পর্ব : ৪৩
মহাভারতের যুগে যুদ্ধেও গণিকা শিবির তৈরি হত।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: মহাভারতে বিবাহে বেশ্যা যৌতুক পাওয়া নিয়ে এক দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন কঙ্কর সিংহ তাঁর ধর্ম ও নারী গ্রন্থের প্রাচীনভারতে গণিকা শীর্ষক অধ্যায়ে। তিনি লিখেছেন, মহাভারতে নানা ভূমিকায় গণিকাদের দেখা যায়। যুদ্ধযাত্রার সময়ে পাণ্ডব সেনার সঙ্গে যুদ্ধের উপকরণ ছাড়া বহু গণিকাও শকটে ছিল। লেখক এখানে উল্লেখ করেছেন সুকুমারী ভট্টাচার্যের লেখনী থেকে। যুদ্ধের আগে যুধিষ্ঠির গণিকা শিবির পরিদর্শন করেন। সম্ভবত তিনি জানতেন দ্রুত যুদ্ থামার সম্ভাবনা নেই। ফলে সেনারা কতদিন স্ত্রী বঞ্চিত থাকবেন বলা যায় না। সুতরাং তাদের যৌ তৃপ্তির ব্যবস্থা না রাখলে বিদ্রোহ হতে পারে। এছাড়াও বহু দূরবর্তী রাজ্যের রাজারা এসেছেন যুদ্ধে পাণ্ডব পক্ষে লড়াই করতে। সেখানে অতিথি সেবার ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কিনা সেটাও দেখার কর্তব্য ছিল যুধিষ্ঠিরের।
অশ্বমেধ যজ্ঞ করে রাজারা গণিকা দান করতেন ব্রাহ্মণ ও আমন্ত্রিত রাজাদের।
যুদ্ধে জয়লাভের পর বিজয় উৎসব পালনে গণিকাদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। যুধিষ্ঠির যখন অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন তখন নিমন্ত্রিত রাজাদের বহু গণিকা উপঢৌকন দেন। ব্রাহ্মণরাও পান।ইয়েট দানে দাতা স্বর্গবাসী হন। এমন বিধি শাস্ত্রে আছে। শুধু যজ্ঞে নয়, শ্রাদ্ধে, যুদ্ধ জয়ে দানে , দক্ষিণায় তর্পণ কার্যে গণিকা দান ছিল নিয়ম। ব্রাহ্মণ পুরোহিতের প্রাপ্তি এই দান যখন অসংখ্য হয়ে যেত তখন চেখে দেখে কম সুন্দর ও বেশি বহিষ্কার গণিকাদের অনুগত সেবকদের দান করতেন বা গণিকা বিক্রির বাজারে বেচে দিতেন। বাড়তি রোজগার হতো।
পুরাণে আছে, যযাতি জায়া দেবযানী যৌতুক হিসেবে পান ছেলেবেলার সঙ্গিনী দাসী শর্মিষ্ঠাকে। রাজার নজরে সেও ছিল। তিনি শর্মিষ্ঠার গর্ভে উৎপন্ন করেন তিন পুত্রের। পাণ্ডববংশের রাজা যযাতিকে ছেড়ে দুই পুত্রকে নিয়ে পিতৃ গৃহে ফিরে যান দেবযানী। পুরাণে এমন দ্বিতীয় ঘটনা নেই। দেবযানী ছিলেন দানবাচার্য শুক্রাচার্যের কন্যা ।
মনুর বিধানে বর্ণ অনুযায়ী গণিকাগমনের নির্দেশ ছিল। তবে ব্রাহ্মণদের জন্য কোনো নিয়ম ছিল না। ব্রাহ্মণের জন্য সব বর্ণের কন্যা ছিল ভোগ্যা । তবে নিম্ন বর্ণের কন্যাকে শয্যার ভোগ করলেও তাঁদের ঘরে অন্ন গ্রহণ ছিল নিষেধ। সেযুগে গণিকা বৃত্তিতে আসার বেশ কিছু কারণ ছিল।এক, স্বজাতি পাত্রের সন্ধান না মেলা। দুই, নারীর প্রতি পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার, তিন, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অভিভাবক কন্যাদান করতেন মন্দিরে। চার, অকাল বৈধব্যের কারণে, পাঁচ, ধর্ষিতা ও ওফ্রিতা নারীদের সামাজিক বহিষ্কারের কারণে। সেজন্যই বোধহয় রামচন্দ্র বলেছিলেন
সীতাকে, তোমাকে গ্রহণ করতে পারব না তুমি কুকুরের চাটা ঘিয়ের মত। ঈশ্বরের যেমন অষ্টত্তর শতনাম। তেমন গণিকাদেরও ছিল বহু নাম।( চলবে)
পরবর্তী পর্ব : আগামী ১৩ সেপ্টেম্বরে, শুক্রবার ,২০২৪