দিগদর্শন ওয়েব ডেস্ক : শুধু সময়ের অপেক্ষা। শুধু ইন্ডিয়া জোট নয়, এই রাজ্যের ফলে চমক দেখবেন, লিখে রাখুন আমার নামে। প্রবল আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও বিদায়ী সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। কলকাতা প্রেস ক্লাব আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে প্রতিবারের মত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ পেয়ে বৃহস্পতিবার আসেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রেস ক্লাবের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে সাংবাদিকরা এক অগণতান্ত্রিক পরিবেশে নিজেদের মহান পেশায় লড়াই করছেন। শাসকদলের চাপে অনেকে সময় ইচ্ছা ও স্বাধীন পর্যবেক্ষণে অপারগ হন। তবু তাঁরা কাজ করছেন। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন। অনেক প্রশ্নই হয়ত আমার জন্য ইতিবাচক হবে না। তবু আপনাদের পূর্ণ অধিকার আছে আমাকে বা আমার দলের কঠোর সমালোচনা করার।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসছে। তৃনমূল বাইরে থেকে সেই সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানাবেন। উত্তরে অধীর চৌধুরী বলেন, মমতা ব্যানার্জি সেদিনও বলেছেন, কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনে ৫০ টির বেশি আসন পাবে না। সেই মুখ্যমন্ত্রী এখন বলছেন ইন্ডিয়া জোট ৩১৫ আসন পেতে চলেছে। ওঁর মুখে ফুল চন্দন দিয়ে বলছি তাঁর এই বোধোদয় হওয়ার কারণ যে কংগ্রেসকে তিনি একদিন পাত্তা দিতে চাননি , তিনিও বুঝতে পারছেন কংগ্রেসের নেতৃত্বে নতুন দিন আসছে। তাই আগে ভাগে গান গেয়ে রাখছেন। প্রশ্ন ছিল , মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, বিজেপির বি টিম হিসেবে বাম কংগ্রেস কাজ করছে।অধীর চৌধুরী বললেন, কে কার বি টিম মানুষের বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না। কেন কিভাবে দিদি ও খোকাবাবুর সঙ্গে বিজেপির সেটিং হয় আজ জলের মত পরিষ্কার। সেদিনও তিনি বলেছেন, তিনি আর ইন্ডিয়া জোটে নেই। আজ তাঁর উপলব্ধি হচ্ছে।
দিগদর্শন প্রতিনিধি সম্পাদক সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, সি পি এম রেজিমেন্টেড পার্টি। আগের নির্বাচনে বাম কংগ্রেসের জোটের বিপুল পরাজয়ে বাম নেতৃত্ব অভিমান করে বলেছিলেন, তাঁদের দলের নির্দেশে বাম অনুগামীরা কংগ্রেসকে ভোটের বাক্সে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের অনুগামীরা বামেদের সমর্থন দেননি। এবার কি হতে চলেছে? অধীর চৌধুরী বলেন, বামেদের অভিযোগ সঠিক। আদর্শগত ভাবে বামেদের সঙ্গে আমাদের সঙ্গে বিস্তর ফারাক আছে।৩৪ বছর বাম আমলে আমাদের বহু কর্মী ও সমর্থকরা নির্যাতিত হয়েছিলেন। কিন্ত দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে। কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই। রাজ্যে নেই সি পি এম। ভুললে চলবে না , আমাদের সঙ্গে বামেদের দেশের ঐক্যের প্রশ্নে একটা মিল আছে। আমরা ধর্মীয় মেরুকরণে বিশ্বাসী নই। এখন তৃণমুল ও বিজেপি সেই হিন্দু মুসলিম তাস খেলছেন। তাই কংগ্রেস ও সি পি এম দুপক্ষই অত্যাচারিত। তাই এবারকার রসায়ন অন্যরকম। কংগ্রেস সমর্থকরা আগের মানসিক বাধা কাটিয়ে উঠেছেন।
আপনি এবার হেরে গেলে কি রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেবেন? অধীর বাবু হেসে বলেন, আগে হারি তারপর দেখব। আমি পাঁচবারের সাংসদ।বহরমপুরের মানুষ চতুর্মুখী নির্বাচনেও আমাকে লক্ষাধিক ভোটে নির্বাচিত করেছেন। এবার বহরমপুরে আমার বিরূদ্ধে তৃনমূল বা বিজেপিকে আলাদা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবিনি। আমার প্রতিপক্ষ ছিল ধর্মীয় মেরুকরণের প্রবক্তারা। এবারের বাংলা ও দেশের সার্বিক ফলাফলে যে চমক অপেক্ষা করছে শুধু মমতা নন, বিজেপিও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
সি এ এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে অধীর চৌধুরী বলেন, ভারতের সংবিধানের কোথাও ধর্ম দেখে নাগরিকত্বের কথা নেই, আমরা তাই এর বিরোধী। একদিকে ১৪ জনকে নাগরিকত্ব দিচ্ছে,অন্যদিকে১৭ জনকে শর্তের কাগজ নয় দেখাতে পারায় বিদেশি চিহ্নিত করে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী করে রাখা হয় তাঁদের দেশে ফেরৎপাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।