গাড়ি বিক্রিতে নিশ্চিন্তে ন্যায্য দাম পেতে বিপ্লব এনেছে অটোবিক্স

*

শ্রীজিৎ চট্টরাজ : গাড়ি আবিষ্কারের প্রথম যুগে ঘণ্টায় গতি ছিল ৩.৬ কিলোমিটার। একটানা কুড়ি মিনিট গাড়ি চালানোর পর ইঞ্জিন গরম হয়ে যাওয়ায় থামাতে হত। সময়টা ছিল ১৭৬৯। এরপর বয়স বেড়েছে বয়সের। এখন সর্বোচ্চ গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার। সময় লেগেছে কমবেশি ২৫০ বছর। কলকাতার মানুষ জানলে অবাক শুধু নয়, গর্বিতও হবেন অবিভক্ত ভারতে প্রথম গাড়ি পথে নেমেছিলএই কলকাতা শহরেই। ফরাসি মডেলের ডিডিয়ন গাড়ির ক্রেতা ছিলেনকলকাতা নিবাসী এক ব্রিটিশ নাগরিক। এরপরে প্রায় চারবছর পর প্রথম ভারতীয় ছিলেন টাটা কোম্পানির জনক জামশেদজি টাটা যিনি গাড়ি কেনেন। ইতিহাস বলছে প্রথম দেশীয় প্রযুক্তিতে তিনটি গাড়ি নির্মাণ করেন বঙ্গতনয় কলকাতার বিশ্বকর্মা নামে পরিচিত বিপিন বিহারী দাস।সে গাড়ির ক্রেতা ছিল বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, মতিলাল নেহেরু ও মদনমোহন মালব্য এবং কলকাতা কর্পোরেশন। কিন্তু বাঙালির ইতিহাস চর্চার উদাসীনতায় হারিয়ে গেছে সে তথ্য।

কিন্তু বাঙালির গাড়ি প্রীতি ক্রমশ বেড়েই চলে। রবীন্দ্র পুত্র রথীন্দ্রনাথ ১৯৩৮ সালে কবিকে শান্তিনিকেতনে ঘোরাঘুরির জন্য কিনে দেন ১৯৩৩ মডেলের হাম্বার গাড়ি। গাড়িটি তিনি কিনেছিলেন পার্ক স্ট্রিটের শো রুম থেকে। ডা: নীলরতন সরকারের ছিল ৯ টি গাড়ি। গাড়ি জমানোর শখ ছিল প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়েরও। তাঁর ছিল চারটি রেনো, কলম্বিয়া, শেভ্রেলে ও স্টোরি। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্রের পছন্দ ছিল ষ্টুডিবেকার। সংগীত সম্রাঞ্জী গহরজান চড়তেন সেযুগের বিখ্যাত গাড়ি ন্যাশ। সত্যজিৎ রায় গাড়ি সম্পর্কে তাঁর স্মৃতিচারণে লিখেছেন, ঘরে বসে হর্ন শুনে গাড়ি চেনা যেত। ফোর্ড, শেভ, হামবার, উলসলি ,ডজ অস্টিন, ওল্ডস মবিল ওপ্যাল সিত্রোয়া,,,,,,,,, । বাঙালির আরেক সেরা আইকন উত্তমকুমারের কথা না বললেই নয়। প্রথম দিকে দুতিনবার গাড়ি বদল করলেও ষাটের দশকে কেনেন র‍্যাম্বলার গাড়ি। সবুজ রঙের গাড়িটি ছিল এ সি। সেযুগে এ সি গাড়ি কেনার কথা ছিল স্বপ্নের অতীত। এরপর ইম্পালা আমেরিকান ওল্ড মোবাইল গাড়ি ছিল তাঁর গ্যারাজে। ছিল মরিস অক্সফোর্ড। শেষে সাদা অ্যাম্বাসাডর। আগে বলা হত, লেখা পড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে। এখন একথার মূল্য নেই। পকেটে রেস্ত থাকলেই হল। সমীক্ষা বলছে,২০২৭/২৮ সালে ১.০৯ কোটি গাড়ি ভারতের বাজারে বিক্রি হবে ইন্ডিয়ান ব্লু বুক বলছে তেমনই হাত ফেরতা গাড়ির বিক্রি দাঁড়াবে ৭৩ বিলিয়ন ইউ এস ডলার।

আগামী চার বছরে ভারতে পুরানো গাড়ি বিক্রি বাড়বে ৩২.৪৪ কোটি মার্কিন ডলার।

গত ২২/২৩ এ হাত ফেরতা গাড়ি বিক্রি হয়েছে দেশে ৫১ লক্ষ। এই বাজার আগামী চার বছরে দাঁড়াবে ৩২.৪৪ কোটি মার্কিন ডলার। কোভিডের পর মানুষ খরচে সংযমী হয়েছে। হাত ফেরতা গাড়ি কেনায় যে মানসিক সংকীর্ণতা ছিল কাটিয়ে উঠেছেন। আগে একটি গাড়ি তার জীবনকালে ৫ বার হাতবদল হতো এখন বছর তিনেকের মধ্যেই গাড়ি বদল করছেন ভারতীয় ক্রেতারা। ফলে অসংগঠিত উপায়এক শ্রেণীর গাড়ির কেনাবেচার দালাল গোষ্ঠির উৎপত্তি। ক্রেতারা ন্যায্য দাম পেতেন না। এখন বিভিন্ন পেশাদার সংস্থা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে গাড়ি বিক্রেতাকে সাহায্য করছেন। এমনই এক নবীন সংস্থা অটোবিস্ক। মঙ্গলবার বিকেলে সংস্থার পক্ষে এক সংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন সংস্থার পক্ষে প্রতিষ্ঠাতা ও সি ই ও অমিত পারেখ।

তিনি বলেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বচ্ছতা, দক্ষতা দিয়ে বিক্রেতাকে ন্যায্য মূল্য ফিরিয়ে দিতেই ২০২০ তে এই সংস্থার সৃষ্টি। আমরা বিনামূল্যে গাড়ির মান নির্ণয় করি অত্যাধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে। সেই রিপোর্ট লিখিত আকারে বিক্রেতা ও আমাদের প্রায় শতাধিক পুরানো গাড়ির ডিলারদের কাছে পাঠাই নিলামের জন্য। সর্বাধিক মূল্যের ডিলারের দর পৌঁছে দিই বিক্রেতার কাছে। দুই পক্ষের সমঝোতায় হাতে হাতে চেক পেয়ে যান ক্রেতা। আমরা ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ২ শতাংশ মূল্য নিয়ে থাকি। পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় কর্মকাণ্ড চললেও আমরা দ্রুত দেশের অন্যান্য প্রদেশে ব্যাবসা পরিধি বিস্তৃতি ঘটাতে চলেছি। পুরানো গাড়ি কেনা বেচার প্রয়োজনীয় ঋণ জোগাড় , প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়ার কাজও অটোবিক্স করে থাকে। ক্রেতা বিক্রেতার সঙ্গে স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলার পথে ইতিমধ্যেই এই সংস্থা সুনাম অর্জন করেছে। মোবাইলে অটোবিক্স ক্লিক করলেই মুশকিল আসান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *