শ্রীজিৎ চট্টরাজ: কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির টিকিট করা পেতে পারেন সেই তালিকায় নাম ছিল প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ জলু ওরফে সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের পুত্র সৌমেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায়, ঝুলন গোস্বামী ও সোমা বিশ্বাসী নাম। কিন্তু বাজি মারলেন কৃষ্ণনগরের রাজমাতা অমিতা রায়। কে অমিতা রায়? আসছি সেই প্রসঙ্গে। কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল রাজমাতা অমিতা রায় হচ্ছেন বিজেপি প্রার্থী। তাই এই প্রসঙ্গে তাঁকে জিগ্যেস করলে তিনি সরল স্বাভাবিক উত্তর দেন, আমি রাজনীতির কিছু বুঝি না। বাংলার ভালো চাই। টিকিট পেলে ভেবে বলব। অর্থাৎ কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে বিজেপি তেমন প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে রাজ পরিবারের রাণীকে নিয়েছেন। যিনি রাজনীতির রা জানেন না।
এবার তাকানো যাক কৃষ্ণনগরের ইতিহাসে। নদীয়ায় রাজা ও কৃষ্ণনগরের রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের বংশধর । কৃষ্ণচন্দ্রের জন্ম কৃষ্ণনগরেই। পিতা রঘুরাম রায়। ইতিহাস বলছে, কৃষ্ণচন্দ্রের শাসনকালেই বাংলায় ইংরেজের আগমন ও মুসলিম রাজত্বের অবসান।নিজের রাজত্বের নিরাপত্তার খাতিরেই সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে গিয়ে ইংরেজের মিত্র হন কৃষ্ণচন্দ্র । তিনি ক্লাইভের পক্ষ নিয়ে সিরাজকে হারান। ইংরেজের সঙ্গে সংঘর্ষে নবাব মীরকাশিম কৃষ্ণচন্দ্রকে বন্দী করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। কিন্তু ইংরেজের প্রভাবে তিনি মুক্তি পান।
ইংরেজের পক্ষ নেওয়ায় ইংরেজ তাঁকে পাঁচটি কামান উপহার দেন। কিন্তু বর্গী আক্রমণে তিনি রাজধানী শিবনিবাস নামে এক জায়গায় নিয়ে যান। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ছিল বুদ্ধিজীবীর সংসার। ছিলেন কবি ভারতচন্দ্র, সাধক কবি রামপ্রসাদ, পণ্ডিত বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার , কৃষ্ণনন্দ বাচস্পতি , জগন্নাথ তর্ক পঞ্চানন, হরিরাম তর্ক সিদ্ধান্ত প্রমুখ। কিন্তু সবাই জনেন গোপাল ভাঁড় কে। যিনি কৃষ্ণচন্দ্রের বিদূষক।
নদীয়া রাজ পরিবার ভট্টনারায়ণ ব্রাহ্মণ বংশজাত। উত্তরপ্রদেশের কনৌজ থেকে তিনি বাংলায় আসেন। তিনি ছিলেন ক্ষীতিশের পুত্র। ৩৫ প্রজন্ম বাংলায়। নদীয়া রাজবংশের আদিপুরুষ ভবানন্দ মজুমদার বাংলার স্বাধীন রাজা প্রতাপাদিত্যের যিনি বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে প্রতাপের রাজধানীর প্রবেশের গোপন পথ চিনিয়ে জাহাঙ্গীরের সেনাপতি মান সিংহকে সাহায্য করেন। জাহাঙ্গীর তাঁর এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য মহৎপুর, নদীয়া, মারূপদহ , লেপা, সুলতানপুর, কাশিমপুর, বয়শা, মশুন্ডা প্রভৃতি ২৪ টি পরগণা দান করেন।
১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন বাংলার নবাব ইসমাইল খাঁ তাঁকে কানুনগো পদে নিযুক্ত করেন।j জাহাঙ্গীরকে অনুরোধ করে মজুমদার উপাধি এনে দেন।১৬৩১ সালে জমিদারি পান। কৃষ্ণনগরের নাম ছিল রেউই। সেই বংশের রাজা রুদ্র রায় শ্রীকৃষ্ণের অনুরাগী হিসেবে রেউই এর নাম দেন কৃষ্ণনগর । তাঁর তিন পুরুষ পর কৃষ্ণচন্দ্র রাজত্ব করেন। তাঁর জীবনকাল ছিল ১৭২৮ থেকে ১৭৮৮।
বংশানুক্রমে এখন রাজার বর্তমান বংশধর সৌমিশ চন্দ্র রায় ৩৯ তম পুরুষ । তাঁর স্ত্রী অমিতা রায় এবারের বিজেপি প্রার্থী। ১৯৬১ সালে জন্ম কলকাতায়। বিয়ে ১৯৮১ সালে। স্কুল লা মার্টিনিয়ার। একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর পড়াশোনা রাণী বিড়লা কলেজে। স্নাতক লোরেটো হাউসে। দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়েছেন। এহেন রাণীমাভোটে দাঁড় করানোতে বিজেপি কতটা বিচক্ষণতার পরিচয় দিল বোঝা যাবে ফল বেরোলে। মনে রাখতে হবে পুজোর দিনছাড়া কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীতে জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ।