মেলে রামায়ণ মহাভারতে। যেমন জুয়ায় স্ত্রীকে বাজি রাখা। ঋগবেদের ( ১/১১৮/৭,৮/২/১২ ইত্যাদি) পাতায় পাতায় এমন বহূ উপাখ্যান। তাঁরা লিখেছেন, যজুর্বেদে’র বাজসনেয়ী সংহিতায় (২৩) আছে যে, একটি যজ্ঞের অঙ্গস্বরূপ পুরোহিত ও রাণীর সম্ভোগ হত। এই বেদে লিখিত নানাবিধ অনাচারের মধ্যে আছে নরনারীর অবৈধ যৌন সংযোগ (১/১৩৪/৩,৭/৯/১); দাম্পত্য জীবনে যৌন প্রবৃত্তির বশে বিশ্বাসঘাতকতা (৪/৫/৫;৭/১০৪/১৭); পিতা কন্যা, ভ্রাতা- ভগ্নীর মধ্যেও যৌন মিলন ও অবৈধ গর্ভোৎপত্তি (৬/৫৫/৪,১০/১০); বিধবা নারী ও দেবরের যৌন মিলন (১০/৪৭/২), ভ্রূণনাশ (২/২৯/১); চৌর্য ও দস্যুতা (১/৩৩/৪-৬-৭,৭/১/৪২ ইত্যাদি), প্রতারণা (২/২৩/৫,৫/৩৪/৭)। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য এই যে, স্মৃতির প্রমাণ থেকে জানা যায়, সমাজে নিয়োগ প্রথা ছিল। এই প্রথানুসারে অপুত্রক নারী একটি পুত্র জন্ম না হওয়া পর্যন্ত দেবরের সঙ্গে সহবাস করত।
অথর্ব বেদে নারী সংম্ভোগে সম্পর্কের কোনো বাছবিচার ছিল না।
অথর্ববেদ প্রসঙ্গে লেখকদ্বয় লিখেছেন, অথর্ববেদে স্বেচ্ছায় গর্ভপাতাদি পাপের প্রায়শ্চিত্ত বিহিত আছে। ব্রাহ্মণ নারীর অপহরণ অথবা তার সঙ্গে অবৈধ যৌন সম্পর্ক মহাপাপ বলে গণ্য হ’ত। বেশ্যাবৃত্তি রীতিমত চলত বলে মনে হয়(৫/৭/১০)। এই বেদে (৮/৬/৭) পিতা কন্যা, ভ্রাতা- ভগ্নীর যৌন সম্বন্ধে উল্লেখ আছে। জীবনে যৌন সংম্ভোগ যে অতি সুখকর বলে গণ্য হত, তার প্রমাণ এই বেদে (৪/৪) ও কৌশিক সূত্রে (৪০/১৪) রতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা। এই বেদে (১৪/৬) বিবাহনুষ্ঠান সংক্রান্ত একটি মন্ত্র প্রসঙ্গে মহা নগ্নী’র কল্পনায় ধর্মীয় ব্যাপারে কামশাস্ত্রের প্রভাব লক্ষিত হয়।( চলবে)
আগামী পর্ব শুক্রবার ,৮ নভেম্বর,২০২৪