বেশ্যার বারোমাস্যা

পর্ব: ৪২

সিন্ধু সভ্যতার ব্যবসায়ী পণি।

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : পর্ব ৪১ এ আপনাদের জানিয়েছিলাম ঋগ্বেদের ১০ ম মণ্ডলের একটি পূর্ণ সূক্ত। যেখানে কথোপকথনে আর্যদের ভারত আগমনের উদ্দেশ্য। বিষয়টি সহজ সরল ভাষায় লেখক স্বপন কুমার বিশ্বাস লিখেছেন তাঁর ভারতবর্ষের মূলনিবাসী ও আর্য আক্রমণ গ্রন্থে । সেখানে পণিগণ অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা , সওদাগরেরা জিজ্ঞাসা করেন আর্য রমণী সরমাকে , তিনি নদী পেরিয়ে এলেন কি করে? সরমার জবাব , ইন্দ্রের দূতীস্বরূপপ্রেরিত হয়ে আমি এসেছি। হে পণিগণ, তোমরা যে বিস্তর গোধন রেখেছ তা গ্রহণ করাই আমার ইচ্ছা। নদীর জল আমি উলঙ্ঘন করে এসেছি।

আর্য আগ্রাসনে সহায়ক নৃত্য পটিয়সী সুন্দরী গুপ্তচর। ঋগ্বেদ গ্রন্থে এমন এক চরিত্র সরমার কথা উল্লেখ মেলে।

এই কথোপকথনে মূল যে বিষয়টি উঠে এসেছে সেটা হল ব্যবসায়ীরা সরমাকে বলেন, এত দূর থেকে যখন এসেছ আমরা তোমার যে কটি গোধন দরকার উপহার দিচ্ছি। সরমা জানায়, ব্যবসায়ীদের কাছে যত গোধন আছে সব না দিলে ইন্দ্রের হাতে সবাই বধ হবেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, তোমাকে ভয় প্রদর্শন করানোর জন্যই পাঠানো হলেও আমরা তোমাকে ভগ্নীসম মনে করছি। তাই গোধন উপহার দিতে চাই। সরমা’র উক্তি ছিল ভাইবোন সম্পর্ক বুঝি না ,,,,,( ১০/১০৮/১….১১ ঋগ্বেদ।

আর্য আগ্রাসন সিন্ধু উপত্যকায়।

অর্থাৎ সেই যুগে আর্যরা প্রথমে কোনো নগর দখল করতে আসত প্রথম সারিতে রাখত নৃত্য পটিয়সী মহিলা সুন্দরী গুপ্তচর। সুরমা তেমনই চরিত্র। এই প্রসঙ্গে সমুদ্র বিশ্বাস তাঁর দুর্গাপুজোর অন্তরালে গ্রন্থে লিখেছেন, প্রাচীন বা পুরাকালে দেবতা বা আর্যদস্যুরা নারী ও ব্রাহ্মণ্য ঋষিদের গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করতেন। পুরাণ শাস্ত্রে তার ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে। তবে নারীরা একাজ করতে বাধ্য থাকত। আর ঋষিরা একাজ করে রাজ পরিবার থেকে মহামূল্যবান পুরষ্কার পেত। সেকালে নারীর কোনও মান- মর্যাদা ছিল না। আর্য মহিলাদের বিক্রয় করা হত। আর্য বিবাহপ্রথা হল, কন্যা বিক্রয়ের প্রমাণস্বরূপ পরিভাষাগত শব্দ অনুযায়ী পুত্রের পিতা গো- মিথুন দিয়ে কন্যাকে নিয়ে যেতেন। বালিকাটিকে গো – মিথুনের পরিবর্তে বিক্রয় করা হল বলা যায় একটি প্রণালী। গো- মিথুন অর্থ একটি গাভী ও একটি বলদ যা একজন বালিকার মূল্যের জন্য যুক্তিযুক্ত বলে মনে করা হত। শুধুমাত্র বালিকারাই যে তাদের পিতার দ্বারা বিক্রীত হত তা নয়, স্বামীরাও তাদের স্ত্রীদের বিক্রয় করতেন। হরি বংশের ৭৯ তম অধ্যায়ে বলা বিবরণে আছে, কেমন করে যজ্ঞকারী পুরোহিতকে তাঁর দক্ষিণা দেওয়ার ধর্মীয় আচার -অনুষ্ঠান হয়, যার নাম পূণ্যব্রত।

বৈদিক যুগে যৌতুকে মিলত সুন্দরী নারী।

লেখক স্পষ্ট লিখেছেন,,,,,,,, এখানে বলা হয়েছে যে ব্রাহ্মণ স্ত্রীদের তাঁদের স্বামীর কাছে থেকে ক্রয় করতে হবে এবং সেই স্ত্রীদের যজ্ঞকারীদের পুরোহিতকে দক্ষিণা হিসাবে দেওয়া হবে । এই বিবৃতি থেকে এটা নিশ্চিত যে , ব্রাহ্মণরা তাঁদের স্ত্রীদের কিছুর পরিবর্তে অবাধে বিক্রয় করতেন।শুধু তাই নয, আর্যরা তাদের স্ত্রীদের খাজনার পরিবর্তে সহবাসের জন্য অন্যদের দিতেন।( প্রকাশক, জনমন, পৃষ্ঠা ১১/১২) সমুদ্র বিশ্বাসের বক্তব্যের সমর্থন মিলছে কঙ্কর সিংহের ধর্ম ও নারী গ্রন্থে। সেখানে তিনি প্রাচীন ভারতে গণিকা শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন, ক্ষত্রিয় রাজ পুরুষেরা যেমন ব্রাহ্মণদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারী দান করে তাদের সন্তুষ্ট রাখতেন তেমনি তারাও নারী উপহার পেতেন যৌতুকে। মহাভারতেই পাওয়া যায় দ্রৌপদীর বিবাহে একশত সুন্দরী তরুণী যৌতুকের সাথে ছিল। পাণ্ডবরা কি সেই নারীদেরও ভাগ করে নিয়েছিলেন?( চলবে)

পরবর্তী পর্ব ৯ই সেপ্টেম্বর, সোমবার ,২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *