দিগদর্শন ওয়েব পেজ : প্রতিবারের মত এবারও দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় দিল্লির জে এন ইউতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সবকটি বিভাগে লাল আবির ছড়িয়ে পড়ল শনিবার। কিছু ভোট বাড়লেও সভাপতি সহ সভাপতির সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক সবপদেই জয়ী বাম ছাত্ররা। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন বিহারের কানহাইয়া কুমার। এবারও বিহারের গয়ার ভূমিপুত্র ধনঞ্জয় এক হাজারের বেশি ভোটে পরাস্ত করেছেন বিজেপি প্রভাবিত এ বি ভি পিকে। সংঘ প্রভাবিত এই দক্ষিণপন্থী ছাত্র সংগঠনের জয় নিয়ে তাঁদের সমাজমাধ্যমের পাতায় শনিবার সকাল থেকে গুজব ছড়ানো হতে থাকে। কারণ শনিবার সকাল থেকে ভোট গণনা শুরুর কিছুক্ষণ পর থেকে চারটি পদের তিনটিতে এগিয়ে যায় এবিভিপি প্রার্থীরা। ফলে বিজেপি ও আর এস এসের সবকটি প্রচারমাধ্যম নেমে মনে প্রচারে। কিন্তু বেলা বাড়তেই সে আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। ক্রমশ বাড়তে থাকে বামেদের ভোট।
করোনা পরবর্তী সময়ে অন্যান্য আরও কিছু কারণে চারবছর বন্ধ ছিল ছাত্র সংসদের নির্বাচন। এই বছর ভোটের কিছু আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। সংঘ পরিবার দিল্লির বুকে জে এন ইউতে বামের গর্জন পছন্দ করে না। কিন্তু অস্বীকারের উপায় নেই। মুখে এখানকার ছাত্রদের দেশ বিরোধী টুকরে গ্যাং বলে অভিহিত করে এসেছেন। কিন্তু চেষ্টাও চালিয়েছেন এখানে প্রভাব বাড়ানোর । সংবাদসূত্রের খবর, ভোটেরবহু দিন আগে থেকে সংঘের ভাবধারা, হিন্দুত্ব প্রচার চালানো হয়।
সুযোগ পেলেই কাশ্মীর ফাইলস, দি কেরালা স্টোরি ও সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সাভারকর জীবনী অবলম্বনেসিনেমা দেখিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলে। প্রচার চলে জহরলাল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নয়, জাহাঙ্গীর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নামে। পোস্টার ছড়ানো হয়। বিজেপি ঘনিষ্ঠদের এনে প্রচার চলে। বাম ছাত্রদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজেপি ঘনিষ্ঠ উপাচার্য তাঁর সহযোগীদের নিয়ে নির্বাচনে বাম ছাত্রদের রুখে দেওয়ার নানা ফন্দি করতে থাকেন । ভোট শুরুর কয়েক ঘন্টা আগে বাম জোটের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী স্বাতী সিংহের মনোনয়ন বাতিল করে তুচ্ছ কারণে। সময় কম থাকায় আদালতে যাওয়ারও সুযোগ ছিল না। বাধ্য হয়ে বাম সংগঠন বাপস প্রার্থীকে সমর্থন করেন।
৭৭৫১ জন ভোটারের ভোটে সেন্ট্রাল কমিটির চারপদ ছাড়াও কাউন্সিল পদের ভোট হয়। ভোট পড়ে ৭৩ শতাংশ। সভাপতি পদে এ বি ভি পি উমেশ আজমিরা ২১১৮ ভোটে পরাজিত হয়েছেন বাম প্রার্থী ধনঞ্জয়ের কাছে। সহ সভাপতি পদে বামজোটের অভিজিৎ ঘোষ পরাজিত করেন এবিভিপি প্রার্থী দীপিকা শর্মাকে। সাধারণ সম্পাদক পদে বাম সমর্থিত বাপসা প্রার্থী প্রিয়াংশি আর্য হারিয়েছেন এবিভিপি র অর্জুন আনন্দকে । যুগ্ম সম্পাদক পদে কিছুটা লড়াই দেন সংঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠনের প্রার্থী গোবিন্দ দাঙ্গি। মাত্র ৪৪৩ ভোটে পরাজিত হয়েছেন বাম প্রার্থী মোহাম্মদ সাজিদের কাছে। সহ সভাপতি পদে বিজয়অভিজিৎ ঘোষ উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির ছেলে। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন মহাবিদ্যালয়ে ছিলেন অর্থনীতির ছাত্র। উচ্চ শিক্ষার জন্য দিল্লি পাড়ি। তিনভাই ও মা বাবাকে নিয়ে অভিজিতের পরিবার। বাবা সি পি এমের পার্ট সদস্য। কিন্তু অভিজিৎ এখনও সদস্য পদ পাননি। বামেদের খরা মরশুমে বাম দলে কেন? অভিজিতের স্পষ্ট জবাব পার্টি করি আদর্শের জন্য। বাজার দর দেখে নয়।
সি পি এম দলের সঙ্গে জে এন ইউ র এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বহুদিনের। এখানকার ছাত্র প্রকাশ করাত, সীতারাম ইয়েচুরি। বর্তমান তরুণ নেতৃত্বের ঐশী ঘোষ সহ অনেকেই জে এন ইউর প্রাক্তনী। লোকসভা নির্বাচনের আগে জে এন ইউতে আবার লাল ঝান্ডার বিক্রম কিছুটা অস্বস্তি তে ফেলল বিজেপিকে সেটা তাঁরা অস্বীকার করতে পারবেন না।