পর্ব: ২৮
পিতামহ ব্রহ্মা ও পৌত্রী ঊষার যৌন সম্পর্কের কথা উল্লেখ আছে পুরাণে।
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বৈদিক যুগে আর্য গোষ্ঠীর প্রধান দেবতা ছিলেন পুরুষ। ব্রহ্মা। ঊষা ছিলেন প্রজাপতি দক্ষের কন্যা। ঊষার রূপে কামাসক্ত হয়ে মিলিত হন। দুজনেই সে সময়ে মৃগরূপ ধারণ করেন। দেবরাজ ইন্দ্রকে দেখা গেছে গৌতমঋষির অহল্যাতে উপগত হতে। বিষ্ণুকে দেখা গেছে অনার্য রাজা জলন্ধরের স্ত্রী বৃন্দা ও শঙ্খচূড়ের স্ত্রী তুলসীকে প্রতারিত করে যৌন মিলন ঘটাতে। সপ্তর্ষির সাত স্ত্রী। কলা, অনসূয়া ক্ষমা, হবির্ভু, সন্নতি, শ্রদ্ধা ও অরুন্ধতীকে কামার্ত করে ভোগ করেছেন ইন্দ্র। চন্দ্র দক্ষের ২৭ কন্যাই শুধু নয়,৬০ কোটি অপ্সরাকে নিয়ে যেতে মেতে থাকবেন। এমনকি নিজের ও দেবতাদের গুরু বৃহস্পতির স্ত্রী তারাও বাদ যাননি। যার ফলে তারার সন্তান হয় বুধ।
শ্রীকৃষ্ণের ১৬ হাজার ১০০ স্ত্রী?
দেশের যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রয়াত প্রবীর ঘোষ তাঁর অলৌকিক নয়, লৌকিক গ্রন্থে পঞ্চম খণ্ডে লিখেছেন,,,,,,,শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী সংখ্যা ১৬ হাজার ১০০। এঁরা সকলেই গোপবালা ছিলেন না। নানা দেশ থেকে এইসব সুন্দরীদের অপহরণ করে এনে নিজের হারামে পুরেছিলেন। এই প্রতিটি সুন্দরীর যৌবনই তিনি ভোগ করতেন,,,,,,, পান থেকে চূন খসলেই মুনি ঋষিরা রাগে কাঁপতে কাঁপতে শাপ দিতেন। বিয়ে করতেন। তারপর রাজাদের আমন্ত্রণে রাণীদের গর্ভে সন্তান উৎপাদন করতে। সুন্দরী অপ্সরা বা বারবণিতা দেখলে এতই উত্তেজিত হতেন যে রেত:পাত হয়ে যেত।( দে’জ, পৃষ্ঠা ১৭৬)
হনুমান মায়ের স্বামীর সন্তান নন। হনুমানের পিতা পবন দেব।
বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদ ড:: অতুল সুর তাঁ দেবলোকের যৌন জীবন বইতে লিখেছেন ,,,, মৈথুন ধর্মটাই সেকালের সনাতন ধর্ম ছিল। যৌনতা যে আর্য সমাজে জলভাত ছিল তার প্রমাণ রামায়ণ মহাভারতেও আছে। রামায়ণের আদি কাণ্ডে পবনদেব রাজর্ষি কুশনাভের একশ রূপবতী কন্যাকে ধর্ষণ করতে যান। মেয়েরা বাধা দিলে পবনদেব তাঁদের শরীরে ঢুকে শরীর ভগ্ন করে দেন । হনুমানের পিতা কেশরীরাজ কিন্তু আইনত বাবা নন। রাণী অঞ্জনার গর্ভে হনুমান জন্মায় পবনদেবের ঔরসে। মহাভারতে আছে বরুণদেব চন্দ্রের কন্যা উতথ্যের স্ত্রী ভদ্রার রূপে মুগ্ধ হয়ে ভর করেন। দেবতাদের ডাক্তার অশ্বিনীকুমারদ্বয় শর্যাতি রাজার মেয়ে সুন্দরী সুকন্যা কে স্নানরতা অবস্থায় নগ্ন দেখে কামতাড়িত হন। জরাগ্রস্থ স্বামী ঋষি চ্যাবনকে ছেড়ে চলে আসার জন্য পরস্ত্রীকে ফুসলাতে ছাড়েননি।( প্রথম সংস্করণ , পৃষ্ঠা ৬২)
হিন্দু ধর্মে কূলগুরুর নবপরিণীতা কন্যার সঙ্গে যৌনতা ছিল পুণ্যের।
আর্য দেবতাদের মধ্যে যে পুরুষেরাই অবাধ যৌনতা করতেন তা নয়। মেয়েরাও কম যেতেন না। দক্ষকন্যা স্বাহা কামনা করতেন অগ্নিকে। অগ্নি কামনা করতেন সপ্তর্ষির স্ত্রীদের। স্বাহা তাই ছ বার ঋষিপত্নীর ছদ্মবেশে পৌরষত্বের স্বাদ নেন। শেষপর্যন্ত অগ্নির স্ত্রী হয়ে দেবলোকে গিয়ে কৃষ্ণের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। বৈদিক সাহিত্যে ভাইবোনের যৌনতার হাজার কাহিনী আছে। স্বয়ং ধর্মের প্রতীক যমরাজ রাজা সুদর্শনের স্ত্রী ওঘাবতীকে ভোগ করেন। সেকালে মেয়ে ঋতুমতী হলেই বিয়ে দেওয়া হত। প্রথম সতীত্বনাশের অধিকার ছিল কূলগুরুদের। যাকে বলা হত গুরুপ্রসাদী। এই ধারা বিদেশেও ছিল ।এই অবাধ যৌনতা যখন সমাজে বিশৃঙ্খলতা এনে দিল, তখন যৌনতাকে একটা বাঁধন দেওয়া হল। ( চলবে)
পরবর্তী পর্ব : ২৯ সোমবার ২২ জুলাই